বিএনপিকে সুশৃঙ্খল করেছেন তারেক: ফখরুল

আন্দোলন সফল হলে তারেক দেশে ফিরবেন, জানালেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 01:21 PM
Updated : 6 March 2023, 01:21 PM

বিএনপি এখন আগের চেয়ে সক্রিয় বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি।

তারেকের সপ্তদশ কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান সাহেবের যোগ্যতাটা কোথায়? তিনি বিএনপিকে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে এসেছেন।

“যে ব্যবস্থায় পার্টি অ্যাকটিভ হয়েছে, গোটা দল এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে আগে আমাদের বিভিন্ন সংগঠনগুলো ও তার ইউনিটগুলো সেভাবে কাজ করতে পারছিল না, আজকে তারা সক্রিয় হয়ে কাজ করছে। আজকে দেখুন, যতগুলো প্রোগ্রাম দেওয়া হচ্ছে, সবগুলো প্রোগ্রামে জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক ২০০৭ সালের ৭ মার্চ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর বন্দি ছিলেন। বিভিন্ন মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চিকিৎসার যুক্তরাজ্যে যান, এরপর সপরিবারের সেখানেই থাকছেন তিনি।

লন্ডনে থাকা অবস্থায়ই বিএনপির কাউন্সিলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তারেক। মা খালেদা জিয়া পাঁচ বছর আগে কারাগারে যাওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

দলের ‘ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি’ হিসেবে তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস পালন করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা; সোমবারের আলোচনা সভা যৌথভাবে আয়োজন করে উত্তরাঞ্চল ছা্ত্র ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম।

২০০৭ সালে তারেককে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, “এই গ্রেপ্তার ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে গ্রেপ্তার করা, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে গ্রেপ্তার করা।”

তারেকের বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল, তাকে পলাতক দেখিয়েই তার বিচারে কয়েকটি মামলায় সাজা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাও রয়েছে।

জিয়া-খালেদার ছেলে তারেককে নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সেই অপপ্রচারের লক্ষ্যটা হচ্ছে তারেক রহমানকে খল নায়ক হিসেবে দেখান। তার নেতৃত্বের যোগ্যতা নাই, এ ধরনের একটা কথা প্রচার করতে চায়।

“যারা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারাই এই প্রচারগুলোর সাথে জড়িত হয়েছে। কয়েকটি পত্রিকা, কয়েকটি চ্যানেল। আপনারা যদি তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন, খুব পরিষ্কার প্রমাণিত হবে যে এরা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে। জনগণ কখনোই তাদেরকে ক্ষমা করবে না।”

ফখরুল বলেন, “কুৎসা যতই রটনা করুক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, কোনোটায়ই লাভ হবে না।

“মামলা করেও লাভ হবে না। ৪০ লক্ষ মানুষের্ বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তাতে কি বিএনপিকে ঠেকাতে পেরেছে? ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, তাতে কি ঠেকাতে পেরেছে? কোনো কিছুই ঠেকাতে পারবে না।”

বিএনপির চলমান আন্দোলনে যে ১০ দফা দিয়েছে, তার নেপথ্যে তারেক রহমানই রয়েছেন বলে জানান তিনি।

“তিনি যে ১০ দফা দিয়েছেন, সেটাতে দেখবেন জনগণের দাবির সব আছে। রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, এই সংস্কারের বিষয়ে উনি (তারেক) বলেছেন, নির্বাচনের পরে যারা অংশগ্রহণ করবে, তাদেরকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।”

‘দেশকে নিজেদের জমিদারি মনে করে আওয়ামী লীগ’

আওয়ামী লীগ দেশে ‘জমিদারি শাসন’ চালাচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “এরা (আওয়ামী লীগ) মনে করে, দেশটা তাদের তালুক, এটা তাদের জমিদারি। এটার মালিক তারা। আর আমরা হচ্ছি সমস্ত প্রজা। এভাবে তারা দেশ চালাতে চায়।

“আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৭৫ সালে যখন আওয়ামী লীগ মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে সংসদে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল সেদিন থেকেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করবার, তার জাতীয়তাবাদীকে বিনষ্ট করবার সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।”

আন্দোলনে করে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের আশাও প্রকাশ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এটা (জমিদারি শাসন) দেশের মানুষ আর হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং রাস্তায় নেমে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে নিশ্চয়ই অতিদ্রুত আমরা এই দানবকে সরাব।”

তারেক রহমানকেও দেশে দেখার প্রত্যাশা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আজকে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে, তা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে। কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশনের গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হবে যে নির্বাচনে জনগন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

“সেই সময়ে তারেক রহমান দেশে এসে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করবে এবং বাংলাদেশকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে।”

উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য রাখেন।