খালেদার ফেরার অপেক্ষায় ‘ফিরোজা’

ঢাকার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে ২৫ মাস আগে দুর্নীতি মামলার রায় শুনতে আদালতে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া; সেখান থেকে কারাগারে। সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর কর্মীরা গোছগাছ সেরে আবারও বিএনপিনেত্রীর জন্য প্রস্তুত করে তুলেছেন সেই বাড়ি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 05:20 AM
Updated : 25 March 2020, 07:22 AM

গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে এই ভাড়া বাসায় খালেদা জিয়া বসবাস করছিলেন ২০১০ সাল থেকে। দুর্নীতি মামলার সাজায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগারে যাওয়ার পর ১০ কাঠা জমির ওপর ওই দোতলা বাড়ি জনশূন্য হয়ে পড়ে।

‘ফিরোজা’র একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যাডামকে বরণ করতে আমরা প্রস্তুত। বাসার প্রতিটি কক্ষ ধোয়া-মোছা করা হয়েছে। দোতলায় তার বেড রুম, রিডিং রুম ও ছোট ড্রইং রুম এবং নিচের বড় ড্রইং রুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।”

বাসার দোতলার প্রবেশপথে ফুলে টব রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুযারি সকালে খালেদা জিয়া এই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যেভাবে সিঁড়ির সামনে টব রাখা ছিল, ঠিক সেভাবে তা রাখা হয়েছে বলে জানান একজন নিরাপত্তাকর্মী।

বাসা নতুন করে গোছগাছ করার বিষয়টি তদারক করছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। এতদিন তারাই এ বাড়ির দেখাশোনা করেছেন।

খালেদা জিয়ার সেজ বোন সেলিমা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুক্তির পর উনি ফিরোজাতেই উঠবেন। সেভাবে সব কিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এখন তার মুক্তির অপেক্ষায় আছি।”

আদালতের রায়ের পর খালেদা জিয়াকে প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকে ৬২১ নম্বর কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও সেখানে তার সঙ্গে আছেন।

খালেদার জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেছেন, কিন্তু জামিন হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে খালেদার জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে।

তার তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দলের চেয়ারপারসনের থাকার জন্য গুলশানের বাসভবনকে ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছি। দীর্ঘ দুই বছর এই বাসা একেবারে বন্ধ ছিল।

“তবে ম্যাডাম বাসায় উঠবেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন সেটা নির্ভর করছে উনার সিদ্ধান্তের ওপর। মুক্তির পর উনার সাথে আলাপ করেই এটা ঠিক করা হবে।”

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে। তবে তার মূল সমস্যা গেঁটে বাত (অস্টিও-আর্থরাইটিস)। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তাকে বিশেষ থেরাপি দেওয়ার কথা বলা হলেও তাতে তিনি সম্মতি দেননি।   

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বিএমএর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সব কিছু করা হয়েছে ফিরোজায়। উনি বাসায় আসার পর তার চিকিৎসা কার্য্ক্রম শুরু হবে। উনাকে যারা দেখতেন, সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আমরা ইনভাইট করেছি। তারা আসার পর একটি সম্মিলিত মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

গত দুই বছরে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সন্তানরা দুই দফা দেশে এসে ফিরোজায় উঠেছিলেন। বাকি সময় বাড়িটি খালিই ছিল। 

জাহিদ হোসেন জানান, ওই বাড়ির গ্যাস ও টেলিফোন লাইন এখনও কাটা। রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে পানির লাইন  ঠিক হয়েছে, ছাদে পানির ট্যাংকও পরিষ্কার করা হয়েছে।  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম বুধবার সকালে ফিরোজায় গিয়ে প্রস্ততি ঘুরে দেখেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির নথি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে অনুমোদিত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আদেশ যাবে। সেই আদেশ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গেলে মুক্তি মিলবে বিএনপি চেয়ারপারসনের।