ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে পারের রেকর্ড

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের ১০০ জন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2021, 10:41 AM
Updated : 12 Nov 2021, 10:42 AM

সব মিলিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচনে তিন ধাপ মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে ২৫০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন, যার মধ্য দিয়ে এবারের নির্বাচন পাঁচ বছর আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগসহ অন্তত দেড় ডজন দলের প্রার্থী অংশ নিলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

তৃতীয় ধাপের ১০০৪ ইউপিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার। ২৮ নভেম্বর এসব ইউপিতে ভোট হবে।

নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান শুক্রবার জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী।

এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৪০৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ হাজার ৬৩২ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১ হাজার  ১০৫ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ১০০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং নারী সদস্য পদে ১৩২ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

আর প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৬৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৬৩ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬ জন একক প্রার্থী ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে যান।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি ভোট হয়। সেবার ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১২ জন চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এতদিন সেটাই ছিল সর্বোচ্চ।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মতে, নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে এত বেশি প্রার্থীর অভিষিক্ত হওয়া এই নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে।

“নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই, সেহেতু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে ‘নির্বাচিত’ হওয়া বলা যায় কি?”

অভিযোগ রয়েছে, ভোট ছাড়াই নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের অনেকে নানা ‘কৌশল’ খাটাচ্ছেন, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব, পেশীশক্তি, কিংবা অর্থের প্রভাবও থাকছে। 

এই সমালোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সম্প্রতি দলের মনোনীত প্রার্থীদের হুঁশিয়ার করেন।

তিনি বলেন, “অপকর্ম করলে কেউ রেহাই পাবে না- শাস্তি তাদের পেতেই হবে। ছলে-বলে কৌশলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে শৃঙ্খলাবিরোধী অপকর্ম বলে গণ্য করা হবে।”

১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ও ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন হয়। এবার হচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন।

সবশেষ ২০১৬ সালে গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে প্রথমবার দলীয় প্রতীকের ইউপি ভোটের ছয় ধাপে অন্তত ৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এবারও নির্বাচন পূর্ব ও ভোটের দিন মিলিয়ে সংঘাতে অন্তত ২৭ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ধাপে ধাপে ভোটের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন উপযোগী সব ইউপির ভোট শেষ করার পরিকল্পনা করেছে ইসি।

প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউপির ভোট হয়েছে ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে ১০০৪ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৮৪০ ইউপিতে ২৩  ডিসেম্বর।