ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।
Published : 21 Nov 2024, 04:02 PM
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার বিকালে সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনাবাহিনীর প্রটোকল পাহারায় সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনও রয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন।
সাময়িক মুক্তির পর থেকে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে কখনো বাসা থেকে বের হননি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি।
খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন। দীর্ঘদিন পর তারা নেত্রীর দেখা পেয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে সেনানিবাসে পৌঁছে গেছেন।
সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এস এম কামরুল আহসান বুধবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজায় গিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিবছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবেই বিকাল ৪টায় সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস থাকবেন প্রধান অতিথি।
রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেতা।
এরপর আর কখনো তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর তাকে আর আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। চির বৈরী এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।
সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।
গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার সরকার পতনের পর গত ৫ অগাস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বহু বছর পর এবার তাকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দেখা যাবে না।