জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
Published : 01 Sep 2022, 12:52 AM
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার চক্রান্তের সঙ্গে জড়িতদের চেহারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো একদিন তা নিশ্চয়ই প্রকাশ হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব এ অধিবেশনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। পরে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।
সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি এটা অনেকেই দাবি করেছেন যে যারা সরাসরি হত্যার সাথে (বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে) জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। কাজেই এই চক্রান্তটা, শুধু একটা হত্যাকাণ্ড না- এই চক্রান্তটা আমার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত আমার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত আমাদের আদর্শের বিরুদ্ধে।
“কাজেই এই চক্রান্তের পেছনে কারা বোধহয় সেটাও খুঁজে বের করার সময় এসেছে এবং আমি মনে করি হয়ত আমরা শেষ করে যেতে পারব কি না। কিন্তু একদিন না একদিন সেটা নিশ্চয়ই বের হবে। একদিন না একদিন সেটা নিশ্চয়ই প্রকাশ হবে।“
তিনি বলেন, “তবে হ্যাঁ, জানি অনেক কিছুই। কিন্তু আমি তো বলেছি সব কষ্ট, সব ব্যথা, সব কিছু ধারণ করেই এই সব যত শোক সব কিছু বুকেই নিয়েই আমার পথ চলা। আমি তো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি। আমি অনেক জানি, বলতে পারব না, বলি না।
“কারণ আমার একটাই লক্ষ্য আগে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটুক। সেটাই স্বার্থকভাবে যখন করতে পারব তখনই আমার অনেক কিছু বলার একটা সুযোগ আসবে।”
প্রস্তাবটি পাঠ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মাননীয় স্পিকার আমার মনে হয় আপনি এই প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে পারেন। অন্তত এই হত্যার চক্রান্তকারীদের বের করে জাতির সামনে তাদের চেহারাটা উন্মুক্ত করা দরকার সেটাও আমি মনে করি।”
উবায়দুল মোকতাদিরের প্রস্তাবে বলা হয়, “এই মহান সংসদের অভিমত এই যে ঘৃণ্য খুনি চক্র ও চক্রান্তকারী গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ অগাস্টের শহীদদেরকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি। কিন্তু চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্নারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে। তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেওয়া যায় না।
“ইতিহাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বাঙালির মহৎতম ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের বিনম্র চিত্তে ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেওয়ার শপথ গ্রহণ করছি। ২০২২ এর অগাস্ট মাসে একাদশ জাতীয় সংসদে উনবিংশতম অধিবেশনে এই হোক প্রত্যয়, দৃঢ় ঘোষণা।“
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর দেশের অরাজক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “হাজার হাজার সৈনিক অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। একেকটা ক্যু হয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। বিভিন্ন কারাগারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড চলেছে।”
এর পেছনের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই হত্যার (বঙ্গবন্ধু হত্যা) মধ্য দিয়ে এটা খুব স্পষ্ট যে শক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এবং যাদেরকে আমরা পরাজিত করেছি এবং তাদের যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরই হাত ছিল।
“কিন্তু আমার প্রশ্ন এখানে যারা আমার পরিবারের এত কাছের, যারা এত পরিচিত বা যারা এক সময় মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা এর সঙ্গে যুক্ত হয় কীভাবে?”
যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ওই সময়ের নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপপ্রচারের বর্ণনাও দেন তিনি।
অপপ্রচার করে জাতির পিতাকে ষড়যন্ত্রকারীরা জনগণের থেকে দূরে সরাতে পারেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কর্নেল রশিদের, কর্নেল ফারুকের বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ সেখানে তারাই তো বলেছে যে সে (বঙ্গবন্ধু) এত জনপ্রিয় ছিল...তাকে অজনপ্রিয় করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা পারা যায়নি। কাজেই তাকে হত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।”
মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আওয়ামী লীগ সরকারের কাজ উল্লেখ করে এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আজকে যখন বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে একটা সম্মান পাচ্ছে আর আমাদের দেশের ভেতরে কিছু লোক এই বাংলাদেশকে অসম্মান করার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
“এটাই তো সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য আমাদের। মনে হচ্ছে যে স্বাধীনতাবিরোধী, ১৫ অগাস্টের খুনি তাদের প্রেতাত্নারাই যেন এখন সক্রিয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খুনি যারা আত্নস্বীকৃত যারা দেশে ছিল তাদের গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে তিনজনকে আমরা বাইরে থেকে আনতে পেরেছি। ব্যাংকক থেকে আমরা হুদাকে নিয়ে এসেছি বা মাজেদ, মহিউদ্দিন তাদের নিয়ে আসতে পেরেছি। এখনও কর্নেল নূর কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়।”
পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এরা আমাদেরকে মানবাধিকারের কথা শোনায়। আর খুনিদেরকে লালন পালন করে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য।”
৩ নভেম্বরের ক্যু হওয়ার পর যখন খুনিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় তখন তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা বাংলাদেশ থেকেই করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান ভুট্টোকে ম্যাসেজ পাঠায়। ভুট্টো লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে দিয়ে এদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।
“কাজেই খুনের সঙ্গে কারা জড়িত এটা তো স্পষ্ট এখন।”