তখন আর সকল ভারতীয় পণ্য বর্জন করার প্রয়োজন হবে না: গয়েশ্বর

এই বিএনপি নেতার ধারণা, বাংলাদেশে মানুষ যদি শুধু ভারতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, তাতে যে ক্ষতি হবে, তখন ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে সরে যেতে বলবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2024, 10:01 AM
Updated : 29 March 2024, 10:01 AM

ভারতীয় পণ্য বর্জনে বিএনপির আহ্বান যে আসলে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলতে, সে কথাই বললেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

কোনো এক লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, “এই একটা পণ্য (শেখ হাসিনার সরকার) বর্জন করলেই তো জাতি মুক্ত। আর সকল পণ্য বর্জন করার প্রয়োজন হয় না।”

শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তিনি বলেন, “আজকে পণ্য বর্জনের কথা বলছি। একটা লেখা দেখলাম, ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য কি? শেখ হাসিনা। এটা বর্জন করলেই তো শেষ। বর্জন করা তো করছেই, এখন এটাকে ছুঁড়ে ফালাইয়া দেন… তাহলে তো শেষ।”

বাংলাদেশিরা ভারতে যাওয়ায় ভারতের কী লাভ হয়, তা বোঝাতে উৎস উল্লেখ না করে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন গয়েশ্বর।

তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে জানেন না, যারা ভারতের যান চিকিৎসার জন্য, ভ্রমণের জন্য, তারা হয়ত জানতে পারেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ভিসার আবেদন জমা পড়ে। ৮ শ টাকা কইরা হলে ৮০ কোটি টাকা, মাসে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, বছরে তাহলে বোঝেন কত কোটি টাকা ওরা পাচ্ছে।

“একজন ভিসার জন্য আবেদন করলে ৮ শ টাকা জমা দেন। ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দিলেও ৮ শ টাকা থেকে যায়। ভিসা মানে কি? একজন মানুষ যখন বর্ডার ক্রস করবে, পার ডে পাঁচ হাজার টাকা খরচ, চিকিৎসার খরচ আছে, ওষুধের খরচ আছে, আওনের সময়ে মার্কেটিং আছে… নাকি? ওষুধ না কিনা আমাগো তো অভ্যাস খারাপ জিনিস কিনমু…।”

গয়েশ্বর বলেন, “যে হিসাবটা দিলাম, পণ্য বর্জন কিসের? বাংলাদেশের মানুষ যদি বলে যে, কালকে থেকে ভারতে যামু না, তখন হাসিনা দিল্লী তোমারে কইয়ে দেব যে, যাও না, আর পারতেছি না গো। আমাগো বাঁচতে দাও, তোমারে রাখতে গিয়া আমরা তো আর পারি না। ভারতের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার হিসাব করছেন? করেন নাই।”

২০১৪, ২০১৮ এবং ১০ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরে এর কঠোর সমালোচনা করেন গয়েশ্বর। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও তিনি দায়ী করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রতিদিন নাটক করবেন, নানা ধরনের উচ্চ-বাচ্য করবেন। ভারত নিয়ে আপনিই তো ভেজালটা লাগাইলেন।

“কি বললেন? সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের লোক আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, ভারত যদি পাশে না থাকত, আমরা এই নির্বাচন … ৭ তারিখে ডামি, স্বামী, সমকালীন নির্বাচন সম্পন্ন হইতে পারত না। এটা কি আমাদের দল থেকে কেউ বলছে না আপনি বলছেন।”

গয়েশ্বর বলেন, “সর্বদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম এখনা শেষ হয় নাই। প্রত্যেক দেশের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম এখনো শেষ হয় নাই। আমরা সেই মুক্তির সংগ্রামের কথা বলছি। আমরা মুক্ত নই। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি আছেন… সেটাই একমাত্র না… সারা দেশটাকে আমরা মুক্ত, অর্থাৎ জাতিকে মুক্ত করতে চাই।

“কিসের কবল থেকে? রাহু গ্রাসের কবল থেকে। আমরা যে স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, সেই স্বপ্ন শেষ হয়নি। কারণ আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আমাদের আয়েত্ব আসে নাই। আন্দোলনের আমরা যে স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্ন শেষ হয়নি। সেজন্য বলি, এই মুক্তির সংগ্রামের জন্য আমাদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই।”

বিএনপি সমর্থক সংগঠন ‘অন্তরে মম শহীদ জিয়া’র উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “জিয়াকে বাদ দিয়ে ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। তার নামকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই জিয়ার নাম রয়েছে।”

সংগঠনের উপদেষ্টা ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিক শিকদার, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামান মুনির, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের ছাত্র দলের রাজু আহমেদ, অন্তরে মম শহীদ জিয়া সংগঠনের শাহ আলম বক্তব্য দেন।