‘জাপায় কেন দুই নেতা’, জিএম কাদেরের অফিসে বিক্ষোভ

জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির রফায় এলেও তাতে আপত্তি তুলে বনানীর কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদেরেরে সমর্থকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2019, 09:31 AM
Updated : 8 Sept 2019, 10:20 AM

তাদের ভাষায়, বারিধারার কসমোপলিটন ক্লাবে শনিবার রাতের সমঝোতা বৈঠকে যা হয়েছে তা ‘নাটক’। দলে আর সংসদে তারা আলাদা নেতা চান না।

এইচএম এরশাদের উত্তরসূরি হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব কে দেবেন, কে হবেন সংসদে বিরাধী দলীয় নেতা- এই প্রশ্নে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদেরের দ্বন্দ্বে গত কয়েক দিনে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।

শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে দুই পক্ষের নেতারা বসে সমঝোতায় পৌঁছান। পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ রোববার বনানীতে পার্টি অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে সেই সিদ্ধান্ত জানান।

তিনি বলেন, এরশাদের ‘নির্দেশনা’ অনুযায়ী জিএম কাদেরই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। আর সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্বে থাকবেন রওশন এরশাদ। 

এই সমঝোতায় স্বস্ত্বি প্রকাশ করে রাঙ্গাঁ বলেন, “পরিবারের পিতামাতা যখন বিবাদে জড়ান, তখন সন্তানরা বিপদে পড়েন। দলে বড় ভাই হিসেবে আমি কিছুটা সরে পড়েছিলাম। তবে গত তিন দিনে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করে গতকালের বৈঠক আয়োজন করেছি। একটা বড় ধরনের ভাঙন থেকে জাতীয় পার্টি রক্ষা পেয়েছে।”

রোববার সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে বেলা ১টায় সংসদ ভবনে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশনের।

ওই বৈঠকের পর বিরোধী দলীয় নেতা নির্ধারণের বিষয়ে স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জিএম কাদেরের সমর্থক এমপিরা সংসদ ভবনে না যাওয়ায় সেই বৈঠক সময়মত শুরু করা যায়নি বলে রওশনপন্থি নেতা এস এম ফয়সাল চিশতী জানান।

রওশনপন্থিরা যখন সংসদ ভবনে, জিএম কাদের তখন তার অনুসারী ১৪ জন এমপিকে নিয়ে বনানীতে পার্টি চেয়ারম্যানের অফিসে বৈঠক করছিলেন।

জি এম কাদের ছাড়াও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ, আদেলুর রহমান আদেল, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও নাজমা আক্তার ছিলেন সেখানে।

ওই বৈঠক চলার মধ্যেই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সিঁড়িতে এবং জি এম কাদেরের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন একদল কর্মী।

রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সমঝোতা বৈঠকে তাকে ‘অগণতান্ত্রিক ও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত' বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন তারা।

তারা স্লোগান দিতে থাকে- ‘অগণতান্ত্রিক সমঝোতা মানি না, মানব না’; ‘আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’; ‘লড়াই না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম’; ‘জি এম কাদেরের সৈনিকেরা ভয় নাই, ভয় নাই’।

ওই বিক্ষোভে থাকা তেজগাঁও থানা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি আলী হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের চেয়ারম্যান ছিলেন, রওশন এরশাদ সংসদে দলের নেতা ছিলেন। কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু স্যারের মৃত্যুর পরে দলে নতুন চেয়ারম্যান, সংসদে নেতা নির্ধারণ নিয়ে এত নাটক কেন?

“নেতা ঠিক করতে না পারলে আমাদের ভগ্নপ্রায় তৃণমূল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব নাটকের কারণে জনগণও আমাদের দেখে হাসে। এবার রওশন এরশাদকে নিয়ে যে নাটক হল, আমরা এটা চাই না। যিনি চেয়ারম্যান, তিনিই সংসদে নেতা হবে, এটাই কথা। আলাদা আলাদা নেতা চাই না।”

আধা ঘণ্টার বেশি সময় এই বিক্ষোভ করার পর কাদেরপন্থি কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যান। কাদের তখনও এমপিদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন।  

পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য আদেলুর রহমান আদেল, রানা মো. সোহেল রানা ও নাজমা আক্তার বলেন, সংসদ ভবনে পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে তারা যাচ্ছেন না। তারা সরাসরি অধিবেশনে যাবেন।