খালেদা জামিন না পাওয়ায় বিক্ষোভ করবে বিএনপি

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তাতে ‘সরকারের হিংসাশ্রয়ী নীতির বহিঃপ্রকাশ’ দেখতে পাচ্ছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 01:14 PM
Updated : 27 Feb 2020, 06:15 PM

এর প্রতিবাদে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

হাই কোর্টের আদেশের পর বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

খালেদা জিয়ার  ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দাবি করে তিনি বলেন, “এই যে দেশনেত্রীর জামিনের আবেদন খারিজের যে আদেশ দেওয়া হল, এর প্রতিবাদে আগামী শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।”

আর কেন্দ্রীয়ভাবে সেদিন বেলা ২টায় ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

দুর্নীতির দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগেও তিন দফা জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন খালেদা জিয়া। অন্যান্য মামলায় তিনি জামিনে থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আশায় ছিলেন, এবার জামিন হলে হয়ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির পথ খুলবে।

কিন্তু বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কেএম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবারও খালেদার জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। আদেশে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের পক্ষে ‘নতুন কোনো কারণ’ ওই আবেদনে পাওয়া যায়নি।

বিকালে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “সরকারের নির্দেশে দেশনেত্রীর জামিনের আবেদন খারিজের আদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।”

তার ভাষায়, “উচ্চ আদালতের এই খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের হিংস্রাশ্রয়ী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সরকার মুক্তিপণ আদায়ের মতই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়, অন্যায্য ও সকল আইনি অধিকার লঙ্ঘন করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।”

কী সেই মুক্তিপণ? রিজভী বলছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সরকার ‘অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার মুক্তিপণ’ আদায় করছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগ জনগণ ‘বিশ্বাস করে না’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “জনগণ বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করতে দেশনেত্রীকে কারাগারে অন্তরীণ করেছে।”

আর সেজন্য সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে দাবি করে তিনি বলেন, “আদালতে কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের টার্গেট বাস্তবায়ন করছে। আদালতকে ব্যবহার করে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর জামিন ও চিকিৎসা নিয়ে অপরিণামদর্শীতার মাশুল একদিন দিতে হবে।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, হারুনুর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়া ‘সাহসী ব্যক্তি’

খালেদা জিয়াই দেশের সবচেয়ে ‘সাহসী ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, “মহিলাদের সাহসই আমাদের সাহস। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। আমাদেরকেও একটু সাহস প্রদর্শন করতে হবে।”

আগামীতে আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দিয়ে হাফিজ বলেন, “যাদের প্রচুর টাকা পয়সা, ধন-দৌলতের অভাব নেই, তারা কীভাবে আন্দোলন করবে? আন্দোলন করার জন্য শক্ত ও সৎ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। আজকে যদি নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ হয়, আমরা ব্যর্থ হই, আপনারা নামেন রাস্তায়।

“আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তিরা আমরা আছি আপনাদের সাথে। বিএনপি যদি আন্দোলন না করে, অন্য কোনো দলও যদি আন্দোলন করে আমরা এখানে যারা আছি শেখ হাসিনাকে সরাবার জন্য রাজপথে নেমে আসব।”

খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানির আদালতে চলার মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তব্য দেন হাফিজ।

সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “যদি মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া, লড়াই ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করা যাবে না, তাহলে সেই লড়াই সংগঠিত করবার জন্য নিজেদের মেধাকে ও চিন্তাকে কাজে লাগাতে হবে।”

জাতীয়তাবাদী সংগ্রামী দলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সভায় সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আনম এহছানুল হক মিলন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা নবীউল্লাহ নবীও সভায় বক্তব্য রাখেন।