তিনি বলেন, “গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হয়েছে।”
Published : 25 Jan 2024, 05:58 PM
নতুন শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রমকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “কোনো একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
নতুন শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রমকে ‘দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “এই শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের আবহমানকালের যে ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি, তা ভুলিয়ে দেওয়া হবে।
“কথায় আছে কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই হবে। সেই কাজটি অত্যন্ত সুচারুভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে, অত্যন্ত অপকৌশলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয় দাবি করে রিজভী বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে নতুন প্রজন্মকে তাঁবেদার বানানো যায়।
“দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। এই শিক্ষা সিলেবাস জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।”
নতুন শিক্ষানীতিতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রয়াসকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা চালু করে কিশোর মনকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।”
নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-বায়োলজির মতো বিশুদ্ধ বিজ্ঞান মাধ্যমিক লেভেল থেকে তুলে দিয়ে কিশোর-তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পথে অন্তরায় তৈরি করা হবে।
“এই কারিকুলাম বাস্তবায়নের ফলে বৈশ্বিক মানদণ্ডে পেশাভিত্তিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হবে।”
‘সর্বস্তরে অনলাইন শিক্ষা সঠিক নয়’
রিজভী বলেন, “প্রযুক্তির ওপর অতিনির্ভরতা প্রযুক্তি দানবে পরিণত হতে পারে। শিশুদেরকে যদি অনলাইনজাত সব প্রোডাক্ট দেন তারা এলোমেলো হয়ে যাবে, বিশৃঙ্খল হয়ে যেতে পারে, বিকৃতমনস্ক হয়ে যেতে পারে, বিভ্রান্ত হতে পারে।
“অনলাইন ব্যবহার সীমিত করার পরিবর্তে ব্যাপকভাবে প্রসার করা হয়েছে এই পাঠ্যকমে। শিশু কিশোররা বিভিন্ন ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব) ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিষিদ্ধ গেমস, অনলাইন জুয়া, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, পর্ন সাইটসহ নানা অপকর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে কিশোর গ্যাং যারা ছিনতাই, খুনে জড়িত হয়ে পড়ছে। তরুণীদের হয়রানি, ইভটিজিং, কিশোর কিশোরীর অবৈধ সম্পর্ক, নেশা, মাদকসহ নানা কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।”
অনলাইননির্ভরতা কমিয়ে পাঠ্যবই নির্ভর আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার তাগিদও দেন বিএনপি নেতা।
সংবাদ সম্মেলন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।