যে কোনো মূল্যে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 15 Oct 2015, 08:03 PM
বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামে এক জনসভায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দুই বিদেশিকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
এই ‘ষড়যন্ত্রের’ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের দিকে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া দেশে থেকে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ২০১৫ এর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ১৫০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
“এখন তিনি বিদেশে গেছেন। বিদেশের মাটিতে বসে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। আর বিদেশি মানুষগুলি; এখানে তাদেরকে হত্যা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “এই বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। এখনো সেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে এবং এদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, যদিও এটা অনেকের পছন্দ হয় না।
“বাস পুড়িয়ে দিয়েছে, প্রাইভেট কার পুড়িয়েছে, মানুষের ক্ষতি করেছে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এরা মানুষ না, এরা জানোয়ার। এরা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, মানুষের ক্ষতি করে। এরা মানুষের কল্যাণ আনতে পারে না।”
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এই জনসভায় বক্তব্যে যুবকদের প্রতি মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে বেরিয়ে এসে স্বনির্ভর হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আর যুব সমাজকে বলব, কোনো রকম মাদকসেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
“জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসেবন এগুলি কখনো বরদাস্ত করা হবে না। কেউ যেন এ পথে না যায়। সকলেই সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে, শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করবে সেটাই আমরা চাই। এদেশে কোনও জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের স্থান হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী সকালে কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া পৌঁছে সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয়দের মধ্যে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করেন।
এরপর সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে কুড়িগ্রাম আসেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বহু তোরণ নির্মাণ করা হয় শহর ও এর আশপাশের এলাকা ও দাসিয়ারছড়ায়।
শেখ হাসিনা জনসভায় উপস্থিত হন বেলা ৩টার দিকে। শুরুতেই কুড়িগ্রামে ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন এবং ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
আরও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ব্যানার নিয়ে জনসভা মাঠে হাজির হন অনেকে এবং স্থানীয় নেতারা তাদের বক্তব্যেও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কাছে দাবি-দাওয়া করতে হয় না। একটি দেশকে কিভাবে উন্নত করতে হয় তা আওয়ামী লীগ জানে। উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি নীতিমালাও আছে আমাদের।”
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই জেলার প্রত্যেকটা উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি আমরা। একসময় কুড়িগ্রাম ছিল মঙ্গা অঞ্চল। সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হত।
“আমরা মঙ্গা দূর করেছি। মঙ্গা শব্দ মানুষ ভুলে যাবে।”
কুড়িগ্রামে শিক্ষার হার বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সাক্ষরতার হার অনেক কম। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারি করা হবে।
সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে ধরলা ও দুধ কুমার নদীর উপর আরও নতুন দুটি সেতু করা হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া লালমনিরহাটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে কুড়িগ্রামে একটি নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ, খেলাধুলার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও কুড়িগ্রামে একটি শিশু পার্ক নির্মাণেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কোনো সরকার এই সমস্যার সমাধান করে নাই বা পারে নাই।”
সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের আপন করে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আর তারা ছিটমহলবাসী নন। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদেরকে আপনারা আপন করে নেবেন। তারা আপনাদের আপনজন।”
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এদেশের উন্নয়ন হয়।
“বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এদেশের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে আওয়ামী লীগ।”
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রমুখ।
জনসভা শেষে ঢাকা ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন উদ্বোধন করা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় নির্মিত সমন্বিত বীজ হিমাগার, রাজারহাট কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সেন্টার, কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, রাজীবপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।
ভিত্তিস্থাপন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, কুড়িগ্রাম নার্সিং হোস্টেলের নতুন ভবন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রাবাস, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রীনিবাস ও কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম প্রভৃতি।