আ. লীগকে ‘মানুষ বানাবেন’ খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসা থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি কিছু করবেন না, তাদের ‘সত্যিকারের মানুষ’ বানাবেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2017, 03:42 PM
Updated : 12 Nov 2017, 05:14 PM

রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনার এক পর্যায়ে একথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, “আপনাদের (ক্ষমতাসীন দল) সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) মাঝে-মধ্যে দুই-একটা কথা বলে ফেলেন। বলেন নিজেদের ফেইস বাঁচানোর জন্য ক্ষমতায় থাকতে হবে।

“আমি বলি না। আমরা আপনাদের মতো ধরব, মারব কিংবা আমরা তাদের জেলে পুরব- সেই রাজনীতি করি না। আমরা সহিংসতার রাজনীতি করি না।

“আমরা চাই, আপনাদের শুদ্ধ করতে শুদ্ধি অভিযান, আপনাদের শুদ্ধ করব। আপনারা যে মানুষ মারেন, খুন করেন, গুম করেন-এগুলো যে খারাপ কাজ। এগুলো বাদ দিয়ে আপনাদের সত্যিকারের মানুষ বানানোর চেষ্টা আমরা করব।”

তার এই বক্তব্যের সময় নেতাকর্মীরা হাততালি দিয়ে নেত্রীর কথায় সায় দেন।

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন পার্লামেন্টে বিরোধী দল হচ্ছে রওশন এরশাদ। তার দলের এমপিরা মন্ত্রী হয়েছে আবার বিরোধী দলেও আছে। এটা কেমন করে হয়? কাজেই কোনো বিরোধী দল নেই।

“এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই সংসদ ও সরকারও অবৈধ।”

ক্ষমতায় আসার পর এই ১০ বছরে আওয়ামী লীগ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশকে শেষ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালে শুধু এক বছরে ওই সব একাউন্টে (সুইস ব্যাংকের হিসাব) বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

“ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা ডিএফআইয়ের হিসাবে এই ১০ বছরে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। এই টাকা পাচার করেছে কারা? যারা ক্ষমতায় আছে তারাই। আওয়ামী লীগ এই টাকা পাচার করেছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালীদের অর্থপাচারের তথ্য ফাঁস করে ব্যাপক আলোচনায় আাসা পানামা পেপার্সের কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি নেত্রী।

তিনি বলেন, “বিদেশে অবৈধ পথে ক্ষমতাসীনদের পাচার করা বিপুল অর্থের খবর প্রকাশিত হয়েছিল ওই পানামা পেপারসে। অফশোর কোম্পানিগুলোতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো মামলা করেনি, কোনো তদন্ত করেনি।

“অথচ তারা (দুদক) পড়ে আছে আমাদের পেছনে। যেখানে আমাদের সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা নেই, সেখানে দুদকের বাড়াবাড়ি। আরা যারা চুরি করছে প্রতিনিয়ত তাদের দিকে দুদকের চোখটা পর্যন্ত যায় না, হাত তো দূরের কথা।”

গত সাত বছরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ‘চুরি’ হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “বুঝতে পারছেন ব্যাংকগুলোর অবস্থা কেমন। এখন সাধারণ মানুষও ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে না।

“বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত রিভার্জের অর্থ থেকে ৮০০ কোটি টাকা কারসাজি করে বিদেশে পাঁচার করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে কোনো তদন্ত হয় না, কাউকে ধরা হয় না, কারও বিচার হয় না। এসব টাকা দেশের জনগণের টাকা।”

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার নামে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কারা এর সঙ্গে জড়িত তা এদেশের মানুষ সবই জানে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এই আওয়ামী লীগ যত দিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন একদিকে চলবে লুটপাট, আরেক দিকে চলবে অত্যাচার, গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতন। এদেশের মানুষ বাঁচল কী মরল তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নাই।”

দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।

“দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে মা-বোনেরা তারা সবাই পরিবর্তনের আশায় আছে। তারা সুযোগ পেলেই ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেখিয়ে দেবে বাংলাদেশের মানুষ এখনও শহীদ জিয়াউর রহমানকে ভোলে নাই, তিনি মানুষের মনে আছেন, থাকবেন।”

বিএনপি প্রধান বলেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান তারা।

তিনি বলেন, “আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই, তার মানে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই। আলাপ-আলোচনা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। যে-ই ক্ষমতায় থাকুন আর যে-ই ক্ষমতার বাইরে থাকুক সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

“আমরা কার্যকর পার্লামেন্ট দেখতে চাই। সেই পার্লামেন্টে জবাবদিহি থাকবে, সেই পার্লামেন্টে সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। সরকারি দল বিরোধী দল আলোচনা করবে, একসঙ্গে মিলে সমস্যার সমাধান করবে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নিজের ও ছেলেদের কারাবন্দি হওয়া এবং পরবর্তীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া।