দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত, শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে তাকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2020, 10:16 AM
Updated : 25 March 2020, 04:50 AM

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

শর্ত হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

২৫ মাস সাজা ভোগের পর এমন এক সময়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল, যখন নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীতে পুরো বিশ্বজুড়ে চলেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা; নানা বিধিনিষেধে বাংলাদেশও রয়েছে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায়।   

কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন’ বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আগের দিনও তার মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির খবরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এইমাত্র জানতে পেরেছি। মিডিয়ার মাধ্যমেই হেনেছি। এখন আমি উত্তরার বাসা থেকে গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিসে যাচ্ছি। এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া আমরা জানাব।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বছরখানেক ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন

দেশের সর্বোচ্চ এই চিকিৎসাকেন্দ্রেও বিএনপি নেত্রীর সুচিকিৎসা হচ্ছে না দাবি করে গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেছেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু সেসব আবেদন কখনোই আদালতের সায় পায়নি। 

সে কারণে বিএনপি নেতারা বলে আসছিলেন, কেবল সরকার চাইলেই এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছিলেন, জামিনের এখতিয়ার আদালতের হাতে; এক্ষেত্রে সরকারের করার কিছু নেই। তবে পরিবার প্যারোলে মুক্তি চাইলে সেটা সরকার বিবেচনা করতে পারে।  

এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে খালেদার জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে। যদিও বিএনপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছিলেন না।

তার তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর উপধারা ১ ধারা অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন তাকে মুক্তি দেবে, তখন থেকেই তা কার্যকর হবে।

বাসায় রেখে চিকিৎসার শর্তের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, “এখানে কিন্তু বলা হচ্ছে না যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে কন্ডিশনের ব্যাপারে দেখা যাবে। সেজন্য কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে, বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

“হাসপাতালে যদি ভর্তি হতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে মানসম্পন্ন হাসপাতাল- সেখানে তো তিনি আছেনই। হাসপাতালে তাকে ভর্তি হতে হবে কি না সেটা অবস্থার প্রেক্ষিতে বোঝা যাবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। উক্ত সময়ে দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না। আজকের প্রেক্ষিতে কাউকে বিদেশে পাঠানো মানে তাকে সুইসাইড করতে বলা।”

খালেদা জিয়া কখন মুক্তি পাচ্ছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা তারা পেয়েছেন।

“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন আইন দেখে একটি সামারি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সে সামারি অনুমোদন হয়ে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে আসবে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে নির্দেশনা অনুযায়ী কারাগারে কাগজপত্র পাঠালে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।