এতিমখানা দুর্নীতি: খালেদার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চায় দুদক

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2018, 01:28 PM
Updated : 23 Oct 2018, 01:28 PM

আর রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মঙ্গলবার এ মামলার আপিলের ওপর নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে এই আর্জি জানান।

তবে যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অর্থের উৎসের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চেয়ে সোমবার একটি আবেদন করেন এ জে মোহাম্মদ আলী।

সে আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাই কোর্ট তা নথিভুক্ত করার আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, মূল আপিলের যুক্তিতর্ক শেষে এই আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই এ জে মোহাম্মদ আলী ওই আবেদনের ওপর আদেশ চাইলে আদালত যুক্তিতর্ক শেষে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানায়। 

এ জে মোহাম্মদ আলী তখন বলেন, তাহলে এই আদেশটিই (নথিভুক্ত করে রাখার আদেশ) দেন, আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব।

বিচারক তখন বলেন, “সে আপনারা যেতে পারেন।”

এ জে মোহাম্মদ আলী এরপর বলেন, “তাহলে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হোক।”

আদালত তা প্রত্যাখ্যান করলে এ জে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জনিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে যান।

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. আখতারুজ্জামানও এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বেরিয়ে যান।

পরে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

এ মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা কুয়েতের আমির দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা করার জন্য।

অন্যদিকে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই অর্থ এসেছিল সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে।

মঙ্গলবার শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তিতর্কে দুদকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছি। আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ৫ বছর সাজা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে আমরা মনে করি।”

এ মামলায় খালেদা জিয়ার করা আপিলসহ চারটি আবেদনের ওপর ২৮ দিন শুনানি হয়েছে বলে জানান তিনি।   

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছে তা সঠিকভাবেই দিয়েছে। ওই সাজা যাতে বহাল থাকে আমি সেই মর্মে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি।”

তিনি বলেন, “যেহেতু এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছে দুদক, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করিনি। সেজন্য সাজা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার ছিল না।”

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) হাতে পান খালেদার আইনজীবীরা। এরপর হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা আপিল করেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তার অর্থদণ্ড স্থগিত করে হাই কোর্ট।

এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বাড়াতে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র ও খালেদা জিয়ার কাছে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তবে আদালত বলে দেয়, রুলের ওপর শুনানি হবে খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে।

আদালত আদেশে বলে, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল দুর্নীতি দমন কমিশন করতে পারে কি না- সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

গত ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদালত। ১২ জুলাই থেকে আপিল ও রুল শুনানি শুরু হয়।

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।