জাতীয় পার্টির পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে তার ডাকা কাউন্সিল প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “কাউন্সিল আহ্বানের এখতিয়ার বেগম রওশন এরশাদের নেই। তার সাথে কথা হয়েছিল, আমরা তাকে পরের দিন কাউন্সিল আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এখতিয়ার বহির্ভূত কাউন্সিল আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেননি।”
বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতিতে সংসদের অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রায় এক বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বিদেশে চিকিৎসাধীন। তিনি হঠাৎ করে নভেম্বরে একটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছেন।
“তিনি আহ্বায়ক হয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানবৃন্দদের যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে। অথচ আমরা কেউই এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আবার যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে তিনি জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্যও নয়।”
এসব কারণেই রওশনকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান চুন্নু।
চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ কাউন্সিল ডাকার পর তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে রওশনের সঙ্গে দেবর কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় দুজনের।
তারপর কাদের দলের চেয়ারম্যান হন, আর রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তিন বছর পর গত ৩০ অগাস্ট আকস্মিকভাবে রওশনের নামে দলে কাউন্সিল ডাকা হয়। এর পাল্টায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন।
চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদীয় দলের সভায় জাতীয় পার্টির ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৪ জনই এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত। ২৩ জন উপস্থিত থেকে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন।
“আর অপর একজন সংসদ সদস্য বিদেশ থেকে ফেরার কারণে ফোন করে তার সম্মতির কথা জানিয়েছেন। সেই চিঠি চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর স্বাক্ষরে স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”
রাঙ্গাঁ প্রসঙ্গ
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীসহ সব পদ থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে অব্যাহতির পেছনে তার ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড’ই দায়ী বলে দাবি করেছেন মহাসচিব চুন্নু।
তিনি বলেন, “গেল এক বছর ধরে গণমাধ্যম, সংসদ ও বিভিন্ন ফোরামে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সংগঠনের নীতি ও অবস্থানবিরোধী কথা বলছিলেন। গেল এক মাস আগেও এমন একটি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
“তখন সংগঠনবিরোধী কোনো কাজ করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। তবে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রতি পার্টির সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্র ও বিধি মোতাবেক হয়েছে।”
অব্যাহতির একদিন পর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে রাঙ্গাঁ বলেছেন, তার দল গণতান্ত্রিকভাবে না চললে তিনি আর দলে থাকবেন না। তবে অন্য কোনো দলেও যোগ দেবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “যদি চেয়ারম্যান চান, তবেই মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। কারণ কাউকে পার্টিতে ফেরানোর এখতিয়ার শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের।”
চুন্নু বলেন, “কেউ দল থেকে চলে যেতে পারে, তাতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই চলে গেছেন, কিন্তু জাতীয় পার্টি তার স্থানেই আছে। জাতীয় পার্টি কেউ ভাঙতে পারবে না। জাতীয় পার্টি এখন অনেক শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ।”
গঠনতন্ত্রের যে ধারার ক্ষমতাবলে দলীয় প্রধান তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন সেই ধারা ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন রাঙ্গাঁ। দলের কাউন্সিলে ওই ধারা বাদ দেওয়ার কথা উঠেছিল জানিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘কিছু লোকের কারণে’ সেটা করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, “এখন গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার সমালোচনা করছেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ; কিন্তু যখন মহাসচিব ছিল, তখন তো এই ধারার কথা কখনোই বলেননি তিনি।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “যখন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান রাজনীতি পরিষ্কার করছেন; যখন বলছেন, আমরা এখন আর কোনো জোটে নেই, জাতীয় পার্টি কারও দালালি করবে না। তখন হয়ত কারও কারও কষ্ট হতে পারে। যারা দালালি করতে চায়, তারা কখনোই সফল হবে না।”
এক প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, “জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে স্পিকার নিজেই বলেছেন, তিনি বিধিমোতাবেক সিদ্ধান্ত নেবেন।”