মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য

শামস্ রহমানশামস্ রহমান
Published : 18 April 2022, 11:41 AM
Updated : 18 April 2022, 11:41 AM

ভৌগলিকভাবে পলাশী আর বৈদ্যনাথতলা বেশ কাছাকাছি। দুটি স্থানই বাঙালির জীবনে স্মরণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি ব্যর্থতার, অপরটি পূর্ণতার স্থান। পলাশীর আম্রকুঞ্জে বাঙালি হারায় তার স্বাধীনতা, আর বৈদ্যনাথতলার আম্রকুঞ্জে তা ফিরে পাওয়ার শপথ নেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতেই। সে রাতে সর্বশেষ যে দুই ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন, তাদের একজন সাংবাদিক আতাউস সামাদ। বঙ্গবন্ধু সামাদকে বলেন – "I have given you independence. Now go and preserve it।  দলীয় ক্যাডারদের বলা হয়েছে কী করণীয় এবং প্রতিরোধ শুরু হয়ে গ্যাছে"। (Afsan Chowdhury, 1971: Memories, Facts, and words overheard, Strategic Analysis, p. 542, 2021)।

সেই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয়। এই ঘোষণাপত্র বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং অনুমোদন দেয়। এরপর, ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকুঞ্জে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং যুদ্ধকালীন সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করে। তারপর থেকে বৈদ্যনাথতলা 'মুজিবনগর' নামে পরিচিত, আর এ দিনটি পালিত হয় 'মুজিবনগর দিবস' হিসেবে।

নিঃসন্দেহে, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। বিষয়টি বোঝার জন্য মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির মন্তব্যই যথেষ্ট। তিনি মুজিবনগরকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার সাথে তুলনা করেন, যেখানে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। সন্দেহ নেই মোটাদাগে সিনেটর কেনেডির মন্তব্য যথার্থ। তবে একাত্তরের ৩১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিলের মাঝে ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার- সংসদের ভেতরে এবং বাইরে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যে যে প্রস্তাব উত্থাপন, পাশ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার গুরুত্ব বোঝা অপরিহার্য। সেই সাথে ওই একই সময়ে ভারত এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে আলোচনার বিষয়গুলো কীভাবে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয় এবং ত্বরান্বিত করে তা জানাও আবশ্যক। আর তা হলেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য নির্ভুলভাবে  অনুধাবন করা সম্ভব।

২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের পর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভারতের সীমান্ত পার হন মুক্তিযুদ্ধ প্রস্ততি এবং নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে। তাজউদ্দিন আহম্দ ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় পশ্চিম বাংলার সীমান্তে হাজির হন এবং ভারতের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। এদিকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা পৌঁছান শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে যুবলীগের নেতারা । এর পরপরই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ অন্যান্য নেতারা সীমান্তে পৌঁছান। যদিও শুরুতে এটি এতোটা স্পষ্ট ছিল না, তবে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা সর্বদা এই নেতাদের মনের মাঝে কাজ করেছে যা পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের কৌশল হিসেবে গৃহীত হয়। আর তা হলো – 'প্রথমে আত্মরক্ষা, তারপর প্রস্ততি এবং সবশেষে আঘাত'।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিচালনার জন্য প্রধান আবশ্যকীয় শর্ত তিনটি। এক, নেতৃত্বে জনগণের এবং দলের ব্যাপক সমর্থন থাকা। দুই, যুদ্ধ পরিচালনার ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের নিরাপদ আশ্রয়স্থল চূড়ান্ত করা। তিন, সমরাস্ত্রসহ অন্যান্য উপকরণের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা।

১৯৭০ নির্বাচনের মাঝে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে প্রথম শর্তটি নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শর্ত পূরণে প্রয়োজন ছিল ভারত সরকারের সাহায্য- সহযোগিতা। যদিও বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ("পাকিস্তানী শাসকবর্গ যদি কোন সময় পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসী হয়, তবে সেই আপৎকালে আওয়ামী লীগপন্থি যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়ার জন্য শেখ মুজিব ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন", মঈদুল হাসান, মূলধারা'৭১, প. ৭-৮, ১৯৮৬) ভারত সরকার ঢাকাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনার কে সি সেনগুপ্তের মাধ্যমে ১৭ মার্চ নিশ্চিত করে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস ("… (পাকিস্তানি) 'আঘাত যদি নিতান্তই আসে', তবে ভারত আক্রান্ত মানুষের জন্য 'সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা' প্রদান করবে", মঈদুল হাসান, মূলধারা'৭১, প. ১০, ১৯৮৬), তবে তার বাস্তবায়ন ছিল জরুরী।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত দুইটি ওতপ্রোতোভাবে জড়িত। তাজউদ্দীন আহমদ পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তে পৌঁছে ভারতের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। তারপর সময় দ্রুত চলে। এ ব্যাপারে ভারতের প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলোচনার জন্য তাজউদ্দীনের দিল্লিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ইন্দিরা গান্ধী এবং তাজউদ্দীন আহমদের সাথে সাক্ষাৎ হয় ৪ এপ্রিল।

সাক্ষাতে তাজউদ্দীন ঢাকাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাসের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ গঠন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অস্ত্রসস্ত্র বরাদ্দের আবেদন করেন। সেই সাক্ষাতে ইন্দিরা গান্ধী জানতে চান যে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে কিনা। (মঈদুল হাসান, মূলধারা'৭১, প. ১২, ১৯৮৬)। যদি গঠিত হয়ে থাকে তবে " Mrs Gandhi wanted to ascertain whether their (Tajuddin and Aminul Islam) proposition had Mujib's concurrence"। শুধু তাই নয়। "India wanted to ensure that the leadership to fight Pakistan has broad-based support of all the groups and they should be acceptable to the people of East Pakistan" (Smruti Pattanak, The Liberation War of 1971 and India, Strategic Analysis, p. 633, 2021)। সেই সঙ্গে "the ability of Mujibnagar Government to establish their legitimacy in the eyes of the world" (Jairam Ramesh, n. 29, p. 2020) বিষয়টাও দিল্লি নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।

উল্লেখ্য, ইন্দিরা-তাজউদ্দীনের সাক্ষাতের পূর্বেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে ভারত সরকার দুটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয় –

এক, ভারতীয় সংসদে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ বিষয়ক প্রস্তাব পাস। ৩১ মার্চ, ভারতীয় সংসদ একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস করে যেখানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমণের অবর্ণনীয় চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে। প্রস্তাবটি ছিল এমন– "This House calls upon all peoples and Governments of the world to take urgent and constructive steps to prevail upon the Government of Pakistan to put an end immediately to the systematic decimation of people which amounts to genocide . . .. wishes to assure them that their struggle and sacrifices will receive the wholehearted sympathy and support of the people of India' (Lok Sabha Debate, 31 March 1971, https://eparlib.nic.in/bitstream/ 123456789/2258/1/lsd_05_01_31-03-1971.pdf, accessed on 8 April 2022).

শুধু তাই নয়, মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বেই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ওঠে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাংসদ রাজ নারায়ণ এবং বিহারী দাস রাজ্যসভায় বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিষয়টি উথাপন করেন ১ এপ্রিল। সেই একই অধিবেশনে সাংসদ দ্বিজেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত যুক্তি দেন "that there is no point in passing an 'innocuous' Resolution in Parliament and feeling satisfied about it" এবং বলেন – "It is our bounden duty to take up the cause of the East Bengal people as our own" (Rajya Sabha Debate, 1 April 1971, Column 234, at https://rajyasabha.nic.in/Documents/ Official_Debate_Nhindi/Floor/75/ F01.04.1971.pdf, accessed on 8 April 2022).

দুই, যুদ্ধবিদ্ধস্ত মানুষের জন্য এপ্রিলের শুরুতে ভারতের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা এবং বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে ভারতীয় এলাকায় রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা চালাবার অধিকার দান বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

ভারত সরকারের উপরের দুইটি সিদ্ধান্তই মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার জন্য ক্ষেত্রে গুরু্ত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

দিল্লী থেকে ফিরে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তাজউদ্দীন আহমদ কাল বিলম্ব না করে সরকার এবং মন্ত্রিসভা গঠনে মনোনিবেশ করেন। ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ করে। 'মুজিবনগর সরকার' গঠন, আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের পূর্ণ বাস্তবায়নের পথে একটি সঠিক সাংবিধানিক, যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, মুজিবনগর দিবস আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়, যার তাৎপর্য  সুদূরপ্রসারী। এখানে কয়েকটি দিক আলোচিত হলো।

১. বিশ্বের চোখে মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা– বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সম্প্রসারিত পর্যায়, তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। বিশ্ববাসীর কাছে এটাও নিশ্চিত করা যে, পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বের প্রতি সমস্ত জনগোষ্ঠির এবং স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যাপক সমর্থন আছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বিশ্বের চোখে মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা মুজিবনগর সরকার জন্য যেমন অপরিহার্য ছিল, তেমনি ছিল ভারত সরকারের জন্য।

তখন বিশ্ব স্নায়ুযুদ্ধের গভীর সংকটে জর্জরিত। বহু দেশ আমাদের সংগ্রামের সাথে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি সাহায্যের হাত বাড়ালেও, বিশ্বের দুটি বৃহৎ শক্তি যথা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেকোনও পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্য তখন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন-কিসিঞ্জার প্রশাসন ছিল বদ্ধপরিকর। উল্লেখ্য, নিক্সনের কয়েকজন পছন্দের মানুষের মধ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ছিলেন একজন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বাঙালি সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন ছিল ঠিক উল্টো। কিসিঞ্জারের ধারণা ছিল- আওয়ামী লীগ ও বাঙালি রাজনৈতিকভাবে বাম (Gary Bass, The Blood Telegraph, p. 87, 2013)। এ রকম এক পরিস্থিতিতে মুজিবনগর সরকারের যে কোন একটি ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করে নস্যাৎ করতে পারতো যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। যে কারণে নস্যাৎ হয়েছে আইআরএ আন্দোলন, স্পেনের বাস্ক কান্ট্রি আন্দোলন ও তামিল টাইগারদের আন্দোলন।

২. জনযুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা- যদি মুজিবনগর সরকার গঠনে বিলম্বিত হতো, অথবা গঠন করা অসম্ভব হতো, তবে এটা নিশ্চিত যে, কোনো ধরনের কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সারা দেশে গেরিলা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তো। স্মরণ করা দরকার যে, ৭ মার্চের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জেলায় জেলায় 'হাই কমান্ড' গঠিত হয়। ২৫ মার্চের পর তারাই সারাদেশে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলে পাক-বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। জনযুদ্ধকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর তাগিদে তাদের মাঝে সমন্বয় ঘটানো এবং নিয়ন্ত্রণ করার কাজটি ছিল অত্যাবশ্যক। মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে এই কাজটি করা সম্ভব হয় এবং তারাই স্বাধীনতার জনযুদ্ধে মূলধারার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভুত হয়। এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু কিছু উপধারা যোদ্ধাদেরও জন্ম হয়। তারা ছিল মূলত চীনপন্থি। মোটকথা, মুজিবনগর সরকারের অনুপস্থিতিতে সমন্বয়হীন এবং নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা সংগ্রাম বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল যথেষ্ট।

৩. মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন নির্ধারণ এবং দায়িত্ব অর্পণ – ২৫ মার্চের মধ্য রাতে সাধারণ জনগণ, আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী; বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সম্প্রদায়, ছাত্র-যুব নেতা কর্মী; সেই সাথে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যতীত, যারা পাক-বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু ছিল তারা হচ্ছে ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা ও অফিসার।

ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের ওপর আঘাত আসার সাথে সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার ও সেনা বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ নেয়, যা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, তবে অপরিকল্পিত। তাদের সঙ্গবদ্ধ করে একক চেইন-অব-কমান্ডের আওতায় এনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য রণাঙ্গন নির্ধারণ এবং দায়িত্ব অর্পণ করে জনযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার কারণে।

মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি মাইলফলক যা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে 'জীবন ও বৈধতা' দিয়েছে। জাতির পিতার কারাবন্দি অবস্থায় তারই দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যে মহান নেতারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।