হাসিনা-ইভিএমে না, ভোটে সেনা চান খালেদা

নির্বাচনের আগে সরকার প্রধানের দায়িত্ব থেকে শেখ হাসিনার সরে যাওয়া, বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন ও ইভিএম চালুর উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2017, 09:11 AM
Updated : 12 Nov 2017, 05:24 PM

তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপত্তি তোলেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।

রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের এই অবস্থান প্রকাশ করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, “শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের বলব, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলুন।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বিলুপ্তির পর এখন ভোটের সময় নির্বাচিত সরকারই ক্ষমতায় থাকার বিধান।

নির্দলীয় সরকার না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি তুলেছে তারা।

কিন্তু বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, ভোটের সময় শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

এই পরিস্থিতিতে দেড় বছর পর ঢাকায় প্রথম জনসভায় এসে বিএনপি প্রধান বলেন, “দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতেই হবে। জনগণ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

“নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। হাসিনার অধীনে তো নির্বাচন হবেই না।”

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু মোতায়েন করলেই হবে না, তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারও দিতে হবে। মোবাইল ডিউটি করতে দিতে হবে।”

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, “কোনো ইভিএম চলবে না। ইভিএম বন্ধ করতে হবে। ইভিএম আমরা চাই না।”

গত বছরের ১ মে শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতার পর রোববারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করলেন খালেদা জিয়া।

এই সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।

সমাবেশে জনসমাগমে পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার নিন্দা জানান খালেদা।

তিনি বলেন, “এই কাজ করে সরকার ছোট মনের পরিচয় দিয়েছে। এতো ছোট মন দিয়ে রাজনীতি ও জনগণের সেবা করা যায় না।

“আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করছি, আপনারা বাধা না দিয়ে দুটি জায়গায় জনসভা দেন, একটা আপনাদের, আরেকটা আমাদের। দেখতেন কার জনসভায় মানুষ আসে। কারণ মানুষে আমাদের ভয় নাই, তারা আমাদের ভালোবাসা, তারাই আমাদের শক্তি, এই শক্তি দিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।”   

বিএনপি নেত্রী কয়েক মাস আগে তার দেওয়া ‘ভিশন-২০৩০’ তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশে বেকার ভাতা চালু, স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, নারীদের উপবৃত্তি প্রদান, সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য বীমা চালু করবেন তারা।

প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে আগামী নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারবিরোধীদের ওপর নির্যাতন-মামলা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন-রাশিয়া-ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

‘মানবিক কারণে’ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, “এটা বেশি দিন চলতে পারে না। বিদেশি সংস্থার প্রতি আমাদের আহ্বান যাতে তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটা ব্যবস্থা করেন। প্রতিটি বড় বড় দেশ আমেরিকা, ইউরোপ, ‍ব্রিটেনসহ অন্যান্য যারা আছে চীন, রাশিয়া-ইন্ডিয়া সকলের প্রতি আমাদের আহ্বান- আপনারা বসে এই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা একটা বিরাট সমস্যা। আমি বলব, এই সমস্যা শুধু এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারেরর সমস্যা নয়, এটা জাতীয় সমস্যা, আমাদের প্রত্যেকের সমস্যা। তাই একসাথে বসে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সমস্যার সমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

“আমি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বলব যেন তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে, শুধু ফিরে যাওয়া নয় সেখানে তারা যাতে নির্ভয়ে থাকতে পারে, সেখানে তাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন করা হবে না সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে।”

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯২ সালে তার সরকার আমলে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথাও উল্লেখ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

কারাবন্দি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক সাংসদ মশিউর রহমান, দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, আবদুল ওহাব, রফিকুল আলম মজনু, আবুল খায়ের খাজাসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বেলা ২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভা শুরুর এক ঘণ্টা পর খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এসময় চার দিক থেকে তার নামে স্লোগান ওঠে। তিনি হাত উঁচিয়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এই সমাবেশ ডাকা হলেও এতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পায়।

মঞ্চের পেছনে লাগানো ব্যানারে লেখা ছিল- ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা’।

জনসভার জন্য উদ্যানে ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করে বিএনপি। মঞ্চের চারপাশে বসানো হয়ে সিসি ক্যামেরা। মঞ্চের সামনে ৩০ ফুট জায়গায় বেষ্টনি দেওয়া হয়।

পুরো জনসভা সুশৃঙ্খল রাখতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছিল।

জনসভা ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশ-পাশের এলাকা সাজানো ছিল নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুনে। এসব ডিজিটাল ব্যানারে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই জনসভায় যোগ দেন। বরিশাল থেকে জহিরউদ্দিন স্বপন, গাজীপুর থেকে সায়্যেদুল আলম বাবুল, সিলেট থেকে কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা আসেন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, শওকত মাহমুদ, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে বিএনপি মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেল, মহানগরের মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, জ্যেষ্ঠ নেতা হারুন আল রশীদ, মাহমুদুল হাসান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মীর নাসির, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, ভিপি জয়নাল আবেদীন, শাহজাদা মিয়া, ফরহাদ হোসেন ডোনার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাহবুবে রহমান শামীম, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, গৌতম চক্রবর্তী, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল হাই, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জল, নুরী আরা সাফা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, ফাওয়াজ হোসেন শুভ, নাজিমউদ্দিন আলম, আবদুস সালাম আজাদ, শরীফুল আলম, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, মাহবুবুল হক নান্নু, আমিরুল ইসলাম আলীম, আসাদুল করীম শাহিন, রেহানা আখতার রানু, ভিপি হারুনুর রশীদ, শহীদুল আলম, শামসুল আলম তোহা, কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলিন জেরিন খান, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।