পশ্চিমাদের প্রচারে নয়, রাশানদের ভাষায় তাদের মনোভাব জানুন

মঞ্জুরে খোদামঞ্জুরে খোদা
Published : 12 March 2022, 04:12 PM
Updated : 12 March 2022, 04:12 PM

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ করছে। কিন্তু যুদ্ধটা শুধু রাশিয়া-ইউক্রেইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যুদ্ধের আলাপ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। রাশিয়া ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও মার্কিন ও পশ্চিমাদের সমর্থক দুনিয়া যুদ্ধ করছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তারা সেখানে সরাসরি বন্দুক-কামান নিয়ে যুদ্ধ না করলেও ততোধিক শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পুরোদমে লেগে পড়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ সকল দেশ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক অবরোধসহ রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া-যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা বিস্তৃত করছে। যুদ্ধের পাশাপাশি একটি রাষ্ট্রের জন্য নিঃসন্দেহে এটা বড় ধরনের আঘাত।

পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনে আগ্রাসনের অভিযোগ তুলেছে। রাশিয়াও পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে যে, তারা সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন তৈরি করেছে। যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

যুদ্ধ শুধু অস্ত্র-গোলাবারুদ বা সৈন্য দিয়েই হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে কাবু করতে নানা পথ গ্রহণ করে থাকে প্রতিপক্ষ। সেই দিক থেকে রাশিয়া একা ইউক্রেইনসহ মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাকে একাই অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়তে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার অবস্থা কী? তাদের জনগণের মানসিক ও মনোবলের অবস্থা কী? কীভাবে তারা এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, সে প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সে বিষয়গুলো জানতে ও জানাতেই এই লেখার উদ্যোগ।

কারণ, তাদেরকে জানবার পথগুলো পশ্চিমারা বন্ধ করে দিয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়ার বয়ানে শুনতে হচ্ছে রাশিয়ার পরিস্থিতি। যার অধিকাংশ অর্ধসত্য, মনগড়া, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। তাই রাশিয়ার পরিস্থিতি জানতে সেখানে বসবাসকারী একাধিক বন্ধুর সাথে কথা বলে, তাদের মনোভাব এখানে তুলে ধরছি।

১. এই যুদ্ধ কি রাশিয়ার জন্য অনিবার্য ছিল?

রাশিয়া তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অখণ্ড ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে চুক্তি হয়েছিল তা পশ্চিমারা ভঙ্গ করেছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা ও শক্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা ন্যাটোকে রাশিয়ার সীমান্ত অবধি সম্প্রসারণ করেছে। এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া মানে রাশিয়ার স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে অরক্ষিত করা। রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে, তার ভাঙ্গন ও দুর্বল-অনুগত শাসক বসানোর পরিকল্পনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া অবশ্যই কর্তব্য।

রাশিয়ার সরকার ইউক্রেইনের সাথে বিভিন্নভাবে একটি সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা সমর্থক ও তাদের খপ্পরে পড়া ইউক্রেইন সরকার এতে গুরুত্ব দেয়নি। বরং সেখানকার শাসক রুশভাষীদের ওপর দমন-নির্যাতন করেছে। ইউক্রেইনের ৩০ ভাগ মানুষ রুশভাষায় কথা বলে। তারা তাদের ভাষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। সেখানকার বিরোধীদলের নেতাদের জেলে পুরে রেখেছে, বিরুদ্ধমতকে দমন করেছে। সেখানে ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়ন করেছে।

২. রাশিয়ার সকল দল, নাগরিক কি এই যুদ্ধকে সমর্থন করছে?

এ বিষয়ে রাশিয়ার সকল দল একমত হতে পেরেছে। এক্ষেত্রে রাশিয়াতে জাতীয় ঐক্যমত আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিছু মানুষ আছে, যারা যুদ্ধের বিরোধিতা করছে। যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। শান্তি আমরাও চাই। কিন্তু কে এই শান্তিকে নির্বাসনে পাঠাল? কারা এই যুদ্ধকে অনিবার্য করল? সে দায় তাদের, আমাদের নয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পর ১৯৯১ সালে ন্যাটো সামরিক জোটকে পূর্ব ইউরোপে সম্প্রসারণ না করার যে চুক্তি হয়েছিল তা ভঙ্গ করে তাকে রাশিয়ার উঠানে আনা হচ্ছিল। তখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে রুখে না দাড়ানোর কোনও বিকল্প ছিল না। যে জন্য এ যুদ্ধ অবশ্যই রাশিয়ার জনগণের জন্য একটি দেশপ্রেমিক কর্তব্য।

২০১৪ সালে মার্কিন মদদে, ইউক্রেইনে তথাকথিত অরেঞ্জ রেভ্যুলেশনের মাধ্যমে ক্যু করে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মার্কিন অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তৎপরবর্তী সরকারগুলোর ন্যাটোতে যোগ দিতে চাওয়া, নব্য নাজিদের প্রতিষ্ঠা দেওয়া, বিরোধীমত-দলকে দমন করা, রুশভাষীদের ওপর নির্যাতন, প্রভৃতি কর্মকাণ্ড রাশিয়াকে অসহ্য ও বেপরোয়া করে তুলেছে। যে কারণে দল-মত নির্বিশেষ রাশিয়ার সকল মানুষ এই যুদ্ধকে সমর্থন করছে।

. পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবরোধে রাশিয়ানদের প্রতিক্রিয়া কী?

তাদের বক্তব্য, দেখ আমাদের কিছু সমস্যা হবে, কিন্তু আমরা ভালভাবেই টিকে থাকতে পারব। কারণ, আমাদের অনেক জায়গা আছে। সেখানে আমরা শস্য উৎপাদন করে অনায়াসেই খাদ্যের সমস্যা সমাধান করতে পারব।

আমরা যারা চাকরি-ব্যবসা ও কর্মসূত্রে শহরে বসবাস করি কমবেশি আমাদের সবারই গ্রামের বাড়ি ও জমি আছে। যেখানে আমরা সামারের ৫ মাস কাটাতে যাই। গ্রামের বাড়ি বা বাংলোতে গিয়ে প্রতিবছর ঘোরাফেরা-আনন্দ-ফুর্তি করি, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেই, পান-ভোজন করি, এবার সেটা করব না। এবার আমরা সামারের পুরো সময় খাদ্য উৎপাদন করব। যাতে করে কোনওভাবেই আমাদের খাদ্য সংকট না হয়। বরং আমরা বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করে মজুত রাখব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমরা এরচেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। সে অবস্থার মধ্যদিয়ে শুধু আমরা টিকেই ছিলাম না, বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রেও পরিণত হয়েছি। এখন তারচেয়ে আমরা অনেক সুবিধাজনক ও শক্ত অবস্থানে আছি।

. রাশিয়ার তেল-গ্যাস-পণ্য রপ্তানি বন্ধ হলে কি সমস্যা হবে?

আমাদের সমস্যা হবে। কিন্তু এ জন্য আমাদের যতটা না সমস্যা হবে তার অধিক সমস্যায় পড়বে ইউরোপ-আমেরিকা-পশ্চিমারাই। যারা আমাদের গ্যাস-তেলের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের গ্যাসেই তাদের পরিবহন, শিল্প-কারখানা চলে, তাদের বাসা-বাড়ি-অফিস কমপ্লেক্স গরম রাখে। তারা যত সস্তায়, সহজে পাইপের মাধ্যমে এ গ্যাস পেত, সেটা আর পাবে না। এখন তাদের এগুলো বেশি দামে কিনতে হবে এবং নাগরিকদের অনেক বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে। এগুলো নিয়ে ওই সব দেশে জনবিক্ষোভ হবে।

আমাদের তেল-গ্যাস অন্য কোনও দেশে বিক্রি করতে পারব। যেমন চীন আমাদের জন্য একটি নতুন বাজার হতে পারে। চীনের সাথে এখন আর আমাদের আগের মতো বৈরিতা নেই। চীন-রাশিয়া একে অন্যের সহযোগী হলে পশ্চিমারা আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।

রাশিয়াও পশ্চিমা অবরোধের জবাব দেওয়ার ঘোষণা করেছে। তাদের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দেশগুলো থেকে টেলিকম, কৃষিপণ্য, বিদ্যুৎ-প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি, গাড়ি, রেলের বগি, কন্টেইনার, টারবাইন আনা হবে না। রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্তত অর্ধশত দেশ ক্ষতির মুখে পড়বে।

৫. পশ্চিমারা ব্যবস্যা গুটিয়ে নিলে রাশিয়ার কতটা সমস্যা হবে?

রাশিয়া-ইউক্রেইন বিশ্বের বৃহত্তম গম ও ভুট্টা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেইনের উৎপাদন ব্যহত হলেও রাশিয়ার সেটা হবে না। তারা বিশ্ববাজরে গমের চাহিদার প্রায় ৩০ ভাগ পূরণ করে। ভাবতে পারেন কি বিপুল পরিমাণ গম-ভুট্টা তারা রপ্তানি করে। সেই রপ্তানি অনেক কমলেও নিজেদের খাবারের জন্য থাকবে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বড়বড় দেশ ও ফাস্টফুড কোম্পানিগুলো বরং সংকটে থাকবে। গম ছাড়াও খাদ্যপণ্যের মধ্যে তারা মাছ, মাংস, ডাল রফতানি করে থাকে।

কোকোকোলা, ম্যাগডোনাল্ডস, স্টারবাকস রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবস্যা গুটিয়ে নিচ্ছে। এখানে তাদের অনেক বড় ব্যবসা আছে, কারণ তারা অনেক বিনিয়োগ করেছে। এতে আমাদের অবশ্যই কিছু ক্ষতি হবে। অনেক মানুষ এসব কোম্পানিতে চাকরি করে। কিন্তু ভালো দিক হচ্ছে কোকোকোলার বিকল্প পানীয় আমাদের দেশে তৈরি হবে, জায়গা করে নেবে। সুতরাং এসব অসুবিধা আমাদের জন্য সাময়িক। তবে আশার দিক হচ্ছে, যেসব বিদেশি কোম্পানি রাশিয়া ছেড়ে চলে যাবে, তাদের শিল্প-কারখানা, অফিস প্রভৃতি সরকারের অধীনে চলে যাবে।

. ইউক্রেইনের নব্য নাজিবাদ কি রাশিয়ার রাজনীতির জন্য হুমকি?

সোভিয়েত ইউনয়নের মধ্যে ইউক্রেইন একমাত্র অঞ্চল যেখানে তারা নাজিদের আশ্রয় দিয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারকে সমর্থন করেছিল। তাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। ইউক্রেইনের নাজি অনুসারীদের সংগঠনের নাম আজভ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের পর এদের সমর্থকরা সংগঠিত হতে শুরু করে। ২০০৫ সালে প্যাট্রিয়ট নামে একটি সংগঠন হয় ২০০৮ সালে এসএনএ নামে এরা ইউক্রেইনে প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করে।

নব্য নাজিদের তৎপরতা কতটা বিপদজনক তা একটি মন্তব্যের মাধ্যমেই বুঝতে পারা যাবে। ২০১০ সালে এ উভয় সংগঠনের নেতা অ্যান্ড্রি বিলেটস্কি ইউক্রেইনিয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "ইউক্রেইন জাতির উচিত বিশ্বের নিকৃষ্ট জাতিগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং শ্বেতাঙ্গ জাতিগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া।" ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সমর্থন করেন এবং রুশপন্থী গেরিলাদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াই করেন।

ইউক্রেইন বিশ্বের একমাত্র দেশ যার সশস্ত্র বাহিনীতে নব্য-নাজি নামে একটি কাঠামো আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন, দ্য নেশনের একজন সংবাদদাতা ২০১৯ এ তথ্য প্রকাশ করেন।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এমন বিপদজনক তৎপরতা আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য হুমকি। একে বিনষ্ট করা না গেলে কেউ রক্ষা পাবে না। হিটলার যেমন শ্বেতাঙ্গবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে গোটা বিশ্বকে বিপন্ন করেছিল। গত দুই দশকে তারা শক্তি সঞ্চয় করেছে। পশ্চিমারা তাদের প্রকাশ্যে মদদ/উসকানি দিচ্ছে। অস্ত্র-গোলাবারুদ দিচ্ছে। এরাই শাসককে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে, সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য, সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির জন্য, ন্যাটোতে যোগদানের জন্য।

. যুদ্ধ কি পুতিনকে রাশিয়ায় অজনপ্রিয় ও বিচ্ছিন্ন করছে?

পুতিনকে নিয়ে আমাদের অনেক কথা আছে। তিনিও বিরুদ্ধ মতকে দমন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর রাশিয়ার যে পরিস্থিতি ছিল সেখান থেকে তিনি রাশিয়ার হৃত গৌরবকে উদ্ধার করেছেন, ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতির ক্ষতি হবে, নাগরিকদের অনেক সমস্যা হবে কিন্তু আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য অনেক মূল্য দিতে প্রস্তত। আমি বলবে যুদ্ধ বরং আমাদের নাগরিকদের আরো সংহত করেছে, আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ় ও দেশপ্রেমিক করেছে। আমরা আমাদের দেশের জন্য যে কোনও ধরনের আত্মত্যাগ করতে প্রস্তত। প্রয়োজনে অল্প খাবো ও পরবো, দেশবিরোধী কোনও ষড়যন্ত্রকে মেনে নেব না। আমাদের ভাই এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সেটা করা হবে, সেটা আমাদের কাম্য ছিল না, তবে আমরা এটা মেনে নেব না।

. যুদ্ধে রাশিয়ার নাগরিকদের মানসিক অবস্থা কী?

রাশিয়ার নাগরিকদের পরিষ্কার বক্তব্য দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ চললেও যতটা আত্মত্যাগ করতে হয় তা আমরা করব। তবু পশ্চিমা ষড়যন্ত্র ও শক্তির কাছে মাথানত করব না। তাদেরকে আর কোনও কারণে ছাড় দেওয়া হবে রাশিয়ার অপমৃত্যু। রাশিয়ার দেশপ্রেমিক নাগরিকরা তা চায় না। পুতিনের অনেক সমস্যা থাকলেও তিনি জনগণের এই মনোভাব ঠিকই বুঝতে পরেছেন। এবং রাশানরাও তার করা দেশের স্বার্থের কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন। এটাই রাশিয়ার শক্তি ও প্রেরণা দিক। দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা, সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তত।

৯. যুদ্ধকালে সরকার কীভাবে জনগণকে সাহস যোগাচ্ছে?

যুদ্ধকালীন সময়ে জনসাধারণের কল্যানে বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থা-প্রণোদনা গ্রহণ করেছে রাশিয়ান সরকার। ৮ থেকে ১৬ বছরের শিশুদের জন্য ভাতা-অনুদান বাড়ানো হয়েছে।

যেসব বিদেশি কোম্পানি রাশিয়া ছেড়ে চলে গেছে, তাদের শিল্প-কারখানা, অফিস প্রভৃতি সরকার তাদের অধীনে নেবে।

ফসল সংগ্রহ করতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এবং সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন সরাসরি এসব বিষয়ে দেখভাল ও তত্ত্বাবধান করছেন। অর্থনৈতিক ঝুঁকি-ক্ষতি মোকাবিলায় চীন সরকারের সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়।

১০. রাশিয়ার অনেক সৈন্য নিহত হচ্ছেন, জনগণের মনোভাব কী?

যেকোনও বা যে কারোও মৃত্যুই প্রচণ্ড বেদনার ও দুঃখজনক। রাশিয়ার সৈন্যদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক সৈনিকের জন্য দেশরক্ষা করাটাই পবিত্র দায়িত্ব। রাশিয়ার এই মহান বীরেরা তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে সে কাজটিই করে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়া তাদের আড়াই কোটি সন্তানকে হারিয়েছে। দেশমাতৃকার জন্য আত্মদানের উজ্জ্বল ইতিহাস রাশিয়ার মানুষের আছে। রাশান সৈন্যরা মৃত্যুকে ভয় পায় না, তাদের কাছে দেশ ও কর্তব্যবোধ অনেক বড়। সে গৌরব এ জাতিকে স্বতন্ত্র ও মহিমান্বিত করেছে।