খালেদার মেডিকেল বোর্ডে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চান জাফরুল্লাহ

দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠনকে সাধুবাদ জানালেও তা অসম্পূর্ণ বলে সমালোচনা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2018, 07:47 PM
Updated : 8 April 2018, 08:57 AM

তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে একজন করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফিজিওথেরাপিস্ট থাকা উচিত ছিল।

শনিবার রাতে বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের টকশো ‘একাত্তর সংযোগে’ আলাপচারিতায় এই মত দেন বিএনপিপন্থি পেশাজীবী এই চিকিৎসক।

খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে তার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠনের প্রতি ইঙ্গিত করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “সরকার একটা কমিটি করলো, ভালো…। যদিও কমিটিটা আমার কাছে মনে হয়েছে অসম্পূর্ণ। কারণ সেখানে সাইকিয়াট্রিস্ট (মনোরোগবিদ) বা মনোবিজ্ঞানের কোনো লোককে রাখা হয় নাই। স্নায়ুজনিত রোগ কিন্তু মনোবিজ্ঞানের রোগ না। সেটা রাখা হয় নাই।

দুই মাস পর কারাগার থেকে বেরিয়ে শনিবার বিএসএমএমইউতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ফিরে যাওয়ার সময় হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“কমিটিতে ফিজিওথেরাপিস্ট রাখা উচিত ছিল। সেটা ছিলো না, ছিল ফিজিক্যাল মেডিসিনের লোক। এজন্য আমরা মনে হয় এটা অসম্পূর্ণ কমিটি।”

এসময় টকশোর আরেক আলোচক আওয়ামী লীগ নেতা নূউ-উল-আলম লেনিন তার বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, “এটা ঠিকই একজন মনোবিজ্ঞানী রাখা উচিত ছিল।”

খালেদা জিয়াকে শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগার থেকে বের করে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)।

ঢাকার বিএসএমএমইউতে পৌঁছার পর গাড়ি থেকে নামছেন খালেদা জিয়া; স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শনিবার তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুনরায় তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।

ওই বোর্ডে সদস্য রয়েছেন- ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

জাফরুল্লাহ বলেন, অন্য যেকোনো আসামির পয়সা বা প্রতিপত্তি থাকলে সে জেলে যাওয়ার সাত দিনের মধ্যে একটা বড় হাসপাতালের স্থানান্তরিত হতেন এবং সেখানকার কেবিনে থাকতেন।

ঢাকার বিএসএমএমইউতে পৌঁছার পর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই লিফটে ওঠেন খালেদা জিয়া; স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শনিবার তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়

“কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাকে নিঃসঙ্গতার মধ্যে রাখা হয়েছে, যাতে তার মানসিক বৈকল্য ঘটে।

“সরকার ইয়াবার আসামিকে বারডেমের ভিআইপি কেবিনে রেখেছে। ওনাকে একটা কেবিনে পাঠিয়ে দিলে কিই না ক্ষতি হবে!”

চিকিৎসক হিসেবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো একে একে তুলে ধরেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “আজকে আমি একজন ডাক্তার হিসেবে যা অনুমান করতে পারি উনার সমস্যাটা আসলে পয়েলা হলো বয়োঃবৃদ্ধ রোগ। এই বয়সে কতগুলো রোগের প্রকোপ দেখা দেয় সেগুলো আছে। সেগুলোর উপরে বাসা বেঁধেছে একাকীত্ব, নিসঙ্গতা।

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার খবর শুনে বিএসএমএমইউতে গেলে ফটক থেকেই পুলিশ ফিরিয়ে দেয় মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসকে।

তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পদ্ধতি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “…তার যে পদ্ধতি ছিলো উনি একটু বেশি রাত্রি করে ঘুমাতেন। জেলখানায় রাত্রি ৯টার পরে বাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়.. অন্ধকার।ফলে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

“উনার হাঁটুর ব্যথা। সম্ভবত ইমপ্ল্যান্টও আছে হাঁটুতে। উনার শারীরিক ইয়েটা একটু ওবেসিটির দিকে। … সব কিছু মিলে ভয়ানকভাবে উনার শারীরিক সমস্যা আছে।”

এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে চিকিৎসা হবে না বলে মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “তাকে বিএসএমইউতে একটা কেবিনে আটকে রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা হবে বাঞ্ছনীয় কাজ।

“জাতির দুর্ভাগ্য; সব কথায় কথায় আমরা বিদেশে যেতে চাই।”