সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেট বাতিল করা হয়েছে।
Published : 27 Mar 2025, 03:37 PM
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছে আদালত।
ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেটও বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে।
সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি মেয়র হত পারব বা মেয়র হিসেবে শপথ নেব কি না সেটা সম্পূর্ণ দলীয় বিষয়।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন।
নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করে। তারা শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতবছর অগাস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মত ঢাকার দুই মেয়রের পদও শূন্য ঘোষণা করা হয়।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট।
নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ইশরাক।
তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আটজনকে বিবাদী করা হয়েছিল সেখানে।
ইশরাকের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, “মামলায় ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার আবেদন করেছিলাম। আদালত আজ আমাদের পক্ষে রায় দিলেন। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিলেন।”
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি।
মামলার পর ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার নিয়ম থাকলেও ইশরাকের ক্ষেত্রে সময় লাগল পাঁচ বছর।
ওই নির্বাচনে জিতে ঢাকা উত্তরের মেয়র হওয়া আতিকুল ইসলামকে গত বছর ১৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। পরে তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
অন্যদিকে দক্ষিণের সাবেক মেয়র তাপসের কোনো হদিস নেই। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
শাহাদাতের পর ইশরাক
দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে কেবল চট্টগ্রামেই এখন একজন মেয়র দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রামের মেয়র শাহাদাত হোসেনও ওই চেয়ারে বসতে পেরেছেন আদালতের রায় পক্ষে পাওয়ার পর।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের সব সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচিত মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক বসায়।
এরপর ১ অক্টোবর এক মামলার রায়ে শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করে চট্টগ্রামের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ওই মাসেই নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজের পক্ষে রায় পান।
আদালতের রায় অনুযায়ী ইসি সচিবালয় ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এরপর ৩ নভেম্বর শপথ নিয়ে তিনি এখন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন ঢাকা দক্ষিণে ইশরাকের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতে পারে।