আধুনিকতার দুয়ার খোলা শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিন

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির আচরণের আধুনিক রুচির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। বাঙালি তার জাতির পিতার দেখানো পথে হাঁটলেই আধুনিকতার সকল দুয়ার খোলা পাবে, তীর্থে পৌঁছে যাবে।

আনিসুর রহমানআনিসুর রহমান
Published : 17 March 2023, 04:59 PM
Updated : 17 March 2023, 04:59 PM

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে ‘কলা অনুষদ বক্তৃতামালা’র অংশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু: আধুনিকতার দুয়ার খোলা শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলাম আমি। অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছিরের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধটি না পড়ে এর নির্যাস থেকে আলাপচারিতা বা গল্প বলার আদলে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলাম বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে। তবে আমার কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় ছিল অতিথি মাশুরা হোসেনের কথা শোনা। কেননা, আমি ইতোপূর্বে জেনে এসেছি মাশুরা হোসেন হচ্ছেন জাতির পিতার পরিবারের অন্দরের একজন মানুষ। যিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন, জেনেছেন। যার অনেক কিছুই আমাদের কাছে আজও অজানা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে শেখ কামাল এবং সুলতানা কামালের সহপাঠী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ওই সময়ের অনেক কথা, ইতিহাসের অনেক গল্প আমাদের কাছে অজানা। অথচ এই কথাগুলো, এই সত্যগুলো আমাদের জানার দরকার ছিল আরও বহু আগে।

এই পর্যায়ে আমার উপস্থাপিত পর্যবেক্ষণ নিয়ে কিছু কথা বলে নেব।

প্রথমেই আমি ‘আধুনিকতা’ শব্দটির সাদামাটা মানে খোলসা করে নিতে চাই। ‘আধুনিকতা’ হচ্ছে ব্যক্তির অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেয়া, মর্যাদা দেয়া। এই ব্যক্তি বলতে পরিবার, সমাজ ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্ব বা অবস্থানকে বোঝায়। এখন প্রশ্ন ১৯৭১-এর আগে বাঙালি জাতির বা বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তিমানুষের ওই স্বীকৃতি ও মর্যাদা কি ছিল? বাঙালির আত্মপরিচয় বারবার ভুলিয়ে দেবার মহড়া চলেছে হাজার বছর ধরে। বাঙালির নিজেদের দেশ থাকলেও রাষ্ট্র ছিল না, নিজেদের অনেক কিছু থাকলেও নিজস্বতা ছিল না, মর্যাদা তো সুদূর পরাহত।

১৯৭১-এ, এই প্রথম বাংলাদেশের মানুষ আর বাঙালি জাতি আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পেল। এর রূপকার হলেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের রাষ্ট্র হলো। এরপর দৃষ্টি দেব আমাদের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোয় বঙ্গবন্ধু কীভাবে আধুনিকতার দুয়ারগুলো একে একে খুলেছিলেন সেই দিকে।

এই পর্যায়ে ছোট একটা তুলনা তুলে ধরতে চাই। আমার জন্ম টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিগরবাইদ গ্রামে। ১৯৭১-এর পূর্বে আমাদের গ্রাম থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। আমার বাবা বিশ্যবিদ্যালয় পড়া তো দূরের কথা চিন্তা করার সুযোগ এবং ফুরসৎ কোনোটাই পাননি।

স্বাধীনতার পরের প্রজন্মের একজন আমি সেই জঙ্গলঘেরা পাহাড়ি গ্রাম থেকে উঠে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এরকম উদাহরণ বা তুলনা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই খুঁজে পাওয়া যাবে। স্বাধীনতার পূর্বে মধুপুর উপজেলায় কোনো কলেজ ছিল না, এখন মহাবিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার। এরকম তুলনা চলে অগ্রগতির প্রতিটি সূচকে যেমন স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদ্যুতায়নসহ প্ৰায় সর্বত্র।

কথাসাহিত্যে আধুনিকতার গোড়াপত্তনকারী হিসেবে পশ্চিমা দুনিয়ায় ফ্রান্স কাফকাকে, নাটকে হেনরিক ইবসেনকে এবং কবিতায় টি এস এলিয়টকে মনে করা হয়। রাজনীতির ইতিহাসে অনেক নাম নেবেন অনেকেই। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচারে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টান্ত বিবেচনায় নিলে জাতিরাষ্ট্রভিত্তিক আধুনিক রাজনীতির রূপকার হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচনায় নিতেই হবে। একইসাথে একজন পরিশীলিত ব্যক্তিমানুষ কীভাবে আলোকসঞ্চারী পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন, যা আধুনিকতার মানদণ্ডে অভাবনীয় মনে হয়, এই দিকটায় আলোকপাত করতে চাই। সারা দুনিয়া ঘেঁটে এরকম উদাহরণ কি খুব একটা পাওয়া যাবে?

বঙ্গবন্ধু কেবল একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি ছিলেন না। তিনি আধুনিক রুচিসম্পন্ন একটি পরিবারেরও কাণ্ডারি ছিলেন। এরকম পরিবারের বড় শর্ত থাকে সকলকে মর্যাদার আসন দেয়া। বিশেষ করে নারী ও শিশুকে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবস্থান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তি বঙ্গমাতার স্বতঃস্ফূর্ত সার্বভৌম অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত এমনকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও বঙ্গমাতার সায় ছাড়া বঙ্গবন্ধু নিতেন না। যার প্রতিফলন ছিল তার রাজনৌতিক জীবনের শুরু থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

মহামতি গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার কল্পরাষ্ট্র থেকে কবিদের নির্বাসন দিয়েছিলেন। কেননা কবিগণ, প্রকৃত কবিগণ (হাল আমলে আমাদের দেশের পদধারী, ডিগ্রিধারী, ডক্টর তকমাধারী ও পুরস্কারলোভী ধান্দাবাজ কবিরা এর বাইরে) সময় ও মানুষের সমমর্যাদায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শ্রেণি ভেদাভেদ দরকার। জমিনে আর মাঠে কাজ করবে একদল কৃষক, একদল ব্যবসা করবে, একদল স্যুটেড-বুটেড-নোটেড আমলা থাকবে প্রশাসনে কেরানিগিরি করার জন্য, এরকম। মহাত্মা গান্ধীও রাষ্ট্রের এমন চিত্রের কথা বলেছেন। এই শ্রেণিকরণের চিত্র এমনকি যিশুখ্রিস্টের জন্মের পূর্বে ভারতবর্ষে মৌর্যযুগ থেকেই বিদ্যমান।

শ্রেণিকরণের ঊর্ধ্বে উঠে বঙ্গবন্ধু তার আধুনিক রাষ্ট্রধারণায়, তার নৌকায়, তার রাষ্ট্রে সবাইকে ঠাঁই দিয়েছেন। যদিও কবিগুরু বলে গেছেন ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোট সে তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’। এই তরী তো সেই তরী, পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ নামের তরী, বঙ্গবন্ধুর নৌকা। এখন কৃষকের ছেলে, দলিত পরিবারের ছেলেও শিক্ষক, অধ্যাপক, আমলা বা মন্ত্রী-এমপি হতে বাধা নেই।

কবিদের কথাই বলি এবার। স্বাধীনতার পরপরই তিনি বঙ্গবন্ধু লেখক ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন। এই ট্রাস্ট নিয়ে কথা বললেই পরিষ্কার হবে এই ধারণা তিনি কোথায় পেলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে, যখন শিল্প সংস্কৃতি জীবন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিবিধ এলাকায় আধুনিক ধারণার উদ্ভব হতে শুরু করে বিশেষ করে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে, তরুণ বঙ্গবন্ধু ওই সময়ে ১৯৫৬ সালে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম সফর করেছিলেন। লেখক তহবিলের এই ধারণা পরে গণতান্ত্রিক অনেক দেশে প্রবর্তিত হয়েছে। যদিও বঙ্গবন্ধুর চালু করা লেখক ট্রাস্ট ১৯৭৫-এর অগাস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর অকার্যকর হয়ে যায়। যা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখল না, আওয়ামী লীগ টানা প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পরও।

বঙ্গবন্ধু শুরুতেই দুনিয়ার আধুনিকতম একটি সংবিধান দিলেন। যার ঘোষণায় বলা আছে, ‘... আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা– যেখানে সকল নাগরিকের আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা করলেন বাংলা। জোটনিরপেক্ষ আধুনিক পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তন করলেন। যুক্তিনির্ভর রাজনীতি ও দেশ পরিচালনার বন্দোবস্ত করলেন। যার ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১-এর ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যেই। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব’।

তিনি আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দুয়ার খুলে দেবার জন্যে ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় সদস্যপদ নিলেন ঠিক। কিন্তু আলজেরিয়ার সম্মেলনে সৌদি বাদশার বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণার আহবানে ঠিক ঠিক মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন, আপনার দেশ সৌদি আরবও তো ইসলামী প্রজাতন্ত্র নয়, সেটা তো রাজতন্ত্র। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের টাকার কুমির বাদশাদের টনক নড়ে।

বঙ্গবন্ধুর পরিবার ছিল আলোকসঞ্চারী। আর এই আলোকসঞ্চারণে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার একে অপরের প্রতি সায় ছিল সবসময়। পরিবারে সংস্কৃতি ও খেলাধুলা ও সহপাঠ্যক্রমিক চর্চা ছিল দৃষ্টান্তমূলক। তা যেমন শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং সর্বশেষ শেখ রাসেল পর্যন্ত অবারিত ছিল। এমনকি রাসেলের টুঙ্গিপাড়ার খেলার সঙ্গীদের জন্য বিশেষ করে তার শিশু বাহিনীর কুচকাওয়াজের জন্য বঙ্গমাতা ঢাকা থেকে পোশাক বানিয়ে টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যেতেন। শেখ হাসিনার লেখা থেকে এরকম গল্প আমরা জানতে পারি। এই পরিবারে একটা পারিবারিক গ্রন্থাগারও ছিল। ছিল ধর্মের চর্চা। কিন্তু ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ছিল না।

বঙ্গবন্ধু তার কথা ও কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র ও সমাজ সবার। রাষ্ট্র দাঁড় করলেন গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে। সমাজতন্ত্রভিত্তিক প্রশাসন ও অর্থনীতি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলেন। আর রাষ্ট্রের পরিচয় জাতিভিত্তিক, বাঙালি জাতির, যে রাষ্ট্রে অন্য আদিবাসীরাও সমান অধিকার, ক্ষেত্র বিশেষে অগ্রাধিকার লাভ করবে। সংবিধানে তার নিশ্চয়তা ও নির্ভয় দিয়ে রাখলেন।

তিনি দুনিয়ার আধুনিকতম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেন বিজ্ঞানী কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে। প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে নিলেন। মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ দিলেন। সকল স্তরে শিক্ষা অবৈতনিক করলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করলেন। তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদকে শিক্ষাসচিব করে দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে ঔপনিববেশিক ধ্যানধারণার মূলোৎপাটনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই শিক্ষাবিদরা হলেন কবীর চৌধুরী, এ আর মল্লিক, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন। এর মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসনকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করার জন্যে চেষ্টা চালালেন। আমলারা এই নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিযোগ জানাতে হাজির হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমলাদের অভিযোগকে পাত্তা দেননি।

সংস্কৃতির বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্যে শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা গঠন করলেন। ব্যাংক ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করলেন, বৈদেশিক ব্যাংকিংও চালু করলেন। কৃষি উন্নয়নের জন্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা করলেন, পল্লীর দোরগোড়ায় উন্নয়নের যোগসূত্র স্থাপন করার জন্যে চালু করলেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, চালু করলেন গ্রাম পর্যন্ত সমবায় সমিতি।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বা বিআরডিবি গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ একটি সরকারি বোর্ড এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম সরকারি কর্মসূচিতে জড়িত প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। যা ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে পরিবর্তিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিলেন। ভারত যেখানে একটি রাজনৈতিক ঐক্য, তার বিপরীতে বাংলাদেশকে দাঁড় করালেন একটি সাংস্কৃতিক ঐক্য হিসেবে। এরকম ঐক্য যে কত আধুনিক এবং দরকারি, তা আজ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, লিবিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষেরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু কূপমণ্ডুক অনাধুনিক ধর্ম ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে দেশকে নিরাপদ করার জন্যে শুরুতেই প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

শুরু থেকেই প্রবর্তন করলেন শিশু ও নারীবান্ধব নীতি। তিনি বাঙালির আধুনিক রুচি নির্মাণেরও রূপকার, কি তা পোশাকে, চলনে-বলনে, যুক্তি ও তর্কে, সংগীতে, খাবার-দাবারসহ জীবনের সমূহ ক্ষেত্রে।

এই পর্যায়ে একটি গল্প বলে তারপর মাশুরা হোসেনের প্রদত্ত বক্তৃতার ওপর আলোকপাত করে লেখাটির ইতি টানব।

১৯২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্যে আইরিশ নাট্যকার বার্নার্ড শ-এর নাম ঘোষণা করা হলো। তিনি বেঁকে বসলেন, পুরস্কার নেবেন না। যা সুইডেনের আভিজাত্যে বড় একটি ধাক্কা। শেষতক দেশটি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাল তাকে রাজি করানোর জন্য। তিনি পুরস্কার নিতে রাজি হলেন কয়েকটি শর্তে। এর মধ্যে ছিল পুরস্কারের টাকার একটি অংশ দিয়ে একটি ফাউন্ডেশন করবেন, যার মাধ্যমে সুইডিশ সাহিত্য ইংরেজিতে অনূদিত হবে, আরও একটি ফাউন্ডেশন করবেন যার মাধ্যমে আইরিশদের আচরণের শিক্ষা দেয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির আচরণের আধুনিক রুচির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। বাঙালি তার জাতির পিতার দেখানো পথে হাঁটলেই আধুনিকতার সকল দুয়ার খোলা পাবে, তীর্থে পৌঁছে যাবে।

মাশুরা হোসেনের বক্তৃতা প্রসঙ্গে আসি এবার। তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবার নিয়ে অনেক অজানা এবং তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। যা কোনো বই-পুস্তক, দলিল-দস্তাবেজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি শেখ কামালকে ঘিরে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে লেখার সমাপ্তি টানছি।

একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধুপুর গড়ে বনভোজনে গিয়েছেন শেখ কামাল, মাশুরা হোসেনসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশ স্বাধীন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার ছেলে আছেন বনভোজনে। শেষটায় খাবারের সংকট হলো। বাবুর্চিরা এবং শেখ কামাল ছাড়া সবাই খাবার পেলেন। মাশুরা হোসেন খেয়াল করলেন। তিনি নিজের খাবার থেকে মাংসের একটি টুকরো না খেয়ে কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে তল্পির মধ্যে রাখলেন। মধুপুর থেকে গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করল। পথিমধ্যে মাশুরা হোসেন মাংসের টুকরোটি শেখ কামালকে খাবার জন্যে সাধলেন, বললেন, ‘কামাল ভাই, আপনি তো কিছু খাননি, এইটুকু খেয়ে কিছুটা ক্ষুধা নিবারণ করেন।’ শেখ কামালের জবাব, ‘বাবুর্চিদের অভুক্ত রেখে আমি কিছু খেতে পারি না, আমি খাব না।’