আরেক তামাশা হল: ফখরুল

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ‘নির্বাচনের নামে তামাশা’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2020, 02:01 PM
Updated : 1 Feb 2020, 02:02 PM

শনিবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আজকে নির্বাচনের নামে আরেক তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে যা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমরা মনে করি যে, এটা (নির্বাচন) এতটুকু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।”

বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একই কথা বলেন।

সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে  সাথে সাক্ষাৎ শেষে  আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নামে জাতির সাথে প্রতারণা ও তামাশা করেছে। ইভিএম মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। সারাদিন আওয়ামী লীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোটার এবং সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে।” 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্রে এদিন ভোট হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে, যা নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল।

উত্তরে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, আর দক্ষিণে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।

এর বিপরীতে উত্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আগের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ ফজলে নূর তাপস।

বিএনপির অভিযোগ, দুই সিটির বেশিরভাগ কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি অথবা বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এ অভিযোগকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। 

বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা অফিসে থেকে এই নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করেছি। আজকে সকালে শুরু হয়েছে একটা বড় রকমের বিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। সেটি হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা সরাসরিভাবে নির্বাচনের হস্তক্ষেপের শামিল।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান, যা নির্বাচনী বিধির মধ্যে পড়ে না এবং যা আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তার এই আহ্বানে দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল এবং বিএনপি দলীয় এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।”

এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে; সমস্যা হয়েছে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ক্ষেত্রেও।

কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধি মেনে মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশকে ভোটার হিসেবে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন। একই বিড়ম্বনায় পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা  কামাল হোসেনকে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহায়তায় ভোট দিতে হয়েছে।

কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধি মেনে মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশকে ভোটার হিসেবে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারেন।

কিন্তু আঙুলের ছাপ না মেলা ভোটারের সংখ্যা ১ শতাংশের বেশি হওয়ায় নতুন করে আরো কয়েক শতাংশ বাড়ানোর জন্য বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করা হয় এবং তা বাড়ানো হয় বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারেকুজ্জামান জানান।

এ নিয়ে আপত্তি তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এর ফলে ভোটার উপস্থিতি না হলেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক ওই কেন্দ্রে মোট ভোটের যত সংখ্যক প্রয়োজন তত সংখ্যক ভোটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির পথ ক্ষমতাসীন দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমরা যেটা আশঙ্কা করেছি সেটাই হয়েছে।”

ফখরুল বলেন, “বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, যারা এই বাধা অতিক্রম করে ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে তাদের সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, মারধর করে বের করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে, এজেন্টদের তিনি প্রতিরোধে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এই কথা বলে তিনি সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের উসকে দিয়ে সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন। একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব নিজেই বলেছেন, এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি সেন্টারে।”

প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে কয়েকশ করে ‘বহিরাগতকে’ জড়ো করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, সমগ্র ঢাকা শহরে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভোট কেন্দ্রে যাননি।”

অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের ‘প্রতীক ছিল’ না এবং সে কারণে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

“অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সনাক্তকরণের পর ভোট না দিতে দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে এবং অনেক কেন্দ্রে ভোটারের সাথে ভোট কক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।”

বিএনপির প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা ‘শত শত অভিযোগ’ রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে দিলেও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পরে এসব অভিযোগ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করতে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যারা ভোটার না তাদের বের করে দেওয়ার এবং বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।

“যে সমস্ত কেন্দ্রে মেশিন কাজ করেনি সেখানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। যেখানে মেশিন সচল ছিল সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।”

তবে নির্বাচনে ফলাফল বিএনপি মেনে নিবেন কি না- সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আমির খসরু।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যা বলছে তা দেশবাসী বিশ্বাস করছে না। নির্বাচন বিএনপি মেনে নেবে কি না তা প্রশ্ন নয়, গণতন্ত্রকামী মানুষ এই নির্বাচন মেনে নেবে কি না এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে কি না এটা বড় প্রশ্ন।”