নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য হলেও এলাকায় স্বস্তিতে ছিলেন না। সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন ও তাকে ঘিরে বলয় তৈরি হয়।
Published : 26 Nov 2023, 08:17 PM
কিশোরগঞ্জ- ২ আসনে প্রার্থী বদল করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার জায়গায় বেছে নেওয়া হয়েছে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২০০৪ সালে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা ও ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ অনেকগুলো আলোচিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৯৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
এই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমান সংসদে আছেন এমন ৬৯ জনকে বাদ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এদের একজন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের নূর মোহাম্মদ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার পর তিনি সহজেই জয় পান। তবে গত প্রায় পাঁচ বছর স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেকায়দায় পড়েছেন।
এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন ও নূর মোহাম্মদকে ঘিরে দুটি বলয় তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে নানা সময় সংঘাত, সহিংসতা জাতীয় গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন হয়ে এসেছে।
দুই জনের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়ে কি না, তা নিয়েও স্থানীয় রাজনীতিতে ছিল আলোচনা।
আসনটিতে এই দুই নেতা ছাড়াও দলের মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দেন আরও ১০ জন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাহার আকন্দ। এরপর থেকেই তার সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচিত হয়ে উঠে।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে উপ পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়া কাহার আকন্দ ৪৬ বছর কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় অপরাধ তদন্ত সংস্থা- সিআইডিতে কাজ করেছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০১ সালে বিএনপি তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বরখাস্ত হয়। আইনি লড়াইয়ের মধ্যে সাত বছর পর ২০০৯ সালে আবার চাকরি ফিরে পান।
কাহার আকন্দ অবসরে যাওয়ার পরও একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অধিকতর তদন্তের ভারও আসে কাহার আকন্দের কাঁধে। তার এই তদন্তের পর ২০১৮ সালে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও আরও ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
সবশেষ ২০১৯ সালে অবসরে যান কাহার। অবসরে যাওয়ার পর তিন বছর নির্বাচন করতে যে বিধিনিষেধ আছে, সেই সময়সীমা পার হয়েছে গত বছরই।
এবার পুলিশের দুই জন সাবেক আইজিপি, তিনজন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপিসহ নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন ডজনখানেক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে কাহার ছাড়া আর কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি।
তবে সুনামগঞ্জ- ২ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত। তিনি এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
শরীয়তপুর- ১ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ইকবাল হোসেন অপু।
সিআইডির সাবেক প্রধান পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি মোখলেসুর রহমান মনোনয়ন চেয়েছিলেন জামালপুর- ১ আসনে। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বকশীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ।
নৌ পুলিশের সাবেক প্রধান অবসরে যাওয়ার অতিরিক্ত আইজিপি শেখ মারুফ হাসান মনোনয়ন চেয়েছিলেন খুলনা- ৪ থেকে। এই আসনে আবারও মনোয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
বাগেরহাট-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন সাবেক আরেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিম খান।
বরিশাল-৫ এর মনোনয়ন কিনেছিলেন সাবেক এসপি মাহবুব উদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুককেই বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
সাতক্ষীরা- ৪ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছিলেন অতিরিক্ত এসপি শেখ আতাউর রহমান। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার মনোনয়ন পাননি। বেছে নেওয়া হয়েছে এস এম আতাউল হককে।
মনোনয়ন পাননি বগুড়া- ৫ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য সাবেক পুলিশ সুপার হাবিবর রহমান। তার জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন মজিবুর রহমান মজনুকে।