সমাজে প্রচলিত থাকুক বা না থাকুক, রাষ্ট্রীয় আইনে কোনোকিছু সিদ্ধ থাকা আর না থাকার মধ্যে বহু ফারাক। ধর্মের ভয়ের চেয়ে আইনের ভয় অনেক সময় বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। সতীদাহের মতন কুপ্রথা রদ করার জন্যও আইনের প্রয়োজন হয়েছিলো।
Published : 12 Jun 2023, 06:50 PM
প্রায় তেইশ বছর পর সে ফিরে এসেছে তার নানাবাড়ি, মায়ের বাপের বাড়ি, যেখান থেকে তার মাকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো, তেইশ বছর আগে, যখন সে আর তার যমজ ভাই ছিল আট বছর বয়সী। বের করে দিয়েছিলেন তাদের একমাত্র মামা, যিনি অক্সফোর্ড ফেরত এবং নানার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। সেই মামা এখন আর থাকেন না পুরোনো আমলের এই বাড়িতে। নানিও মারা গেছেন কিছুদিন আগে। নানার এক অবিবাহিত ছোট বোন, মায়ের ছোট ফুফু আর তার গৃহকর্মী এখন এবাড়ির বাসিন্দা। সে এসেছে তার যমজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে, যে এতদিন ছিল তাদের বাবার কাছে। কিছুদিন আগে বাবা চিঠি লিখে অপারগতা জানিয়ে বলেছেন ছেলেকে আর প্রতিপালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, তিনি ছেলেটিকে ফেরত পাঠালেন প্রাক্তন স্ত্রী, যিনি বর্তমানে মৃত, সেই নারীর বাপের বাড়িতে, যেখানে আইনত তার কোনো অধিকারই নেই, অবধারিতভাবে নেই তার সন্তানদেরও। সে নানাবাড়ির ছাদে লাগানো অতিকায় ডিশ এনটেনাটার দিকে তাকিয়ে ভাবে, সে আর তার ভাই তো এই বড় ডিশটার মধ্যেই ঘুমাতে পারে, মায়ের গর্ভে যেমন গুটিসুটি মেরে ছিল একসঙ্গে!
অরুন্ধতী রয়ের `দ্য গড অব স্মল থিংস’ পড়েছেন যাঁরা, তাঁরা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কোন গল্প বলছি। এই গল্পের মূলে আছে রাহেল আর এস্থা নামের যমজ দুটি ভাইবোন, যাদের প্রায়শই ওমনিশ্যান্ট ন্যারেটর, যাকে আমরা বাংলায় অন্তর্যামী বা সর্বজ্ঞ কথক বলে থাকি, তুলনা করেছেন রূপকথার দুই অবাঞ্ছিত অসহায় শিশুচরিত্র হ্যান্সেল আর গ্রেটেলের সঙ্গে, সৎমায়ের ষড়যন্ত্রে নিজের বাবাই যাদের ফেলে দিয়েছিল—আর আছে তাদের মা আম্মু, যিনি বাপের বাড়িতে যথেষ্ট পড়ালেখার সুযোগ পাননি, মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে, তারচেয়ে ছেলেকে টাকা-পয়সা পাঠিয়ে অক্সফোর্ডে পড়ানো ভালো মনে করেছিলেন আধিপত্যবাদী নানা। সিরিয়ান খ্রিষ্টানরা সাংস্কৃতিকভাবে আর শিক্ষাদীক্ষায় খানিকটা এগিয়ে থাকলেও বিয়েশাদির ব্যাপারে টিপিক্যাল ইন্ডিয়ান, মোটা যৌতুকের যোগান না থাকলে পাত্র পাওয়াও মুশকিল। আর বাপের পকেট তো ফাঁকা ছেলেকে অক্সফোর্ডে পড়িয়েই— আম্মু নিজেই পছন্দ করে এক বাঙালি বিয়ে করেছিলেন, মদ্যপ স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাপের বাড়িতে দুই শিশু নিয়ে আশ্রিত থাকতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু সে থাকা বড় গ্লানির, বড় লজ্জার। বাচ্চাগুলো খাটে উঠে লাফালে বাড়ির ঝি পর্যন্ত ধমক দিতো, “নিজের বাপের বাড়ি গিয়ে যত ইচ্ছা খাট ভাঙো গিয়ে”।
এস্থা আর রাহেলকেও শিখিয়েছিলেন মামা চাকো, আম্মু ডাজন্ট হ্যাভ আ লোকাস স্ট্যান্ড আই। তোদের মায়ের কোনো আইনগত অধিকার নেই। আইনের অধিকার এমনই অধিকার যে তা না থাকলে নিজের একমাত্র বোনকে চুলের মুঠি ধরে “বের হয়ে যা ‘আমার’ বাড়ি থেকে” বলে বের করে দেওয়া যায়।
অরুন্ধতী রয়ের মা মেরি রয় হচ্ছেন সেই নারী যিনি তাঁর আচার ফ্যাক্টরির মালিক বড়ভাই জর্জ আইজাকের বিরুদ্ধে মামলা করে পিতার সম্পত্তিতে নিজের অধিকার চেয়ে ভারতীয় আইনের ইতিহাসে এক অমর ব্যক্তিত্ব হয়ে আছেন। পি ভি আইজাক এবং সুসি আইজাকের চতুর্থ সন্তান মেরি রয় ১৯৮৩ সালে কেরালার আদালতে ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন, তিন বছর পর ১৯৮৬ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সিরিয়ান খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন যা কন্যা সন্তানকে বাবার সম্পত্তিতে অধিকার দিতো না, তা বিলুপ্ত হয়। কেরালার সিরিয়ান খ্রিষ্টান পরিবারের মেয়েরা মেরি রয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ নিশ্চয়ই, যদিও এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন সমাজসেবার উদ্দেশ্যে তিনি একাজ করেননি। বৈষম্যমূলক আইন দেখে তিনি নিজেই খুব রেগে গিয়েছিলেন বলে মামলাটা করেছিলেন।
আমাদের দেশের আইনে খ্রিষ্টান কন্যা সন্তান বাবার সম্পত্তিতে অধিকার পান ঠিক ভাইয়ের সমান, মুসলিম পরিবারে ভাইয়ের অর্ধেক পান, আর হিন্দু মেয়েরা একেবারেই পান না। খ্রিষ্টান পরিবারগুলোতে আইন মেনে কন্যাকে সম্পত্তির ভাগ দেওয়া সামাজিকভাবে প্রচলিত আছে কিনা সে সম্পর্কে আমার মোটেও কোনো ধারণা নেই। তবে মুসলিম আইনে কন্যা সন্তানের সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার থাকলে তা দেওয়ার বা নেওয়ার চর্চা মুসলিম পরিবারগুলোতে একেবারেই যে নেই সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। একবার চরপাড়া বাজারে এক পানের আড়তদার সঙ্গের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আফসোস করে বলছিলেন যে তাঁর এক বোন বাবার সম্পত্তিতে ওয়ারিশ চাইছে।
খুব বিনয়ের সঙ্গে তাঁদের গল্পে অনুপ্রবেশ করে বললাম, “ভাইজান, এই সম্পত্তি তো উনার অধিকার, ইসলাম ধর্মের শরিয়ত উনারে এই অধিকার দিছেন। তাইলে আপনে উনারে সেইটা না দেওয়া কে?” উনি আমার চেয়ে বেশি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “আপা, আমার চাইর বইন, সবেরে কিছু ল্যাখাপড়া করাইতে হইছে, বিয়া দিতে হইছে, তখন খরচ হইছে, হের উপরে যুদি হেরা সম্পত্তির ওয়ারিশও নেয় তাইলে ক্যামনে?” সঙ্গের ব্যবসায়ী খুশি হলেন আমি আমার প্রশ্নের মোক্ষম জবাব পেয়েছি ভেবে। কিন্তু এই উছিলাধর্মী যুক্তি খণ্ডনের জন্য আরও বড় যুক্তি শরিয়তেই দেওয়া আছে। পিতার অবর্তমানে পরিবারের কর্তা হিসেবে ভাইদের উপর নাবালেগ ভাইবোনেদের প্রতিপালনের দায়িত্ব বর্তায়, পুরুষসন্তানের দায়িত্ব বেশি বলেই সে সম্পত্তিতে বোনের দ্বিগুণ অংশ পাবে। পিতার মৃত্যুর সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক যারা ছিলেন তাঁরা বালেগ হবার পর সম্পত্তি আইন মেনে বণ্টন করে দেওয়ার উপদেশও দেওয়া হয়েছে। বড় ভাই যদি বাবার অবণ্টিত সম্পত্তি থেকে নিজের সকল খরচ (বিবাহ করার খরচসহ) নিতে পারেন তাহলে তা বোনেরও নিতে পারার কথা। বয়স পঁয়ষট্টি হবার পর মামাদের সঙ্গে দর কষাকষি করার জন্য দুই জোয়ান ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ির সম্পদের অংশ চাইতে আসবার কথা নয় কোনো মুসলিম নারীর।
অনেক মুসলিম পুরুষকেই বলতে শুনবেন, “আমার বোন/রা স্বেচ্ছায় নিজের/দের সম্পত্তির ভাগ ছেড়ে দিয়েছে”। সই সাক্ষর করা স্ট্যাম্পে লেখা ডিসক্লেইমার দেখতে চাইলে খুব সম্ভবনা আছে অধিকাংশ ভাইই আলমারির ড্রয়ার থেকে তেমন কাগজ উৎপন্ন করতে পারবেন না। বোনেরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন নাকি তাঁদের স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার মতন পরিস্থিতি পারিবারিকভাবে উদ্ভাবন করা হয় সেই প্রশ্ন করার অবকাশ পুরোপুরিই আছে বলে আমি মনে করি। পিতার সম্পদে অংশীদারত্ব দাবি করার পুরো ব্যাপারটিকে নিরুৎসাহিত করা একটি সামাজিক চর্চা।
আমাদের এলাকায় একটি প্রবাদ আছে, “যম-জামাই-ভাইগ্না, কভু না হয় আপনা”। এই লোকপ্রবাদের শানে নজুল হল, যম আপনার জান কবজ করবেই, জামাই আপনার মেয়েকে নিয়ে যাবেই, ভাগ্নে এক সময় আপনার সম্পত্তিতে মায়ের ভাগটুকু দাবি করতে আসবেই। তার মানে সম্পত্তির ভাগ বোন চাননি ‘পর হয়ে যাওয়া’র ভয়ে, ভাগ্নেদের সেই ভয় নেই। বোনেরা ভাগ নিয়ে গেলে সে পর হয়ে যাবে, নিজের অধিকার চাইলে এবং নিলে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাবে- সামাজিকভাবে এটাই স্বীকৃত। কোনো পিতামাতার পুত্রসন্তান না থাকলে সমস্যা আরও জটিল রূপ ধারণ করে। ভাইহীন বোনেদের লড়াই করতে হয় চাচাতো ভাইদের সঙ্গে, যা কিনা আমাদের প্রজন্মের অনেকের জীবনের জন্যই সত্যি। আমাদের বাবামায়ের জেনারেশনের অনেকেই পুত্রসন্তানের আশায় প্রজননক্ষম থাকা পর্যন্ত সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া জারি না রেখে দুটি কন্যাকেই ঠিকভাবে লালন করা এবং লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের রেখে যাওয়া স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি যেন তাঁর কন্যারা পান সেটই নিশ্চিত করার জন্য বাবাকে উইল বা ‘হিবা’ করে রেখে যেতে হয়। সেটিও কম ঝামেলার ব্যাপার নয়।
সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে হিন্দু আইন সংশোধন করা হয়েছে, এমন একটা কথা কিছুদিন আগে শুনেছিলাম। কিন্তু ইদানিং জানতে পারলাম হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ এই সংশোধন বয়কট করার দাবি জানাচ্ছেন। এতে ধর্ম ভেসে যাবে বলে তাঁরা ভাবছেন।
বিধবাবিবাহ চালু করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন ব্রিটিশ সরকারকে আইন প্রণয়ন করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, তখনও একটি অংশ তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেন। জনসমর্থনের প্রমাণ হিসেবে ৯৮৬ জনের সাক্ষর সম্বলিত আবেদন পেশ করেন বিদ্যাসাগর। ওদিকে বিধবাবিবাহের বিপক্ষে শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্তদেব ৩৬ হাজার ৭৬৩ জনের সাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারপরেও হিন্দু বিধবা নারীর পুনর্বিবাহের আইন চালু হয়েছিলো।
আইন সংস্কারের বিপক্ষে থাকা হিন্দু জনগোষ্ঠীকে এটা মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বিবাহের সময় যৌতুক নেওয়া এবং দেওয়া দুটিই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ধর্মের দোহাই দিয়ে যদি তাঁরা পিতার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের উত্তরাধিকারে বাধা দেন, তাহলে ‘ডাউরি প্রহিবিশন অ্যাক্টে’র ব্যাপারেও তাঁদের বিরোধিতা করা উচিত। কন্যাসন্তানকে বিবাহের সময় যৌতুক দেওয়া হিন্দুধর্মমতে অন্যায় তো নয়ই, বরং প্রচলিত। প্রাচীনকাল থেকেই একে বলা হতো স্ত্রীধন যা বিবাহের সময় কন্যাকে দিয়ে দেওয়া হয়। শুদ্ধবাদী হিন্দুদের ধর্মমতে কন্যাসন্তানকে কিছু সম্পত্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে আইন চালু করার সময় কেন তাঁদের মনে হল না যে এটি তাঁদের ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করছে? শাস্ত্র অনুযায়ী স্ত্রীধন দেওয়া রাষ্ট্র যখন বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে তখন ধর্মরক্ষাকারীরা কোথায় ছিলেন?
শুরুতে যে গল্পটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, ‘দ্য গড অব স্মল থিংসে’র আম্মুর মতন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নারী বাবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত হতেন যদি ২০০৫ সালে ভারতে হিন্দু নারীর পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করা না হতো। এই আইন চালু হয়েও সব নারী যে বাবার সম্পত্তির অংশ পান তা কিন্তু নয়। প্রায় সময়ই সম্পত্তির অংশ চাইতে গেলে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্তা এমনকি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে হয় হিন্দু নারীকে। বিশেষত প্রান্তিক ও স্বল্পশিক্ষিত নারীদের আইনের সাহায্য নেওয়ার সামর্থ্য অনেক সময়ই থাকে না। তারপরেও একথাটি উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করলাম, কেননা ১৯৩৭ সালের যে আইন হিন্দু নারীকে স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দিয়েছিল সেটিই পিতার সম্পত্তিতে বিবাহিত/অববাহিত/বিধবা কন্যার পিতার সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি, ১৯৫৬ সালের সংশোধনেও এটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেজন্য ভারতের হিন্দু নারীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও পঞ্চাশ বছর। বাংলাদেশে এই আইন সংস্করণের চেষ্টা চলছে গত তিরিশ বছর ধরে। এই সময়ে এসে শাস্ত্র বা ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকা বাংলাদেশী হিন্দুদের এই শ্রেণির শুভবুদ্ধির উদয় কবে হবে, কিংবা আদৌ হবে কিনা তা এখন দেখার বিষয়।
সমাজে প্রচলিত থাকুক বা না থাকুক, রাষ্ট্রীয় আইনে কোনকিছু সিদ্ধ থাকা আর না থাকার মধ্যে বহু ফারাক। ধর্মের ভয়ের চেয়ে আইনের ভয় অনেক সময় বেশি হয়ে থাকে। সতীদাহের মতন কুপ্রথা রদ করার জন্যেও আইনের প্রয়োজন হয়েছিলো। কে জানে, রাজা রামমোহন রায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই আইন প্রচলন না করলে হয়তো এখনো ধর্ম আর শাস্ত্রের নামে বিধবা নারীকে পুড়িয়ে মারা হতো এই জনপদে।
পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই কন্যা সন্তানকে সম্পত্তি না দেওয়ার চর্চা জারি আছে। ভারতীয় অ্যাক্টিভিস্ট কমলা ভাসিন ‘প্রপার্টি ফর হার’ শীর্ষক একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন চালু করেছিলেন। এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য পিতামাতা ও ভাইদেরকে কন্যাসন্তানের অংশের সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং নারীকে পিতা-মাতার সম্পদের অংশ দাবি করতে উৎসাহিত করা। ভালো মেয়েরা বাপের সম্পত্তিতে অধিকার চায় না—এহেন সামাজিক ট্যাবু ভাঙাও এই ক্যাম্পেইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। মোদ্দা কথা এটা সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের আন্দোলন।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক ফিলিপ কোহেন জানাচ্ছেন, ১৯৭০ সাল থেকে প্রচলিত হওয়া পরিসংখ্যান, যা দেখায় যে পৃথিবীর মোট সম্পদের মাত্র ১ শতাংশের মালিক নারী, এই হিসাব বর্তমানে সত্যি নয়, এটি একটি ফেমিনিস্ট মিথ। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে সত্যি, কিন্তু শতকরা অংশটা কোনোমতেই ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। এই অসাম্যের কারণ ধর্মসহ নানান প্রতিষ্ঠান দ্বারা নারীকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পুরুষতান্ত্রিক চর্চা। এই চর্চার অবসান দরকার।