আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বিভাজন তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “সরকার গোটা জাতিকে গত ১২/১৫ বছরে বিভক্ত করে ফেলেছে। এমন এটা জায়গা পাবেন না যে বিভক্তি নেই। সবখানে এই আওয়ামী লীগ আর বাকি সব বিরোধী; এই একটা ভাগ তিনি করে ফেলেছেন।
“মসজিদের কমিটি, সেখানে ভাগ; স্কুলের কমিটি, সেখানেও ভাগ; মাদ্রাসার কমিটি, সেখানেও ভাগ; গানের স্কুল, সেখানেও ভাগ; বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাগ, কলেজেও ভাগ- সবখানে ভাগ।”
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় একথা বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মরণে এই সভা আয়োজন করা হয়।
বিভক্তি নিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “জাতি সামনের দিকে যায় ঐক্যের মধ্য দিয়ে, যেটা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন। পঁচাত্তর সালে এসে তিনি সেই বিভক্তি দূর করে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।”
চলচ্চিত্রকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ওই সময় থেকেই জিয়াউর রহমানের ভক্ত ছিলেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক অঙ্গনটাই কেমন যেন নষ্ট হয়ে গেছে একদম, কলুষিত হয়ে গেছে। কোথায় ভালো জিনিস আছে বলেন?
“আমি মাঝে মধ্যে বলি যে, এখন সময়টা মনে হয় একটা নষ্ট সময়। সব কিছুকে এরা (সরকার) নষ্ট করে ফেলছে। আপনি বিচারালয় যান বিচার পাবেন না, আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে যাবেন নিরাপত্তা জন্য সেখানে নিরাপত্তা পাবেন না; আগে বলবে- তুমি বিএনপি কর, না আওয়ামী লীগ কর? যদি বিএনপি করো কোনো কিছু হবে না, উপরন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দেবে।”
বিএনপির ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই ঢাকা দক্ষিণে ছাত্র দলের তিনজন ছেলে, তারা রাতে বাসায় যাচ্ছিল, ওই সময়ে তাদেরকে আক্রমণ করে আহত করা হয়েছে। মামলা দিতে গেছে ওদের (ছাত্রদল নেতাদের) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।”
দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, “একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যে একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, সরকার গঠন হবে সেই নির্বাচনে জনগণই অংশ নিতে পারে না। তাহলে এটা কীসের নির্বাচন? ওই জায়গাটা তারা ধবংস করে ফেলেছে।
“তাহলে বুঝেন এই যে একটা অবস্থা, এই যে একটা পরিবেশ, এই যে একটা সমাজ, এই যে একটা রাষ্ট্র তারা তৈরি করছে, এখান থেকে মুক্তি হবে কী করে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ‘বাতিঘর’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি আমাদের সামনে একটা নক্ষত্রের মতো ছিলেন, বাতিঘর। আমরা এই ধরনের মানুষ আর পাব না।
“আমরা অনুপ্রাণিত হই তার গানের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার কাজের মধ্য দিয়ে। আসুন গাজী ভাইয়ের আত্মার জন্য আমরা সবাই দোয়া করি।”
গাজী মাজহারুল আনোয়ার গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকায় মারা যান। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’- এর মত অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা মাজহারুল আনোয়ারের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
শনিবার আলোচনাসভায় গুণী এই শিল্পীর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, খন্দকার মারুফ হোসেন, গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা এম আবদুল্লাহ, প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্ত্রী জোহরা গাজী ও ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।