“মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের সুবিধা দেওয়ার নামে ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না”, বিবৃতিতে বলেন নেতারা।
Published : 15 Jul 2024, 07:25 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
সময়ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
সোমবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এ বিবৃতি দেন।
ছাত্রদের আন্দোলন ‘ন্যায়সঙ্গত’ মন্তব্য করে বিবৃতিদাতারা বলেন, "দমন পীড়ন করে এই আন্দোলন দমন করা করা যাবে না।"
বিবৃতিতে বলা হয়, “সমাজের বিভিন্ন অনগ্রসর অংশকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে মূল স্রোতে নিয়ে আসার জন্য সারা দুনিয়াতেই কোটা ব্যবস্থা চালু আছে। আবার এটা ঠিক যে কোটা ব্যবস্থা চালু হয় তা ক্রমে বিলোপ সাধনের জন্য।”
সমাজের নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসীসহ অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কোটা থাকা প্রয়োজন মেনে নিয়ে এতে বলা হয়, “কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের সুবিধা দেওয়ার নামে ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সেজন্য কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি যৌক্তিক।”
২০১৮ সালে সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে পরিপত্র জারি ‘কারো কাম্য ছিল না’ মন্তব্য করে বাম নেতারা বলেন, “সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র বাতিল ঘোষণা করায় এর বিরুদ্ধে আবার ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিরক্ত হয়ে ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করেছেন।”
এর মাধ্যমে সরকারপ্রধান তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, “কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় অঙ্গীকার করেছেন রাগ, অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কার্য সম্পাদন করবেন না।”
রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ বলে যে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করেন বাম নেতারা।
তারা বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের কোটা না দিয়ে রাজাকারদের নাতি-পুতিদের কোটা দেব?’
“এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-যুবকদেরকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শিবিরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে নির্যাতনের মাধ্যমে আন্দোলনকে দমন করতে চাইছেন।”
ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ফ্রন্টের সুস্মিতা মরিয়ম, অদিতি ইসলাম, ইনজামাম, প্রিয়া, ছাত্র ফ্রন্ট মার্কসবাদীর সায়মা আফরোজ, সুমিসহ ২ শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের বাধা ও হামলা করেছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ।
“এই হামলার ‘উসকানিদাতা’ প্রধানমন্ত্রী নিজেই। এছাড়াও গত কয়েকদিনে আন্দোলনকারীদের নামে পুলিশ ‘মিথ্যা মামলা’ও দায়ের করেছে। এটিকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।”
‘সহিংসতা সংকটকে তীব্র করবে’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপর ‘সহিংস’ হামলা সংকটকে আরও তীব্র করবে।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর গত রাত থেকেই পুলিশের হুমকি ও ছাত্রলীগের হামলার প্রস্তুতি চলতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।
“সোমবার দুপুরে ইডেন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা এবং দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রীর আহত হওয়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয় এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত।”