“সমস্ত বিপদগুলোকে কাটিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা (অন্তর্বতীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, এই অনুরোধ করব।”
Published : 12 Aug 2024, 02:38 PM
সরকার পতনে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা ‘চক্রান্ত করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল
ষড়যন্ত্র রুখতে দেশের মানুষকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফখরুল বলেছেন, “দেশে প্রতিবিপ্লবের যে আশঙ্কা আছে, সেই আশঙ্কা থেকে আমি সকলকে বলব দেশকে মুক্ত করবার জন্য অত্যন্ত সজাগ থেকে, রাস্তায় থেকে তাদের (আওয়ামী লীগ) যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, সেই চক্রান্তকে প্রতিরোধ করবার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জনগণের কাছে আমার এই হচ্ছে প্রত্যাশা।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার সকালে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাসোর পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল।
‘বাকোওয়াজ’
‘সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে ক্ষমতা অটুট থাকত’ বলে শেখ হাসিনার বার্তার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, “বাকোওয়াজ। নিজে যখন ব্যর্থ হন, তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো তাদের একটা বৈশিষ্ট। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা ছিল ছাত্র-জনগণ-নাগরিকের একটা স্বতস্ফূর্ত গণজাগরণ। সেই গণজাগরণকে সুসংহত করাই আমাদের একমাত্র কাজ।”
এই আন্দোলনকে ‘বিভ্রান্ত’ করার চেষ্টা চলতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই যে মুক্তি হয়েছে, তা সুসংহত করার জন্য কাজ করুন।”
‘দ্রুত নির্বাচন দাবি’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আশা প্রকাশ করছি, অন্তর্বর্তী সরকার তারা সমর্থ হবে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। আমি অনুরোধ করব, অতি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরি করা এবং সমস্ত বিপদগুলোকে কাটিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা (অন্তর্বতীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।”
‘সংখ্যালঘুর ওপর হামলার খবর ভিত্তিহীন’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যে আসা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এসব ভেইক প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশের এই গণজাগরণ এই অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য, ব্যর্থ করার জন্য এই যে নতুন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার তাকে ব্যর্থ করার জন্য তারা এই মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
“আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ব জনমত তারা কেউ এটাকে বিশ্বাস করবেন না।”
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরেও হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে।
এই নিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও খবর ও ছবি প্রকাশ হয়েছে।
ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান কোকোর ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা সবাই জানি, কোকোকে অত্যাচারে-নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল এক এগারোর সরকারের নির্যাতনের কারণে। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তিনি।”
বিএনপি মহাসচিব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কোকোর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাইফুল ইসলাম নিরব, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে কোকোর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।