“স্থানীয়দের সঙ্গে গণসংযোগকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। ঈদ আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ,” বলেন এনসিপির একজন যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক।
Published : 30 Mar 2025, 11:35 PM
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জনসংযোগের লক্ষ্যে সারাদেশে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। কেউ কেউ ঢাকায় নিজের এলাকায় সময় দিচ্ছেন।
রোজার শেষ দিকে এলাকায় ইফতার আয়োজন এবং ঈদে পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হচ্ছেন তারা।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুরের পীরগাছায়, মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায়, আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (দক্ষিণাঞ্চল) কুমিল্লার দেবিদ্বারে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালীর হাতিয়ায়, যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসেইন ঢাকায় জনসংযোগ করছেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নামে পোস্টার-ব্যানার দেখা গেছে রামপুরার বিভিন্ন এলাকায়।
নতুন দলটি এখনো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি, যে কারণে এখনো পায়নি নির্বাচনী প্রতীক।
ডিসেম্বরে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরলে আর আট-নয় মাস বাকি। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের পরিচিত করার পাশাপাশি এলাকার সমস্যা নিয়ে মানুষের সঙ্গে মতামত জানার লক্ষ্য ধরে জনসংযোগে নেমেছেন এনপিসি নেতাকর্মীরা।
নতুন দলটির সামনের সারির কয়েকজন নেতার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদকেন্দ্রিক সম্ভাব্য নির্বাচনী এলাকায় এ গণসংযোগের বিষয়ে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, “যেহেতু আমরা নতুন দল, ঈদ আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ।
“নাগরিকদের কাছাকাছি গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা ছড়িয়ে দেওয়ার। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি। ঈদে আমরা শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছি।”
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির লোকজনের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা, বলেন তিনি।
এনসিপির এই যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “স্থানীয়দের সঙ্গে গণসংযোগকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করছেন৷ মানুষের কাছে যাচ্ছেন, তাদের কথা শুনছেন। আমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোও তাদের সামনে তুলে ধরছি।”
আন্দোলন থেকে দলে
এনসিপির আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশই সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থী, কেউ কেউ পাশ করে মাত্র চাকরিতে ঢুকেছেন। ৫ থেকে ১০ বছর ঢাকাকেন্দ্রিক জীবনযাপন করায় গ্রামে ফিরে নতুন করে পরিচিত হতে হচ্ছে তাদের।
সামনে জাতীয় কিংবা গণপরিষদ নির্বাচন, সেই নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি।
যদিও এই ঘোষণার আগে থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা অনেক নেতাই নিজ উদ্যোগে মাঠ গুছানোর কাজ শুরু করেছেন। পরে এনসিপি যাত্রা শুরু করলে তারা নতুন দলে যুক্ত হন।
মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠনকে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সফল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে নতুন এই দলটি গঠিত হয়েছে।
চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের অধিকাংশ নেতার বয়স ৩০ বছরের কম।
ইতোমধ্যেই প্রধান দলগুলোর সঙ্গে বেশকিছু জাতীয় বিষয়ে এনসিপির মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সতীর্থদের নিজেদের মধ্যেও কোথাও কোথাও বিরোধ-সংঘর্ষ হচ্ছে।
নতুন রাজনৈতিক ‘বন্দোবস্তো’, নতুন সংবিধান, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিচার কিংবা ‘সেকেন্ডে রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি নিয়ে ভোটের মাঠে নামা এনসিপি তাদের নতুন ধারণাগুলো সংসদে বসে চর্চা করতে চায়।
এনসিপি আত্মপ্রকাশের দিন দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আমরা দীর্ঘ দেড় দশকের আওয়ামী জাহিলিয়াতের শাসনের পরে আজ মুক্ত বাংলাদেশে যে সংসদ ভবনকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছি, সেই সংসদ ভবনে যেতে আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দাঁড়িয়েছি।”
ঈদ করতে নিজ এলাকায়
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন এনসিপি নেতারা। দলের কয়েকজন নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সম্ভাব্য নির্বাচনী এলাকাগুলোয় তারা সময় দিচ্ছেন, ভোটের সময় এলে প্রতীক নিয়ে যেন প্রচারণা চালানো যায়। দলীয় ফোরামে এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা না হলেও স্ব-উদ্যোগে গণসংযোগে নেমেছেন তারা।
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি ১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির কুমিল্লা- ১০ (সদর দক্ষিণ-লালমাই), ফরিদুল হক খুলনা-২ নির্বাচনী এলাকায় এবং শিরিন আখতার শেলী (সরকারি কৌঁসুলি) নিজ এলাকা নরসিংদী সদরে ঈদ করবেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সবার আগে নিজ এলাকা নোয়াখালীর হাতিয়ায় গেছেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
নোয়াখলী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে সামনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তিনি; অনুসারিদের নিয়ে দ্বীপটির হাট-বাজার চষে বেড়াচ্ছেন।
দ্বীপে ফেরিঘাট চালু, ভূমিহীনদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া, নদী ভাঙন রোধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে গণশুনানি কর্মসূচি করে ইতোমধ্যে বেশ আলোচিত মাসউদ।
সপ্তাহ খানেক আগে হাতিয়ায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তার অনুসারীদের।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। সম্প্রতি তিনি শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে এলাকায় যান। এ নিয়ে সমালোচনা হলে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটেই মানুষের কাছে যাচ্ছেন তিনি।
আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকে এলাকায় নিয়মিত সভা ও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা হিসেবে তিনি এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চান।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হবেন। ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী সরাইল ও আশুগঞ্জ নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি এ আসনেরই সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি।
আশরাফ মাহাদী কওমি ধারা থেকে আসা নেতা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কওমি মাদ্রাসাগুলোর বেশ প্রভাব রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মীর আরশাদুল হক। তিনি এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি।
সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুর এলাকায় এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম-১ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে এলাকায় সময় দিচ্ছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নরসিংদীর পলাশে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
সারোয়ার তুষার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নরসিংদীতে শহীদ পরিবারগুলোর বাড়ি বাড়ি যাব ঈদের দিন। পলাশ ঘোড়াশাল কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছি।”
ঢাকায়ও কয়েকজন
এনসিপির সামনের সারির কয়েকজন নেতা রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন করবেন। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) আসনে নির্বাচন করার কথা নেতাকর্মীরা বলছেন। যদিও এ বিষয়ে নাহিদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রামপুরার বিভিন্ন এলাকায় নাহিদের পোস্টার, ব্যানার দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর–আদাবর এলাকায় ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সক্রিয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসেইন। তার উদ্যোগে তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সমস্যা-সংকটের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে।
তারা এলাকার খাল ও মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন করেছেন। ১৫ মার্চ আয়োজন করেছেন ইফতার। ঈদুল ফিতরের সময় জনসংযোগের আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে তার।
পুরনো খবর: