‘সংঘাত এড়াতে’ ইউপির প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখতে সাংসদ একরামুলের চিঠি

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এড়াতে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য তার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের পরিবর্তে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2021, 06:06 AM
Updated : 12 Nov 2021, 06:06 AM

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মো. একরামুল করিম চৌধুরী এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনাকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার হাতে ওই চিঠি পৌঁছানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।

জাতীয় সংসদের প্যাডে লেখা ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ‘কোন্দল সৃষ্টি এবং চক্রান্ত করে’ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘাত সৃষ্টি করছে।

এই পরিস্থিতিতে নিজ দলের নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত সংঘাত থেকে মুক্তির জন্য নিজের সংসদীয় এলাকার ইউনিয়ন ও পৌর নির্বাচনে দলের মনোনীত চেয়ারম্যান ও মেয়র প্রার্থীর পরিবর্তে উন্মুক্ত (স্বতন্ত্র) প্রার্থীতার পক্ষে যুক্তি দেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।

“দুঃখজনক হলেও সত্যি ওইসব রাজনৈতিক দলসমূহের চক্রান্তে ইতোমধ্যে আমাদের দলের বেশ কয়েকজন কর্মী মৃত্যুবরণসহ অনেকে আহত হয়েছেন। এসব গোলোযোগে বিএনপিসহ নির্বাচন বর্জনরত অন্য কোনো দলের কেউ হতাহত হয়নি। আহত ও নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।”

দলীয় সভাপতির উদ্দেশে একরামুল করিম চৌধুরী লিখেছেন, “দেশের চলমান নির্বাচনী পরিস্থিতিতে শান্তি শৃঙ্খলা অব্যাহত রাখাসহ আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত সংঘাত থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায় নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) সংসদীয় আসন এলাকায় নির্বাচনসমূহ দলের মনোনীত চেয়ারম্যান ও মেয়র প্রার্থীর পরিবর্তে উন্মুক্তভাবে (স্বতন্ত্র) নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনার সমীপে আবেদন জানাচ্ছি।”

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এখন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। গত তিন মেয়াদ ধরে তিনি সংসদে নোয়াখালী-৪ আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এমন প্রস্তাবের কোরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটছে। আমি আমার সংসদীয় এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইউনিয়ন ও পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমার নেত্রীর কাছে আবেদন করেছি।”

সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে স্থানীয় সরকারের নির্বচনগুলোতে অধিকাংশ এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা থাকছে একের বেশি। দলের মনোনয়ন না পেলে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছে। তাতে ভোট ঘিরে বাড়ছে অন্তর্কোন্দল ও সংঘাত। 

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আবদুল কুদ্দুসও এর আগে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন দলীয় সভাপতির কাছে। এ ধারণার সমর্থন এসেছিল আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে। অনেকে আবার ভিন্নমতও জানিয়েছেন।    

স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা মেয়র পদের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলেও কাউন্সিলর বা সদস্য পদের ভোটে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন থাকে না। তবে সেসব পদের প্রার্থীদের দ্বন্দ্বও অনেক সময় সংঘাতে গড়ায়।       

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আর প্রাণহানি বাড়তে থাকায় নির্বাচনও কমিশনও অস্বস্ত্বিতে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেও উদ্যোগ হওয়ার তাগিদ দিয়ে আসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।