Published : 15 Apr 2020, 07:43 PM
সারা পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ আতংকের নাম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। চীনের উহান থেকে গত বছরের শেষ সময়ে যে ভাইরাসের বিস্তৃতি তা বর্তমানে পৃথিবীর ২১০টি দেশের প্রায় কুড়ি লক্ষ আক্রান্ত এবং ১ লক্ষ ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩১ জনের মতো আক্রান্ত এবং ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে সরকার জনগণকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছে এবং এর জন্য অফিস-আদালতও ছুটি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এতে করেও মানুষের দুর্ভাবনা দূর করা যাচ্ছে না। পেটের তাগিদে অনেক গরীব মানুষই রাস্তায় বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্মহীন এসব মানুষজন এক অনিশ্চয়তায় দিকে এগুচ্ছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্পের ভীড়ে বিকাশমান পর্যটন শিল্পও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাভাইরাস যখন বাংলাদেশে সংক্রমিত হয় তখন ছিল আমাদের পর্যটনের ভরা মওসুম। কি ইনবাউন্ড কি আউটবাউন্ড কি ডমিষ্টিক, সকল শ্রেণির পর্যটন কর্মকাণ্ডই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি থেকে জুন, ২০২০ পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসে সার্বিক পর্যটন শিল্পে ৯,৭০৫ কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং প্রায় ৩,০৯,৫০০ জন তাদের চাকুরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। এর মাঝে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাদে অন্যান্য বেসরকারি এয়ারলাইন্সে ৬০০ কোটি টাকা এবং কর্মহীন প্রায় ২,০০০ জন, হোটেল/রিসোর্ট এবং রেস্তোরায় প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা এবং কর্মহীন প্রায় ২,৫০,০০০ জন, ট্রাভেল এজেন্সিতে ৩,০০০ কোটি টাকা এবং কর্মহীন প্রায় ১৫,০০০ জন, ট্যুর অপারেশনে ৪,০৫০ কোটি টাকা (ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড ও ডমিষ্টিক) এবং কর্মহীন প্রায় ৪১,০০০ জন, পর্যটন পরিবহণ ও পর্যবাহী জাহাজে ৫৫ কোটি টাকা এবং কর্মহীনের সংখ্যা হবে প্রায় ১,৫০০ জন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহল সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করছে। কারণ করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহতা কিছুতেই আঁচ করা যাচ্ছে না। এর শেষ কোথায় তাও অনিশ্চিত। সুতরাং এই অনিশ্চয়তায় অন্যান্য দেশের মতোই সরকারের দিকে চেয়ে আছে দেশের পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্টরা। এই মুহূর্তে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ও ভাতা, ঈদ বোনাস, অফিসের ভাড়া ও ইউটিলিটিস প্রদানই প্রধান খরচ। এসব বিবেচনায় পাটা সরকারের কাছে পরবর্তী তিন বছরের জন্যে ৩,০০০ কোটি টাকার অর্থ যোগানের সহায়তা চেয়েছে। এছাড়াও ২০২০-২০২১ সালের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, করোনাভাইরাস পরবর্তী আন্তজার্তিক প্রচার ও পণ্য উন্নয়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, পুনরায় কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত ইউটিলিটি বিল মওকুফ এবং সংস্থা ও কর্মচারীদের কমপক্ষে ২ বছরের জন্যে আয়কর হ্রাসের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুচ্ছে। বিগত সময়ে হলি আর্টিজানে হামলা এবং নেপালে ইউএস বাংলার দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহ থাবায় প্রায় নিঃশেষিত হতে চলেছে দেশের বিকাশমান পর্যটন শিল্প। এই মুহূর্তে সদাশয় সরকারের আশু সুদৃষ্টিই কেবল পারে পর্যটন শিল্প এবং এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৩১ লক্ষ পর্যটন কর্মীর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে। এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির এই মহাদুর্যোগে সকল শিল্পের জন্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে দেশের অন্যান্য অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পের মতই পর্যটন শিল্পও বেঁচে থাকুক সরকারের যথাযথ আনুকূল্যে, এই মুহুর্তে এটাই আমাদের সম্মিলিত প্রার্থণা।