Published : 15 Feb 2022, 07:48 PM
এই ১৪ ফেব্রুয়ারি রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম। চালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার বাড়ি কই? উত্তর দিলেন, দিরাই। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, "বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের বাড়ির কাছেই আমার বাড়ি।" পাশের দোকান থেকে তখন ভেসে আসছিলো 'বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে' গানটি। অদ্ভুত এ সংযোগটিতে শিহরিত হয়ে উঠি। যে বসন্তকে নিয়ে গান লিখেছেন বাউল করিম সেই বসন্তের গান বাজছে, আর আমি তারই এলাকার রিকশা চালকের রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছি। বসন্তের বাতাস সত্যি সত্যিই আমাকে আন্দোলিত করছে! মনে পড়ে অনেক কথা।
অনেকের মতো শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমারও। তার লেখা বিরহের গানগুলোই তার প্রতি আমাকে অনুরক্ত করেছিল। তবে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম সাংবাদিকতার কারণে। দৈনিক যুগভেরী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম। সিলেটে এলে জ্যোতি মঞ্জিলে আসতেন। অনেক সময় রাতযাপনও করতেন তিনি জ্যোতি মঞ্জিলের অতিথিশালায়। যুগভেরীর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হ্যারল্ড রশীদের সাথে বাউলসম্রাটের ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। সেই সুবাদে করিম ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা। প্রথম পরিচয়েই তিনি আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। তার ভালোবাসার টানেই তিনবার গিয়েছি উজানধলে।
প্রথমবার যাই ২০০৪ সালে। হ্যারল্ড ভাই একদিন বললেন, লন্ডন মিউজিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি টিম সিলেটে এসেছে। তারা করিম ভাইয়ের ভক্ত। তাদের ইচ্ছে তার সাথে সাক্ষাতের। কিন্তু তাদের হাতে একদম সময় নেই।' হ্যারল্ড ভাই সিদ্ধান্ত নেন, সিলেট পর্যটন মোটেলে যে অনুষ্ঠানে তারা পারফর্ম করবে সেখানে করিম ভাইকে নিয়ে আসার। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। যেই কথা সেই কাজ; পরদিন সকালে প্রাইভেট কারে দিরাইয়ে পৌঁছাই। সেখান থেকে করিম ভাইকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। দুপুরের রোদ তখন হেলান দিয়েছে আকাশের গায়ে। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, জনপ্রিয় গানগুলো তিনি যে প্রেক্ষাপটে লিখেছেন সেগুলো তার কাছে জানতে চাইবো। তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া বিষয়গুলো নোট করে একটি লেখাও তৈরি করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নিজের অজান্তেই সেই লেখাটি আমি হারিয়ে ফেলেছি। রুম ভর্তি কাগজ ও বইয়ের ভিড়ে সেই লেখাটি আমি মাঝে মধ্যেই খুঁজি। কিন্তু আজ অবধি হারিয়ে যাওয়া সেই লেখাটি উদ্ধার করতে পারিনি!
সেদিনের আলাপচারিতায় জেনেছিলাম- নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্য ও স্ত্রী সরলাকে ঘিরে অসংখ্য গান রচনা করেছেন তিনি। প্রেমও এসেছে নানা গানে। সেইসব গান সেদিন গুনগুনিয়ে গেয়েও শুনিয়েছিলেন তিনি। শাহ আব্দুল করিমের ছেলে নূরজালালও বাবার সঙ্গে অনেক গানে সুর মিলিয়েছিলেন। মনে আছে, শাহ আবদুল করিমকে সংসার কীভাবে চলছে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেছিলেন, 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এক অক্তে খেলে অন্য অক্তের জন্য দুশ্চিন্তা করতে হয়।' যিনি বাউল গানের 'সম্রাট', নাম-ডাক যার বিশ্বজোড়া, দারিদ্র্য তার নিত্যসঙ্গী। কেমন যেন বেমানান মনে হয় আমার কাছে। পাশে বসা বাউল তনয়কে জিজ্ঞেস করি এর কারণ। নূরজালাল বলেন, "বাবাতো কখনো কোনো অনুষ্ঠানে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা চেয়ে নেন না। কেউ দিলে সেটা সাদরে গ্রহণ করেন।" তিনি সেদিন আরও জানিয়েছিলেন- "বাবা গান করেন প্রাণের টানে, মানুষের জন্য। সেটি তার গান থেকেই উপলব্ধি করা যায়।" বলেই শুরু করেন তিনি, 'গান গাই আমার মনরে বোঝাই মন থাকে পাগলপারা, আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া।'
এভাবে গান গাওয়া, পুরনো স্মৃতি রোমন্থন এবং আলাপচারিতায় একসময় আমরা পৌঁছে যাই সিলেট পর্যটন মোটেলে। সেখানেও বেশ কিছু সময় কাটাই একান্তে। ওইদিন রাতেই দিরাইয়ে চলে যান তিনি।
এরপরে ২০০৯ সালের ১৩ জুন শিল্পকলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক কামাল লোহানীর সঙ্গে উজানধলে যাই। তখন করিম ভাইয়ের সান্নিধ্যে কাটানো মুহূর্ত ছিল অন্যরকম। সে সময় বাউল সম্রাট ছিলেন অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। পরিকল্পনা অনুযায়ী কামাল লোহানী ভাইকে নিয়ে সিলেট সার্কিট হাউস থেকে ওইদিন ভোরে রওয়ানা হই উজানধলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নগরীর আম্বরখানা এলাকা অতিক্রম করার সাথে সাথেই বৃষ্টি নামে। লোহানী ভাইকে চিন্তিত দেখায়; বলেন, "যেতে পারবো তো।" আমি তাকে আশ্বস্ত করি, যত বিপত্তি আসুক না কেন বাউলসম্রাটের বাড়িতে আমরা যাবোই। লোহানী ভাইয়ের দুশ্চিন্তার কারণ ঢাকায় অবস্থানরত সুনামগঞ্জের একাধিক ব্যক্তি। শাহ করিমের বাড়িতে যাতায়াতের ব্যাপারে তাদের কাছে লোহানী ভাই জানতে চেয়েছিলেন।
তারা তাকে দিরাই উপজেলা সদর থেকে নৌকা ছাড়া যাওয়া যাবে না এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক থেকে দিরাই অবধি রাস্তার বাজে অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা দেন। সে কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও উজানধলে যেতে পারবেন কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। মোবাইল ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ হলে খোঁজ-খবর নিয়ে উজানধলে যেতে তেমন কোনও সমস্যা হবে না বলে লোহানী ভাইকে আমি আশ্বস্ত করি। আমার উপর আস্থা রেখে তিনি করিম ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার সংকল্প নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন। শিল্পকলা একাডেমির মাইক্রোবাসে করে আমাদের উজানধল যাত্রা অনেকটা ছিল ভ্রমণের মতোই। লোহানী ভাই নানা কথায় মাতিয়ে রেখেছিলেন। করিম ভাইয়ের শারীরিক পরিস্থিতি, সংসার কীভাবে চলে, এমনকি তার সাথে আমার পরিচয়ের দিনক্ষণ- সবকিছু জানতে চান তিনি আমার কাছে। বৃষ্টি থামে না, কখনও সজোরে আবার কখনও ঝিমিয়ে। আমি কল্পনাপ্রসূত কথা বলি, 'দিরাই পৌছার আগেই রোদ উঠবে।' গম্ভীর লোহানী ভাইয়ের মুখে তখন স্মিত হাসি ফুটে ওঠে। বুঝতে পারেন, আমি তাকে চিন্তামুক্ত করার জন্যই এমনটি বলেছি। কাকতালীয়ভাবে দিরাই শহরে পৌঁছার আগেই রোদ ওঠে। লোহানী ভাই বলেন, 'তোমার কথাই ঠিক হলো।' শহর দিরাইকে পেছনে ফেলে আমাদের মাইক্রোবাসটি এগিয়ে চলে বাউলসম্রাটের বাড়ির দিকে। আগে থেকেই জানা ছিল ভাটির জনপদের উজানধলে যাওয়ার আগে মিনিট পনের আমাদেরকে নৌকা চড়ে এবং কিছুটা পায়ে হেঁটে যেতে হবে। ঢালাই করা রাস্তার ওপর পানি ওঠায় এছাড়া অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বাধ্য হয়ে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হয়। করিম ভাইয়ের বাড়িতে প্রবেশের রাস্তাটি চলার অনুপযোগী থাকায় বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে আমরা প্রবেশ করি। বাউল তনয় নূরজালাল আমাদের এগিয়ে নিয়ে যান তাদের আবাসস্থলে। ঘরে প্রবেশের পর দেখতে পাই শাহ আব্দুল করিম বিছানায় শুয়ে আছেন, স্যালাইন চলছে। তাকে তত্ত্বাবধানকারী নুরুন্নেসা তখন দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। হাওর জনপদে তখনও সকালের আবহ কাটেনি। ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়েই নাস্তা করছিলেন বাউলসম্রাট। আমাদের উপস্থিতি তাতে ছন্দপতন ঘটায়।
শাহ আবদুল করিমকে বিছানায় দেখে আবেগাপ্লুত হন কামাল লোহানী। ভাটির সম্রাটের মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে দেন। এরপর বিছানার পাশে একটি চেয়ারে বসেন। আমি বসি অন্যটিতে। আমাদের উপস্থিতি টের পান বাউলসম্রাট। একবার লোহানী ভাইয়ের মুখের দিকে আরেকবার আমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন তিনি। নূরজালাল পিতাকে লোহানী ভাইয়ের পরিচয় দেন। সাথে সাথে মাথার উপরে হাত তুলে সালাম দেন বাউল। সবাই তখন হতবিহ্বল। বেশ কিছুদিন ধরেই খুব অসুস্থ ছিলেন তিনি। সিলেটে নিজ রচনাসমগ্র প্রকাশনা অনুষ্ঠান থেকে ফিরে অনেকটা অচেতন অবস্থায় ছিলেন বাউল। তার এমন বোধশক্তিতে হাসি ফুটে ওঠে করিম তনয়ের মুখে। কথাটি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের উদ্দেশে বলেন। আবেগতাড়িত লোহানী ভাইয়ের মুখেও খেলে যায় তৃপ্তির রেখা। করিম ভাইয়ের হাতে হাত রাখেন তিনি। বলেন, 'আমি লোহানী। আপনার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল রমনা বটমূলে, ৯৩ সালে। সেবার আপনি বাউল গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়েছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন বাউলদের বিরুদ্ধে চলা অত্যাচার নির্যাতনের।' – কথা যেন মনোযোগ সহকারে শোনেন করিম ভাই। কী যেন একটা অস্ফুট স্বরে বলতে চান। শুধু বোঝা যায়, 'বালানি' (ভালো তো) শব্দটি। ক্ষণিক পরে সর্বদা ঘরে থাকা বাউল আবদুর রহমানের দিকে তাকিয়ে করিম বলেন, 'কে আপনি?' তিনি তার নাম বলেন। এরপর করিম ভাইয়ের দৃষ্টি আমার দিকে নিবন্ধিত হয়। তাকিয়ে থাকেন চোখে চোখ রেখে। কী যেন খুঁজছিলেন তিনি আমার অবয়বে! খানিকক্ষণ পর দেখতে পাই তার আঁখিযুগল সজল হয়ে উঠেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, 'চিনতে পেরেছেন?' নির্বাক থাকেন তিনি। চোখ ঘুরিয়ে আবার কিছু সময় লোহানী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ফের অস্ফুট স্বরে তাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। হৃদয়ের অনুভুতি দিয়ে, চোখের ভাষায় আমাদের কথা হয় করিম ভাইয়ের সাথে। দ্রুত কেটে যায় ঘণ্টারও বেশি সময়। করিম ভাইয়ের কাছে বিদায় নিতে যান লোহানী ভাই। অনেকটা অচেতন অবস্থায় থাকা শাহ করিম সেদিন অতিথিদের শেষ শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। লোহানী ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আবেগাপ্লুত লোহানী ভাইয়ের গলাটা তখন ধরে আসে। এরপর আমি বিদায় নেই। হাত তোলেন, মাথাটা এগিয়ে দিতে বুলিয়ে দেন। ছল ছল করে উঠে আমার দুই চোখ। হৃদয়ে কেমন যেন হাহাকারের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। ঘর থেকে বেরিয়ে আসি আমরা। বাউল তনয় বাড়ির উঠোনের একপাশে থাকা তার মায়ের কবর দেখান। জানান, বাবার শেষ ইচ্ছে তাকে যেন মায়ের পাশে কবর দেওয়া হয়। সুস্থ থাকতেই নিজ জীবনের শেষ ইচ্ছের কথা বলে রেখেছেন তিনি। স্রোতস্বিনী কালনী নদী তীরের বাড়িতে তখনও পিনপতন নীরবতা। বিদায় নিয়ে আমরা রওয়ানা হই আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে।
৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯। শাহ আবদুল করিম গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিলেটের নূরজাহান ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যাই। হাসপাতালের ১৯ নম্বর কেবিনে তখন বাউল তনয় নূর জালালসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সবার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিলেন হাসপাতালের বেডে থাকা বাউল। নূর জালাল পিতার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, নূরজাহান হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছেন করিম। এমনকি সবাইকে চিনতে পর্যন্ত পারছেন। আমাদের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আমি বাউলের শিয়রের কাছে গিয়ে বসি। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি, 'যতদিন না সুস্থ হচ্ছেন ততদিন হাসপাতালেই থাকুন।' মাথা নেড়ে সায় দেন। এরপর বিদায় নিয়ে অ গন্তব্যে চলে আসি। এটাই ছিল করিম ভাইয়ের সাথে তার জ্ঞান থাকা অবস্থায় শেষ সাক্ষাৎ।
নূরজাহান হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি যেতে পারেননি শাহ আবদুল করিম। ২০০৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে তার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যাওয়ার খবরটা শুনে ছুটে যাই সেখানে। হাসপাতালে তখন স্বজনদের ভিড়। ডাক্তার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই বলে জানান। সে অনুযায়ী তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়ে পড়া আবদুল করিম চিকিৎসকদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও জেগে ওঠেননি। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় নূরজাহান হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দুঃসংবাদটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। ছুটে যাই হাসপাতালে, দেখি নিথর দেহ পড়ে আছে আবদুল করিমের। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। করিম ভাইয়ের সান্নিধ্যে আমি যেটা গভীরভাবে অনুধাবন করেছি তা হচ্ছে, তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না। তার গানে সে প্রমাণ পাওয়া যায়। জীবদ্দশায় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও তা খোলাসা করেছেন তিনি। কিন্তু মৃত আবদুল করিমকে আমরা তার লালিত চেতনা দ্বারা শেষ বিদায় জানাতে পারিনি। এটা আমাদের অক্ষমতা। তবে আবদুল করিমের শেষ বিদায়কালে সেই ব্যর্থতাকে ডিঙিয়ে তার অনুসারীরা নিজেদের অজান্তেই একটি বিপ্লব করেছেন। আমাকে ফোনে জানানো লেখক মাহফুজুর রহমানের অভিব্যক্তি, 'বিপ্লব অই গেছেগি।'
আমি প্রশ্ন করি, 'কিসের বিপ্লব!' তিনি খোলাসা করেন, বাংলার বাউলরা অতীতে যা পারেনি উজানধলে তাই হয়েছে। সিলেট শহর থেকে বাউল রীতিতেই দিরাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে করিম ভাইয়ের লাশ। তাই বা কম কিসে! আর তার সাক্ষী হয়ে রইলো বহমান কালনী নদী। হাওর আর কালনী নদীর বুকে নাও ভাসিয়ে শাহ আবদুল করিম আর কোনোদিন গান গাইবেন না, প্রিয় এই নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাবেন না অনুরাগীদের। প্রিয়তমা স্ত্রী সরলার পাশে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন তিনি, শত আকুতিতেও সে ঘুম ভাঙবে না তার। তবে নিজ সুর সঞ্জীবনীতে অগণিত কাল বেঁচে থাকবেন আবদুল করিম। মাঝি-মাল্লা এই কালনীতেই নাও ভাসিয়ে গাইবে তার লেখা গান। আজকের মতোই আগামীর কোনো লেখক হয়তো লিখবে তিনি মরেন নি, তার মৃত্যু নেই, তিনি অমৃতের সন্তান।