‘ভারত নিয়ে’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি ফখরুলের

ফখরুল বলেন, “আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছে যে, আজকে তিনি যে কথা বলেছেন সেই কথার অর্থ কী।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2022, 04:05 PM
Updated : 19 August 2022, 04:05 PM

ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কিনা প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “গত পরশুদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন।

“এতই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধামকি দেন তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেন?”

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এক মন্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে শুক্রবারের আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্য আসে।

চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে ‘কোনো অনুরোধ করা হয়নি’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলে থাকলে, সেটা তার ‘নিজস্ব বক্তব্য’।

তবে তাতে সন্তুষ্ট নন বিএনপি নেতা ফখরুল। প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা এই কথাটার (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছে যে, আজকে তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যে কথা বলেছেন, সেই কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায়, এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে? এ কথার অর্থ মানুষ তো জানতেই চাইবে। এটা জরুরি কথা।”

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। বিএনপি মহাসচিব বিকালে মিলনায়তন প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

এর আগে সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন।

উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “সেতুমন্ত্রী যিনি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি অনেক কথা বলেছেন। সারাক্ষণ গালিগালাজ করেন। আমি যে কথাটা বলতে চাই, এতই যদি দক্ষ আপনারা দেশটা ভালো চালাচ্ছেন তাহলে উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুরের যে রাস্তা সেই রাস্তায় কেমন করে একই পরিবারের পাঁচজন মানুষ সাথে সাথে মারা যায়।

“প্রতিদিন প্রতিটি রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ কোথাও কোনো ডিসিপ্লিন নাই, কোথাও কোনো শাসন নাই, সুশাসন নাই। যে যেখানে পারছে লুট করছে, দুর্নীতি করছে, টাকা লুটে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

“এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করলেন কাকে? ওই ড্রাইভারকে, গ্রেপ্তার করলেন গার্ডকে। কেনো? এই কথার জবাব তো দিতে হবে সেতুমন্ত্রীকে প্রথম,… জবাব দিতে হবে প্রজেক্ট ডাইরেক্টরকে। তাদের বিরুদ্ধে তো এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।”

বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলের দেওয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি এখানে এসে যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, এখানে র‌্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সমস্ত প্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের ইলিয়াস আলীর ছেলের বিয়ে। কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্র নেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে।

“আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নেত্র নিউজ নিশ্চয়ই আপনারা সকলে দেখেছেন, আয়নাঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়নাঘর কতটুকু সত্যি।”

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এতো চ্যালেঞ্জ করবেন না। ক্ষমতা ছাড়ুন, ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এদেশে জনগণের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বোঝা যাবে আপনার শক্তি কত? এদেশে কয়টা লোক আপনার পক্ষে আছে তখনই বোঝা যাবে।”

এই সরকারকে আর ‘সময় দেওয়া যাবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জনগণের কাছে আহ্বান, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এসএম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিন বক্তব্য দেন।

আরও খবর-

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্য ‘টুইস্ট’ করা হয়েছে, দাবি মোমেনের

Also Read: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত অভিমত: কাদের