Published : 08 Feb 2021, 09:44 AM
মাননীয় মন্ত্রী জনাব আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আপনার সদয় অবগতির উদ্দেশ্যে একটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। হাইকোর্টের আদেশবলে যখন কোন বই বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সেই বাজেয়াপ্তকৃত বইকে রেফারেন্স হিসেবে অন্য কোন বই বা লেখায় ব্যবহার করা হয়, তখন ঐ বই বা লেখার ক্ষেত্রেও একই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই কাম্য।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০০৪ সনে প্রকাশিত "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র" গ্রন্থাবলী সিরিজের তৃতীয় খণ্ডটি ২০০৯ সালে মাননীয় হাইকোর্ট বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন যাতে মেজর জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
২০০৬ সালে প্রকাশিত আমাদের আলোচ্য এই বইটিতে বাজেয়াপ্তকৃত সেই বইকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যা মেজর জিয়াউর রহমানকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা বলে মনে হয়। যে ভুল বা ইতিহাস বিকৃত উদ্ধৃতির জন্য প্রথমোক্ত বইটি বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেই একই বিকৃতির জন্য এই বইটি বাজেয়াপ্ত হবে না কেন?
প্রথোমক্ত বইটির ব্যাপারে ২০০৯ সালে মাননীয় হাইকোর্টের বাজেয়াপ্ত করার আদেশে বলা হয়েছিলো :
"(২) মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করিয়াছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০০৪ সনে প্রকাশিত "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র" গ্রন্থাবলী সিরিজের তৃতীয় খণ্ডসহ এইরুপ বক্তব্য যে সকল পুস্তক পুস্তিকা, গ্রন্থে বা গ্রন্থখণ্ডে মুদ্রিত বা বিবৃতি হইয়াছে অবিলম্বে তাহা বাজেয়াপ্ত করিবার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি নির্দেশ করা হইল।"
হাইকোর্ট এর আদেশ – সুত্র :
http://www.supremecourt.gov.bd/resources/documents/182028_W.P.%202577%20of%202009.pdf
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ১১টি সেক্টরভিত্তিক বিষয় নিয়ে "বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস" নামে ১১ খণ্ড এবং ১ খণ্ড ব্রিগেড বিষয় নিয়ে "বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – ব্রিগেড ভিত্তিক ইতিহাস" প্রকাশ করে ২০০৬ সালে মার্চ মাসে।
বইটির প্রাককথন এ লেখা আছে "১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রিতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর যখন অতর্কিতে বর্বরোচিত হামলা চালায় তখন সমগ্র জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মেজর জিয়াউর রহমান সহকর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।" প্রাককথন লিখেছেন অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, সভাপতি, প্রত্যয়ন কমিটি ও প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বইটির ভূমিকাতে লেখা আছে "২৭ মার্চে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দান করেন"। ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, আহ্বায়ক, সেক্টর ও ব্রিগেড ভিত্তিক ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়ন ও প্রকাশ সংক্রান্ত সাব-কমিটি।
এছাড়া বইতে মেজর জিয়াউর রহমানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার কথা লেখা আছে এভাবে:
"একই দিনে ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান এই নব গঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ '৭১-এ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথমে তিনি নিজেকে প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চীফ হিসেবে বেতার কর্মীদের সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপ:
Dear fellow freedom fighters,
I Major Ziaur Rahman Provisional President and Commander in Chief of Liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle. Bangladesh is independent. We have waged for the liberation of Bangladesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from the occupation of Pakistan Army.
Inshallah, victory is ours.
প্রিয় সহযোদ্ধা ভাইয়েরা,
আমি, মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আমি চীফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেছি। আপনারা যে যা পারেন সামর্থ অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে।
ইনশাল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মেজর জিয়াউর রহমান
(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড,পুনর্মুদ্রণ, জুন ২০০৪,পৃ.১)।"
সুত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর-০১, পৃ-৬৯।
আবার পৃষ্ঠা ৭২ তে আমারা দেখি:
"এদিকে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অনুরোধে মেজর জিয়াউর রহমান পূর্বে দেয়া ঘোষণাটি আংশিক পরিবর্তন করে একই বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আরেকটি ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপ:
"I, Major Zia, Provisional Commander-in-Chief of the Bangladesh Liberation Army, hereby proclaim, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh.
I also declare, we have already framed a sovereign, legal Government under Sheikh Mujibur Rahman which pledges to function as per law and the constitution. The new democratic Government is committed to a policy of non-alignment in international relations. It will seek friendship with all nations and strive for international peace. I appeal to all Government to mobilize public opinion in their respective countries against the brutal genocide in Bangladesh.
The Government under Sheikh Mujibur Rahman is sovereign legal Government of Bangladesh and is entitled to recognition from all democratic nations of the world.
(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ড,পুনর্মুদ্রণ, জুন ২০০৪,পৃ-২)।"
সুত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর-০১, পৃ-৭২।
এখানে উল্লেখ্য, বইটির কোথাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার কোন প্রকার উল্লেখ নেই।
আমরা অনুরোধ করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বইটি "বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস" নামে ১১ খণ্ড এবং ১ খণ্ড "বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – ব্রিগেড ভিত্তিক ইতিহাস" বাজেয়াপ্ত করে বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হোক।