“আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে এই ঐক্যে কখনো বিভক্তি সৃষ্টি হয়”, আন্দোলনে থাকা নেতাদের বলেন তিনি।
Published : 12 Jun 2024, 05:33 PM
জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে ‘সরকার পতনের’ আন্দোলনে ভাটা পড়লেও আবার একজোট হয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দ্রুতই তাদের সেই আন্দোলন ‘বেগবান’ হবে বলেও ‘হঠকারিতার প্রয়োজন নেই’ বলেও যুগপৎ আন্দোলনের নেতাদেরকে উদ্দেশ করে বলেছেন তিনি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজনে বুধবার এক মত বিনিময়ে বক্তব্য রাখছিলেন ভোট বর্জন করে সংসদের বাইরে চলে যাওয়া বিরোধী দলটির নেতা।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে যাওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বের হয়ে সাইফুল হক ২০০৪ সালের ১৪ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেন। নানা ঘটনাপ্রবাহে এই দলটি এখন বিএনপির সঙ্গে একই দাবিতে তাদের সঙ্গে মিল রেখেই কর্মসূচি দিচ্ছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স প্রতিষ্ঠার দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের এই আয়োজনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “আমাদের ইতোমধ্যে অনেক অর্জন হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর একেকজনের একেক চিন্তা আছে, কেউ বাম চিন্তার, কেউ ডান চিন্তার, আবার কেউ ‘অতি বাম’ চিন্তার। সবগুলোকে মিলিয়ে আমরা আন্দোলনে একমত হয়েছি।
“অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমি বলি, কোনো রাজনৈতিক দলই এই সরকারের পক্ষে থাকেনি, তাদেরকে সমর্থন করেনি। এটা আন্দোলনের একটা বড় সাফল্য। কেউ নির্বাচনে যায়নি, একমাত্র এই জাতীয় পার্টি ছাড়া।”
নির্বাচন শেষে নতুন সরকার আসার পর রাজপথে সেভাবে বিএনপির কর্মসূচি না থাকলেও আন্দোলন ‘শেষ হয়ে যায়নি’ বলেও জানান ফখরুল। বলেন, “আন্দোলন আমাদের এখনো চলছে, সেই আন্দোলন নিঃসন্দেহে আরও বেগবান হবে খুব শিগগিরই।”
জনগণ এই সরকারকে ‘চায় না’ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। জনগণের ‘না চাওয়ার’ যে ইচ্ছা, আমরা সেটাকে কী করে ইতিবাচক কাজে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে পারি, সেই কাজটি আমাদের করতে হবে।”
আন্দোলন নিয়ে সতর্কভাবে আগানোর তাগিদও দেন ফখরুল। বলেন, “হঠকারিতা করার প্রয়োজন নেই, স্থান নেই। আমরা সবাই আলোচনা করে, সবাই একমত হয়ে আমরা এই সরকারকে সরাতে পারি, কীভাবে আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে পারি, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারি, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা সংগ্রাম করছি, সেই লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে।”
‘ঐক্যবিরোধী কথা নয়’
যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছেন, তাদেরকে বক্তব্য দেওয়ার সময় সতর্ক থাকারও তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “ঐক্য দৃঢ় করার জন্য আপনারা এখানে যারা আছেন, সবাই কাজ করছেন। আমি একটাই অনুরোধ করব, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে এই ঐক্যে কখনো বিভক্তি সৃষ্টি হয়, ঐক্য বিনষ্ট হয়।
“এখন আমাদের প্রধান শত্রুটা হচ্ছে এই সরকার, যারা আমাদের সব কিছুকে ‘ধ্বংস’ করে দিচ্ছে, এই সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।”
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকির বক্তব্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “কৌশল বদলাতে পারে কিন্তু আমাদের ঐক্য এক। আমাদের লক্ষ্য একটাই এই সরকারকে সরাতে হবে।”
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আখন্দ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নূরুল হক নূর, অপর অংশের মিয়া মশিউজ্জামান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের বাবুল বিশ্বাস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালীও বক্তব্য রাখেন।