দল ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যেভাবে নির্লোভ ও সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, তা সচরাচর দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
Published : 03 Jan 2019, 10:55 PM
আর দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মতে, সৈয়দ আশরাফের মতো ত্যাগী, বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও সজ্জন রাজনীতিকের শূন্যতা ‘কখনোই পূরণ হওয়ার নয়’।
সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়ার চোখে সৈয়দ আশরাফই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে ‘বুদ্ধিদ্বীপ্ত’ ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের হাল ধরেন। ওই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি।
সৈয়দ আশরাফ যখন দলের সাধারণ সম্পাদক হন তখন ওই কমিটিতেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান মাহাবুব-উল-আলম হানিফ। দীর্ঘদিন সৈয়দ আশরাফকে কাছ থেকে দেখারও সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
প্রিয় নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত সৈয়দ আশরাফ ছিলেন নির্লোভ ও নিরঅহংকারী। নেত্রী ও দলের প্রতিও তিনি ছিলেন অবিচল।”
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সৈয়দ আশরাফের ভূমিকা স্মরণ করে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করে তার মুক্তির পথ ত্বরান্বিত করেছিলেন সৈয়দ আশরাফ।”
মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সৈয়দ আশরাফের অবদান স্মরণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, “তার মতো সজ্জন, ত্যাগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদের শূন্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়।”
তিনি বলেন, “উনার ব্যক্তি জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেন আশরাফ ভাইয়ের ভূমিকা ছিল অনন্য।
“বাংলাদেশের মানুষ এমন একজন রাজনীতিককে অনেক দিন মনে রাখবে।”
সৈয়দ আশরাফকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে রাজনীতিকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হয় সৈয়দ আশরাফ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নেতাকর্মীদের প্রতি অন্তঃপ্রাণ ছিলেন তিনি। তার মধ্যে কোনো হিংসা বিদ্বেষ দেখিনি। ছোট-বড় সবাইকে সম্মানের চোখে দেখতেন।”
দিলীপ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সৈয়দ আশরাফ ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল উন্নত চিন্তার রাজনীতিক। তিনি ছিলেন সততা ও নিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক।
“তার রাজনীতির একটা কমিটমেন্ট ছিল, যে কারণে তিনি সত্য বলতে কখনও দ্বিধা করতেন না। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনের ইন্টেলেকচুয়াল জায়ান্ট। মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ছিল অনবদ্য ভূমিকা।”
ভবিষ্যতে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রচেষ্টা, তাকে গতিশীল করতে সৈয়দ আশরাফের মতো নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।