জামিন মেলেনি খালেদার

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জামিনের পক্ষে ‘নতুন কোনো কারণ না পাওয়ায়’ তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 09:49 AM
Updated : 27 Feb 2020, 05:00 PM

তবে খালেদা জিয়া যদি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ নিতে সম্মতি দিলে, দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

হাই কোর্ট বলেছে, উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বোর্ড চাইলে নতুন কোনো বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কেএম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন খারিজ করে এই আদেশ দেয়।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আদেশে বলেন, “অবশ্যই তাকে (খালেদা জিয়া) মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন বন্দি। তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে একজন বন্দি সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না।

 “কারাবিধি ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। এবং দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

দুর্নীতির দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগেও তিন দফা জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন খালেদা জিয়া। অন্যান্য মামলায় তিনি জামিনে থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আশায় ছিলেন, এবার জামিন হলে হয়ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির পথ খুলবে। কিন্তু আপাতত তা আর হচ্ছে না।

এ মামলায় খালেদার জামিন আবেদন নাকচ করে গত ১২ ডিসেম্বর এক আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিল, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুই মাসের মাথায় নতুন করে জামিন আবেদন করার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি নির্দেশনা চান হাই কোর্টের কাছে।

এই প্রেক্ষাপটে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্যকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি না, দিয়ে থাকলে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না, শুরু হয়ে থাকলে সর্বশেষ কী অবস্থা- তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের জেনারেলের মাধ্যমে আদালতকে জানাতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পাঠানো প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তা পড়ে শোনান।

সেখানে বলা হয়, খালেদা জিয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও প্রতিস্থাপনজনিত হাঁটুর ব্যথায় (অস্টিও-আর্থরাইটিস) ভুগছেন। অন্য সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকালেও অস্টিও-আর্থরাইটিসের ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ শুরুর বিষয়ে তিনি সম্মতি দেননি। এমনকি সেই চিকিৎসকার জন্য যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, সেগুলোও করা যাচ্ছে না।

এরপর বেলা ২টায় জামিন আবেদন খারিজের আদেশ দিয়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, যে প্রতিবেদনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিস্তারিতভাবে রোগের বিবরণ দেওয়া আছে এবং চিকিৎসার একটি পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।

“কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য সম্মতি দেননি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত সম্মতি দেননি, তাই উন্নত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “আমরা নতুন এই আবেদনে জামিনের নতুন কোনো কারণ দেখছি না। তাই এই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হলো।”

আরও খবর