অর্থ হাতিয়ে নিতেই চড়া দামে ইভিএম: রিজভী   

চড়া দামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের ‘থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2018, 02:14 PM
Updated : 15 Oct 2018, 02:14 PM

ভারতের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে ইভিএম কেনা হচ্ছে- সোমবার গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ইভিএমের বিরোধিতা করলেও সরকারের প্রবল প্ররোচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইভিএম পদ্ধতি কেন চালু করতে চাচ্ছেন সেই থলের বিড়ালটি এখন বেরিয়ে পড়ছে।

“আজ পত্রিকায় এই বিষয়ে খবর বেরিয়েছে। ভারতের চেয়েও এগারো গুণ বেশি দামে ইভিএম কেনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভোটের আগে বেশ বড় পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।”

রিজভী বলেন, “নির্বাচনের প্রাক্কালে এই টাকা কমিশনের কিছু ব্যক্তিকে উপহার দিলেন কিনা এটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। কারণ অনেক কর্মকর্তা কমিশনের নিরপেক্ষ ও স্বাধীনতা ভেঙে সরকারের দুষ্কর্মের সঙ্গী হতে অবিরামভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।”

চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনা করলেও প্রতিটি ইভিএমের দাম তিন হাজার ডলার পড়ত। তার চেয়ে কম দামে প্রায় ২৪০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

সে হিসাবে গড়ে প্রতিটি ইভিএমের দাম এক লাখ ৯২ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকার মতো পড়ছে বলে জানান এই অধ্যাপক। এই খরচ ২০১০ সালে দেশে প্রথম ব্যবহৃত যন্ত্রের দামের প্রায় চার গুণ।

তিন ধাপে মোট ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্পটি সেপ্টেম্বরে একনেকে অনুমোদন পায়।  

অন্যদিকে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ইভিএম সম্পর্কে দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ২০০৬-২০১০ সালে তৈরি করা এম২ ইভিএমে যন্ত্রপ্রতি খরচ ৮৬৭০ রুপি। ২০১৩ সালের পরে নির্মিত এম৩ ইভিএমের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭০০০ রুপি।

বাক স্বাধীনতা ‘কেড়ে নেওয়ার’ অভিযোগ তুলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সোমবার কমিশনের ৩৬তম সভা শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সভা বর্জনকেও যথার্থ বলেছেন রিজভী।

“সভা বর্জন উনি করেছেন এটা যথার্থ কাজ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে যে আচরণ করেছেন, উনি কারো কথা শোনেন না। উনি শোনেন একজনের কথা; যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বার্তা আসে সেটাই উনি শোনেন।

“আজকে এতোগুলো রাজনৈতিক দল, মহাজোটের সরকারের অঙ্গীভূত কয়েকটা দলও ইভিএমের বিরোধিতা করেছে, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল করেছে, নাগরিক সমাজ করেছেন, সাংবাদিকদের যে প্রতিনিধিদল গেছেন তারাও করেছেন…।”

গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিভ্রান্ত মনের উন্মাদনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পড়ন্ত বেলায় তার খাপছাড়া বক্তৃতায় দৈন্যদশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনার একগুঁয়েমির জন্য রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবে কিনা এটি নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফেনী, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম খান, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।