বিএনপি এর আগে চার দফায় ৯ দিন অবরোধ এবং একদিন হরতাল পালন করেছে।
Published : 13 Nov 2023, 03:47 PM
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিল বিএনপি।
মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে এই কর্মসূচি পালিত হবে বুধবার ভোর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত।
চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন সোমবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘এক দফা দাবি আদায়, নিহত সাথীদের ‘হত্যার’ বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং সারাদেশে গ্রেপ্তারকৃত ‘হাজারো’ নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধে দাবিতে আগামী ১৫ নভেম্বর বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৭ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে।”
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামা অন্য দলগুলোও একই কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে এর আগে বিএনপি একদিন হরতাল ও ৯ দিন অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ দিন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর এখন পর্যন্ত ১৪টি কর্মদিবসের মধ্যে ১১ দিনই এই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা হলো।
সেই সংঘর্ষের পর বিএনপির ২৯ অক্টোবর হরতালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও অন্যান্য দাবিতে প্রথমে ডাকা হয় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ। সোমবার বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার ভোর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ফের রোব ও সোমবার অবরোধ শেষে মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর বিরতি দেয় বিএনপি। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই দিনটি বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে।
এই দিনটিকে এবার কোনো কর্মসূচি না দিলেও সেদিন অবরোধ রাখা হয়নি। এরপর বুধ ও বৃহস্পতিবার ফের একই কর্মসূচি দেওয়া হয়।
শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর ফের রোব ও সোমবার অবরোধ ডাকে বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলো।
এসব কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে এখানে সেখানে। আগুনের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে রাজধানীতে। ফায়ার সার্ভিস গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩০টিরও বেশি বাসে আগুনের কথা জানিয়েছে।
এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হলেও রিজভী দাবি করছেন ‘সরকারের এজেন্সি’ দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দলের নেতা-কর্মীদের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অবশ্য আইনশৃঙ্খল বাহিনী একাধিক ঘটনায় আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আটকের কথা জানিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কিছু ভিডিও।
অবরোধের পাশাপাশি চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। মির্জা ফখরুল ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহার ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরীন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
বিএনপির দাবি এই কয়দিনে সারা দেশে তাদের আট হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং এই অভিযান চলছেই।
এই অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের সিংহভাগ নেতাই আছেন আত্মগোপনে। রিজভী নিজেও কর্মসূচি ঘোষণা করছেন অনলাইনে।
রিজভী জানান, গণমাধ্যমের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডারবাহী গাড়ি তাদের কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
যে দাবিতে এই কর্মসূচি, সরকার অবশ্য তা অগ্রাহ্য করছে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে-সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোটও চাইছেন।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি গুটিয়ে এনেছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি জানিয়ে এসেছে কমিশন। চলতি সপ্তাহেই যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
২০১১ সালে উচ্চ আদালত এক রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ওই বছরই নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী।
এর প্রতিবাদে আন্দোলনে গিয়ে বিএনপি ২০১৪ সালের দশম সংস নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহতের ডাক দেয়। টাকা হরতাল ও অবরোধের মধ্যে ভোট হয়।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলে আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফেরে।