বর্তমানে এই বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে চলা যানবহনের সঙ্গে জলবায়ু রক্ষার একটা সম্পর্ক দেখানো হচ্ছে। এই লোকদেখানো সম্পর্ক কিভাবে একটা ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে এবং তার প্রসার ঘটছে তা নিয়েই এই আলোচনা।
Published : 20 Jun 2023, 02:47 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের কথা না শোনা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত হাতে গোনা হবার কথা। বিগত দশকেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তাই নতুন করে বলার হয়তো কিছু নেই।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা, মানে বাংলাদেশীরা ডুবে যাব—এমন একটা ন্যারেটিভ বহুল চর্চিত। এই ডুবে যাবার কারণ হিসেবে বলা হয় সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশসহ সমুদ্রপৃষ্ঠের একদম কাছাকাছি উচ্চতার এমন দেশগুলো পানির নিচে চলে যাবে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা যত বাড়বে, ডুবে বা তলিয়ে যাওয়া এলাকার পরিমাণও তত বাড়বে। অতি সাধারণভাবে ধারণা করা হলে ভাবা যেতেই পারে কতটুকুইবা বাড়বে। এই কতটুকু পরিমাপের হিসেবে আমরা আজ যাব না। যাব আমাদের গতানুগতিক ধারণাগুলো কী, আর আমরা সমষ্টিগতভাবে কী করছি, তা নিয়ে আলোচনায়।
বহুল চর্চিত এই ন্যারেটিভ একদম ভুল নয়, কিন্তু এটাই যে একমাত্র ভবিতব্য, তা-ও নয়। এই ন্যারেটিভটা ধরতে হলে আমাদের ছোটবেলার ভূগোল পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উদাহরণ মনে করে দেখা যেতে পারে। হয়তো অনেকের মনে আছে একটা প্রশ্ন খুব কমন ছিল—আবহাওয়া আর জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য কি? তখনই যদি আমরা এর ব্যাপ্তি বা গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতাম, তবে বর্তমানটা আমাদের জন্য অনেকটা সহজ হতো। একদম সরল করে বলা হলে আবহাওয়া হলো আকাশে মেঘ দেখা গেলে আমরা ধারণা করতে পারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা আছে। জলবায়ু হলো কোনো এলাকার একটা দীর্ঘ সময়ের আবহওয়ার গড় হিসাব। আরেকটু ভিন্নভাবে দেখা হলে বলা যায়, জলবায়ুর সঙ্গে সময়ের একটা সম্পর্ক আছে। এই সময় ৩০ বছর বা তার বেশিও হতে পারে। চট করে আবহওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারলেও জলবায়ু নিয়ে এমন পূর্বাভাস দেওয়ার সক্ষমতা এতটা নয়। কেননা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে ধীরে, লম্বা সময় ধরে। এর মানে দাঁড়ায়—আমরা মানে সারা পৃথিবীর মানুষ এবং আমাদের নেতারা যতদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ড্রাম পেটাচ্ছেন ততদিনে জলবায়ু আরও পরিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা ঠিক কেবল এমন নয়, যে যা হওয়ার তা অনেক আগে হয়ে গেছে, আর হবে না বা হচ্ছে না। এটা একটা ঘটমান বর্তমান। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটমান বাস্তবতা, সবসময়ই ঘটছে, ঘটবে।
কেন এই কথাগুলো বলা? কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হলো—টাকা।এটা অবশ্য সরল করে বলা।কিন্তু এর ব্যাখ্যা আমরা নিজেরাই দিতে পারি। ক্রেতানির্ভর অর্থনীতি বা বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থনীতি যে ভাষাতেই বলা হোক, মূল বিষয় হলো টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া তার একটা উদাহরণ মাত্র। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো যোগসূত্র জুড়তে পারলাম না। এর কারণও আছে। কোনো যোগসূত্র যেন না আসে তার জন্য আমরা যারা বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাদের রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য নানা ধরনের ক্যাটালিস্ট তৈরি করি। যেমন ধরুন পরিবেশবান্ধব ব্যবসা, পরিবেশবান্ধব ভবন, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ইত্যাদি। ঢাকা শহরে পরিবেশবান্ধব ভবন বা বিল্ডিংএর সংখ্যা ১৯৪ টি। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।এই ভবনগুলো দূর থেকে দেখলে দেখা যায় কাচের বা কন্ক্রিটে মোড়া একটা ভবন, তাতে কোনো জানালা খোলা নেই।আমি অবশ্য এটা বলার অধিকার রাখি না যে, জানালা খোলা না থাকলে এটা পরিবেশ বান্ধব হবে কি হবে না। কিন্তু যদি জানালা খোলা না যায়, তবে তাতে এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম থাকতে বাধ্য, তা কীভাবে পরিবেশবান্ধব? আমি আবারও বলছি, এটা একটা প্রশ্ন মাত্র।ভার্ডিক দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই।এটা নিয়ে পরে হয়তো বিশদে কথা বলা যাবে। এই পরিবশেবান্ধব প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, উদ্যোগ এগুলোর কোনোটারই জনক আমরা তথা বাংলাদেশের লোকজন নই।এটা বলা এই কারণে যে, সব কিছু হালাল করে দেয়ার জন্য তরিকার উদ্ভব বা দাওয়াইও আছে।জলবায়ু পরিবর্তনের সেই দাওয়াইয়ের অন্যতম প্রধান উদাহরণ হতে পারে ইলেট্রিক ভেহিক্যাল বা ব্যাটারিতে চলা গাড়ি।
নির্জলা বাংলায় বলা হলে যে গাড়িতে তেল দেওয়া লাগে না, তাই ইলেকট্রিক গাড়ি। তার মানেই এই নয় যে এতে জ্বালানি লাগবে না। তেলের পরিবর্তে এতে ব্যটারি ব্যবহার করা হয়। আদতেই খেলনা গাড়ির মতন। দুই বা চারটা ব্যটারিতে যেমন খেলনা গাড়িগুলো চলে ঠিক তেমনি বর্তমানে যে গাড়িগুলোতে আমরা চড়তে পারি, তাতেও ব্যটারি থাকে। ভার বহন ক্ষমতার পার্থক্য ছাড়া গতানুগতিক অর্থে খেলনা গাড়ি আর ইলেকট্রিক ভেহিক্যালের মধ্যে তফাৎ পাওয়া দুরূহ।
বর্তমানে এই বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে চলা যানবহনের সঙ্গে জলবায়ু রক্ষার একটা সম্পর্ক দেখানো হচ্ছে। এই সম্পর্ক কিভাবে একটা ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে এবং তার প্রসার ঘটানো হচ্ছে তা নিয়েই এই আলোচনা।
তেল যাকে শুদ্ধ ভাষায় জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়। এই তেল আসে খনি থেকে।আমরা তা জেনে এসেছি।খনি থেকে আহরিত এই তেল ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ইত্যাদি নামে আমরা গাড়ি বা যানবাহনে ব্যবহার করে আসছি যান্ত্রিক যুগের প্রায় সূচনা থেকেই।স্টিম ইঞ্জিনকে বাদ দিয়ে। স্টিম ইঞ্জিনে পানি হলো রূপান্তরিত শক্তি যা তাপ থেকে উৎপাদিত হয় বা হতো।এখানে তেলের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আর গাড়িতে যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় তার নাম ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন বা অন্তর্দহন যন্ত্র। যেখানে মূল জ্বালানি হলো পেট্রোলিয়াম। এই পেট্রোলিয়ামের সিংহভাগ ব্যবহৃত হয় যানবাহন বা পরিবহনের জন্যে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনা বা বিবেচনায় গাড়ি/যানবাহন/পরিবহনের অবদানের কথা চলে আসে। বর্তমানে সারা বিশ্বে অন্তর্দহন ইঞ্জিন চালিত গাড়ির সঠিক সংখ্যা কত তা হয়তো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলা সম্ভব হবে না কিন্তু ধরে নেয়া হয় ১.৪৪৬ বিলিয়ন বাহন আছে যা পেট্রোলিয়াম নির্ভর। নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অন্যতম অনুষঙ্গ পেট্রোলিয়াম নির্ভর গাড়ি। ১৮৮৬ সালে ব্যেন্জ কোম্পানি প্রথম অন্তর্দহন ইঞ্জিন সম্পন্ন গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছিল। তিন চাকার ওই গাড়ি দেখতে ছিল প্রায় আমাদের রিকশার মতন। সেই থেকে শুরু। এত কথা বা এত সংখ্যা দেয়া হলো বুঝার সুবিধার্থে। এই গাড়িগুলোতে জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার সারা পৃথিবীতে ব্যবহৃত পেট্রোলিয়ামের সিংহভাগ। এই অন্তর্দহন ইঞ্জিন বা গাড়িগুলো থেকে দহনের ফলে যে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটে তা আমাদের নতুন করে জানা নয়।বরং এই নিঃসরণ কমানোর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ধরা হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়িগুলোকে। মূল যুক্তি হলো অন্তর্দহন ইঞ্জিন না থাকলে দহনের ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হবে না।এ কথা সত্যি।
ইলেক্ট্রিক বা ব্যটারিচালিত গাড়িতে দহনের বদলে ব্যাটারিতে ধারণকৃত শক্তি (জ্বালানি) ইলেক্ট্রিক মোটরে ব্যবহার করা হয়। এটা সেই ছোটবেলার খেলনা গাড়ি থেকে বিশেষ আলাদা কিছু নয়। দুই গাড়িতেই ব্যাটারি থাকে।এই ব্যাটারিগুলোর দাম বেশি হওয়ার জন্য ওয়ান টাইম ইউজ না হয়ে পুনঃব্যবহার যোগ্য করা হয়। এটাকে আমরা চার্জার লাইট বা মোবাইল ফোনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। চার্জ শেষ হয়ে গেলে আবার চার্জ দিয়ে তাকে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানের ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলো এই দুটি মৌলিক নীতির উপর চলে। আর বাদ বাকি যা যা যুক্ত হয় তা পণ্যটিকে বা গাড়িটির ব্যবহারকারীর সুবিধা বাড়ানোর জন্য।তাই আমরা যদি মনে করি ইলন মাস্ক সাহেবের টেসলা গাড়ি অন্যরকম।তবে তা ভুলই হবে নীতিগত ভাবে।
ইলেক্ট্রিক গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়াবার জন্যে জলবায়ু পরিবর্তনের গল্পটা দারুণভাবে সেঁটে দেয়া গেছে। বর্তমানে পৃথিবীর মোট উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডের ৭৫ শতাংশ আসে পরিবহনজনিত দূষণ থেকে। তাই ক্রেতাদের এটা বলে সান্ত্বনা দেয়া যাচ্ছে যে, ইলেক্ট্রিক গাড়ি পৃথিবীর জন্যে ভালো। কথা অবশ্য ভুল নয়। এই গাড়ি তুলনামূলক ভালো, ব্যবহারকারীর দিক থেকে এবং পরিবেশের জন্যও। কিন্তু কতটা আসলে ভালো? যে কোনো ইলেক্ট্রিক গাড়িতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় তা তৈরি করতে যে যে মৌলের প্রয়োজন পড়ে তা মোটেও পরিবেশের জন্যে ভালো নয়। এখন প্রশ্ন আসবে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনও পরিবেশের জন্যে ভালো নয়। কিন্তু পেট্রোলিয়ামের উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। যদিও বা এরই মধ্যে ইলেক্ট্রিক গাড়ির সংখ্যা হুহু করে বেড়ে গেছে। ইলেক্ট্রিক গাড়ির ক্রমবর্ধমান বাজার দখলের মধ্যে বিগত দশকে শুধুমাত্র ভারত থেকে উৎপাদিত হয়েছে ২৯১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড ।তার মানে দাঁড়ায় ব্যাটারি গাড়ির সংখ্যার সঙ্গে তাল রেখে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমছে না।
দহনজনিত ক্ষতির মাত্রায় ব্যাটারি গাড়ি কিছুটা সুফল আনলেও ব্যাটারি প্রস্তুত প্রণালী এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাচামাল সংগ্রহে পরিবেশের প্রতি বিরূপ অবদান ব্যাটারি গাড়িকে ঠিক পরিবেশ বান্ধব হতে সাহায্য করে না। মূলত দুটি পরিবেশগত মূল্য দিতে হয় ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য—ব্যাটারি তৈরি এবং ব্যাটারিকে চার্জ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বা এনার্জি।
গাড়ির ব্যাটারিতে লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং নিকেল ব্যবহৃত হয়। আর এই সব উপাদান প্রতুল হওয়ার কারণে চীন এই ব্যাটারির বাজারে প্রায় একচ্ছত্র অধিপতি।এটা হতেই পারে, মুক্ত বাণিজ্যের দুনিয়ায় কোনো দেশই আসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু যদি ব্যাটারি গাড়িটি ভারতে তৈরি হয় আর তাতে ব্যবহৃত ব্যাটারি তৈরি হয় চীনে, তবে বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি আমদানিজনিত দূষণের কথা মাথায় রাখতে হয়। ২০২১ সালে এই দুই ধরনের গাড়ির এক তুলনায় উঠে আসে একটি ব্যাটারি গাড়ির তৈরির সময় প্রায় ৪৬ ভাগ কার্বন নিঃসরণ ঘটায় আর অন্তর্দহন ইঞ্জিন বা পেট্রোলিয়াম গাড়িতে ২৬ শতাংশ। আর একটা গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে প্রায় ৪ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ঘটে। তাই একটা ব্যাটারি গাড়ি সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে রাস্তায় নামার পর প্রায় ৮ বছর ব্যবহৃত হলে তা একটা আনকোরা নতুন (জিরো মাইলেজ) পেট্রোলিয়াম গাড়ির সমান পরিমান কার্বন নিঃসরণ ঘটাবে।
এক টন লিথিয়াম থেকে প্রায় ১০০ গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করা যায়। আবার এই এক টন লিথিয়াম আহরণ করে ব্যবহার্য করার জন্য প্রায় ২ মিলিয়ন টন পানির প্রয়োজন হয়। আর তাই ব্যাটারি গাড়ি নির্মাণ কাজে পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পানির মূল্য ধরা হয় না, আর না ধরা হলেও তা যদি পেট্রোলিয়াম বা অন্য যে কোনো উপকরণের মতন করে ধরা হতো তবে ব্যাটারি তথা ব্যাটারি গাড়ি তৈরির ব্যয়ের আসল চিত্র উঠে আসতো।
নিকেল আর কোবাল্টও প্রায় একই ধরনের। পরিবেশের প্রতি মারাত্মক ক্ষতিকারক হবার কারণে ফিলিপাইন ২৩ টি খনির খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
এত কিছুর পরেও ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছে বা হবে। আবার প্রতিটি ব্যাটারি তার ব্যবহৃত জীবনের কোনো এক সময় কার্যকারিতা হারাবে। তার মানে হলো পুরোনো ব্যাটারি ফেলে দিতে হবে। ঠিক যেমন খেলনা গাড়ির মতন। বর্তমানে এই ফেলে দেয়া ব্যাটারির মাত্র পাঁচ শতাংশ রিসাইক্লিংয়ের আওতায় আনা গেছে। বাদবাকিগুলোর কি হয়েছে? ধরে নেয়া যায় পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সেগুলোকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
এত কথার মানে হলো সেই আবহাওয়া আর জলবায়ুর সংজ্ঞার মতন। ব্যাটারি গাড়ির সুফল হিসেবে যা দেখানো হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদে তা যে কুফল বইয়ে আনবে সেটা দেখানো হচ্ছে না।
ব্যাটারি গাড়ির জনপ্রিয়তা যে সব দেশে বেশি সেসব দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা, কার্যকারিতা এবং অর্থনৈতিক দৃঢতা বেশির ভাগ দেশের থেকে বেশি।বিদ্যুতের উৎপাদন একটা বড় ব্যাপার এখানে। যদি তাপবিদ্যুৎ হয় আর তার জ্বালানি যদি হয় জীবাষ্ম তবেও তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির। ক্লিন এনার্জির উদাহরণ হিসেবে যে দেশগুলোকে দেখানো হয় সে দেশগুলোর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম এবং তাদের বেশির ভাগই কোনোও না কোনোভাবে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ছিল। যদি ভারতের উদাহরণ আনা হয়, তবে ভারতের মোট উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎ থেকে আর যার মূল জ্বালানি কয়লা। আর এই কাজে ভারত তার মোট কার্বন নিঃসরণের ৬০ শতাংশ আসে এনার্জি উৎপাদন থেকে। এই উদাহরণে আমরা বাংলাদেশের নামও আনতে পারি। কেননা বাংলাদেশে মোট ব্যাটারিচালিত গাড়ির পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।কিন্তু মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহ ভাগ তাপবিদ্যুৎ নির্ভর। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের সঙ্গে ব্যাটারি গাড়ির ব্যবহারিক খরচ নির্ভর করবে। সঙ্গে রয়েছে এর পরিবেশগত দিক। আবার নেপালের উদাহরণ আনলে, নেপাল জলবিদ্যুৎ নির্ভর দেশ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদি নেপাল ব্যাটারি গাড়ি বেশি ব্যবহার করে তবে তারা অর্থনৈতিকভাবে এবং পরিবেশগত দুভাবেই সুবিধাজনক স্থানে থাকবে।কিন্তু কয়টা দেশ এমন?
গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীনের নাম হালে শোনা যায়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম সর্বজনবিদিত। কিন্তু এই ইলেক্ট্রিক গাড়ির জোয়ারে বর্তমানে প্রতি চারটি গাড়ির একটি আসে চীন থেকে। আর ব্যাটারির বাজার অলিখিত ভাবে চীনের হাতেই। তাই পৃথিবী বাঁচাবার জন্যে যে নিয়ামক খাড়া করার তাগিদ, তা আসলে কতটা সুচিন্তিত তা সময়েই দেখা যাবে। কেননা, চীন একবার কোনো কিছু ধরলে তার সহজলভ্যতা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবে যখন প্রায় সবাই গাড়ি খরিদ করতে পারবে। যা আমাদের জন্য ভালো মনে হলেও ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর তো বটেই।