“যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই,” বলেন তিনি।
Published : 28 Oct 2024, 07:12 PM
মানুষ হত্যার পর যারা পেট্রোল দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন করার নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “১৯৯৬ সালে তাদের (আওয়ামী লীগ) দলীয় প্রধান বলেছিলেন, কেউ যদি তাদের দলের একটা লাশ ফেলে, তাহলে তারা ১০টা লাশ ফেলবেন। এবার বলেননি কিন্তু করেছেন। জাতির ওপর রাগ মেটাতে নিরীহ মানুষদের হত্যার পর তাদের লাশ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন।
“তারা নাকি আবার এদেশে রাজনীতির ও নির্বাচন করতে চায়। যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”
ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সোমবার ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নিহতদের প্রতিবাদে আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন জামায়াত আমির।
আওয়ামী লীগ দেশকে ‘জাহান্নামে’ পরিণত করেছিল মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, “সেই আওয়ামী লীগ এখন মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে। ১৯৯৬ সালে অতীতের অপরাধের জন্য তারা হাতজোড় করে বিনা শর্তে মাফ চেয়ে বলেছিল, আমাদের একবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিয়ে দেশপ্রেম প্রকাশের সুযোগ দিন। জনগণ তাদের সে সুযোগ দিয়েছিল, সেবার ক্ষমতায় এসে তারা কাড়িকাড়ি লাশ ও রক্ত উপহার দিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা কী চায় তা বুঝে রাজনীতি করতে হবে। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। জাতীয় জীবনে সংকট ও স্বার্থের ব্যাপারে কোনো বিভক্তি হোক তা আমরা চাই না।
“মৌলিক সব বিষয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশে ফ্যাসিজমের জায়গা নেই।”
‘আওয়ামী লীগবিহীন বাংলাদেশ চাই’
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও অন্যান্য দল বিভিন্ন কথা না বলে যদি একটি কথায় আসতে পারি, যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে দেশটা পুনর্গঠিত হবে।
“তা নাহলে এই দেশটা নিয়ে সারা জীবন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কিন্তু খেলতেই থাকবে। এটা কখনই হতে দেওয়া যাবে না।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “বিগত দিনের কষ্ট এখন আমাদের কাছে গল্প। আমরা শুকরিয়া আদায় করি, দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল আমরা ৫ অগাস্ট ঘরে তুলেছি। এই ৫ অগাস্ট আমাদের একটি চাওয়া পূরণ হয়েছে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ। এখন আমরা আওয়ামী লীগবিহীন বাংলাদেশ চাই।
“আওয়ামী লীগ আর ভদ্রলোকের গণতন্ত্র কখনও পাশাপাশি চলতে পারে না। শয়তানের দোসর আওয়ামী লীগ।”
সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা খুশি হই যে তারা চলে গেছে। আসলে খুশি হওয়ার কারণ নেই। তাদের চর-অনুচর রাজনীতি, সংস্কৃতি, সচিবালয়, মিলিটারি সব জায়গায় উপস্থিত আছে। এদের রেখে আপনি কোনোভাবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।”
অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতাকর্মীদের বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা জানান মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “বিগত দিনে কোনো একসময় হয়ত আমরা একসঙ্গে হতে পারিনি। কোনো একসময় হয়ত একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছিলাম।
“আমরা আগামী দিনে সব সময়ের জন্য, দেখি চেষ্টা করে পারি কিনা, একসঙ্গে হয়ে এই দেশটাকে আবারও সুন্দর করে পুনর্গঠিত করতে পারি কিনা।”
‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ চলাকালে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান মির্জা আব্বাস।
সভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সভায় দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত নিপীড়নে আহত ও নিহতদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।