Published : 04 Jun 2021, 11:08 PM
শিরোনাম দেখে যা ভাবছেন- আরে নাহ্, তা নয়!
বিষয়টা সিট-বেল্ট, যদিও আশয় হচ্ছে বক্ষ। সিট-বেল্ট ক্রস বেল্ট হয়ে বুক আগলিয়ে, সমস্ত শরীরকে উদ্দাম ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা করে। এ রক্ষীর পেছনের বিজ্ঞান- পদার্থবিদ্যার পোটেনশিয়াল এনার্জি (পিই) এবং কাইনেটিক এনার্জি (কেই) সম্পর্কিত। আগেই বলে নিচ্ছি, পদার্থবিদ্যার কিস্সু জানি না। সেটা মনে রেখেই, পিই ও কেই-কে স্থির-শক্তি ও অস্থির-শক্তি, এ দুই নামে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আমরা যখন বসে থাকি তখন 'স্থির', কিন্তু যখন ঠ্যালা পাই বা খাই তখন 'অস্থির' হয়ে উঠি- না চাইলেও! কারণ ঠ্যালার নাম বাবাজি এবং এই ঠ্যালা-বাবাজির 'অস্থির'তায় যত জোর, 'স্থির' চাচ্চু প্রায় তত জোরপ্রাপ্ত হোন এবং রবিঠাকুর বর্ণিত, 'ফটিক' এর মত- 'সমস্ত গাম্ভীর্য হারিয়ে পপাত-ধরণীতল' এবং এ পতন ও মূর্চ্ছা ঠেকাতেই বন্ধনী তথা সিট-বেল্ট, যা চলমান যেকোনও বাহনে ব্যবহার করা দস্তুর। কাঠের গুড়ির উপর বসে থাকা 'অকালতত্বজ্ঞ্যানী' ফট্কের শরীর-ঘিরে অথবা চারপাশ-ঘিরে কোনও বন্ধনী না থাকাতে, ঠ্যালা খাওয়া মাত্র, তার পতন শারীরিক ও মানসিক দুই দিকেই আঘাতী ও মর্মাঘাতী। কিন্তু শরীর, মন ও মান-রক্ষাকারী এ বন্ধনীর বেষ্টনে যাওয়ায় আমাদের বিরাট বিদ্রোহ। শুধু বিবাহবন্ধনে যাওয়া এবং দ্রুত ছিট্কে বেরুনোর আগ্রহ ছাড়া, আর কোনও বন্ধনেই আমাদের নিতান্ত অনীহা। আইনেরবন্ধন, সমাজের বন্ধন, ধর্মের বন্ধন, জ্ঞানের বন্ধন, সভ্যতার বন্ধন, শোভনতার বন্ধন- থুহ্ ফালাইয়া! "আমি মানি নাকো কোনো আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম, ভাসমান মাইন!"
'ঝাঁকড়া-চূলের-বাবরি-দোলানো'- এ মহান-পুরুষ আমাদের নাচুনি-স্বভাবে 'আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্নিশ' জানিয়ে, এখন নীলক্ষেতে 'মসজিদেরই…কবর দিও ভাই'। উনি তৎকালে গাড়ি চড়তেন, কিন্তু বেল্ট বাঁধতেন কি? না কি সেসময় বেল্টের চলন হয় নি? আচ্ছা, জিজ্ঞ্যেস করে দেখবো ক্ষণ, কাছেই তো রয়েছেন!
সিট-বেল্টের স্ব-কৃত বাংলা বক্ষ-বন্ধনী হলেও, ওর কোনও সাইজ নেই, আকৃতিও অভিন্ন, তবে সমন্বয় করার ব্যবস্থা আছে! শরীরের দৈর্ঘ্যের সাথে মিল রেখে, ঘাড় বাঁচিয়ে, কাঁধ-বেয়ে নেমে আসবে, তেমন ব্যবস্থা রয়েছে: বেল্টের-গোঁড়া যেখানে ত্রিভুজাকৃতি-মোড়ক নিয়ে গাড়ির বডিতে লেগে রয়েছে, সেখানে অন্তত দুইটি 'ঘাট' রয়েছে- এ ঘাট মাড়িয়ে বেল্টেকে নামিয়ে আরামদায়ক করা যায়। তাতেও না হলে, হয় আপনি আরেকটু পিছিয়ে বসবেন অথবা সিট-টা কে পিছিয়ে নেবেন। সিটগুলিতে কমপক্ষে দুই ধরনের কন্ট্রোল আছে: সামনে-পেছনে এবং খাঁড়া-হেলানো। বাচ্চাদের জন্য বেবি সিট। ড্রাইভারদের এটা 'জেনে ও বুঝে' প্যসেঞ্জারদের উৎসাহিত ও সহায়তা করা উচিৎ। কারণ, আইন-অনুযায়ী সিট বেল্ট না পরার দায়িত্ব, ড্রাইভারের উপর বর্তায়। শরীরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সাথে বেল্টের ফ্রেন্ডলিনেসের এর বিরাট সম্পর্ক। আমদানিকৃত গাড়ীগুলোর বেশিরভাগ জাপানি এবং যেহেতু জাপানিরা আমাদের মতই 'দিঘালি' ও 'পাতালি', তাই গাড়িগুলো অনেক ফ্রেন্ডলি, কিন্তু ইউরোপীয় গাড়ি একটু ভিন্ন, কারণ ইউরোপীয়-খরিদ্দারদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ভিন্ন।
বিপু নামের এক ভুরিয়াল-বন্ধুর অভ্যাস শুনুন। উনি সবসময় সামনের-প্যাসেঞ্জার সিটে বসতে চাইতন এবং বসার পর, সিট-বেল্ট-ভুঁড়ি-পেঁচিয়ে কুটুস্ করে শব্দ হওয়া মাত্রই, নিজের কোমরের বেল্ট আলগা করে দিতেন! কারণ কী? "বেল্ট পরি ভুঁড়ি আগলানোর জন্য, এই সিট-বেল্টটি যেহেতু ভুঁড়ি আগলাচ্ছে, সুতরাং নিচেরটির আর দরকার নেই!" সিট-বেল্টটি তার কাছে সাসপেন্ডর। এই সাসপেন্ডেড অবস্থায় তাকে দেখলে মনে হতো: ভুঁড়িটা যেন একটা তবলা, বেল্টটা 'দোয়াল' এবং চোখের চশমা, বুকের কলম এগুলো 'গুটি'- ছোঁয়া-নিয়ে জেগে উঠবার অপেক্ষায়!
বক্ষ না হয় ছেড়েই দিলাম, আরেকটু নিচের কটি-বন্ধনী তথা কোমর-বন্দ্ বাঁধতেও আমরা চাড় পাই না। চার-বিহারী বাহনের পেছনের সিট-সংলগ্ন বেল্ট-তো খুঁজে বের করাই মুশকিল: 'গোপনে (২) কত যে খেলি, আলিঙ্গনের এই খেলা!' আচ্ছা, গাড়ির সামনের সিটে বিশেষ করে বক্ষ-বন্ধনী আর পেছনের সিটে কটি-বন্ধনী কেন? পেছনের তেনাদের কি আগে থেকেই বক্ষ-বন্ধনী থাকে? আরে নারে না, এ-অর্থে মোটেও থাকে না, আর, সে-অর্থে? কী জানি- 'চোখটা এত পোড়ায় কেন?' যাক্গে। নিহিতার্থ হচ্ছে, হঠাৎ-ঝাঁকুনিতে পেছনের আরোহীরা সামনের সিটের প্রতিবন্ধকতায় আঁটকে গিয়ে, কম আহত হওয়ার সম্ভাবনা, কিন্তু সামনের দুই জনের সম্ভাবনা অপার। এরমধ্যে আবার প্যাসেঞ্জার সিটের ফুরফুরা-ভাইয়া সবচেয়ে নাযুক, কারণ তিনি সামনের কাঁচ তথা উইন্ড শিল্ড (বায়ু-বর্ম) ভেঙে মিসাইলের মত বেরিয়ে যাবার অবস্থায় থাকেন, ড্রাইভার-ভাইয়া স্টিয়ারিং-হুইলে ঠেকে কিছুটা আটকালে, আটকাতেও পারেন। বিভিন্ন ধরনের ঘষাঘষি যথা: আগু-আগু, আগু-পিছু, পিছু-আগু, আগু-পাগু, পাগু-আগু এগুলির একেকটার বিধ্বংসী ক্ষমতা একেক রকম, যা নির্ভর করে গতি ও অগতির-গতির ওপর। তাই পেছনের সিটে কোমর আঁকড়িয়ে থাকলেও চলে, কিন্তু সামনের সীটে অবশ্যই বক্ষাবলম্বন। কিন্তু সামনের কোমর? সে 'পসন্দ্ আপনা আপনা', তবে সাবধান, গিয়ার-বক্সে বেঁধে না যায়! কোমর নিয়ে রবিঠাকুরের বেশ বড় এক চিঠি আছে, যেখানে উনি বিস্ময়ে অনুযোগ করেছেন- "কোমর ভাঙা যেন হৃদয় ভাঙ্গা অপেক্ষা কোনও অংশে কম!" সুতরাং? দক্ষ বুঝে পক্ষ নিন।
চিঁহি চিঁহি সুরে কর্ণ আকর্ষণকারী অনাদৃত সিটবেল্ট গাইতে থাকে 'খেয়া যেমন নদীর দু'কূল বাঁধে, তেমনি তুমি আমার দু'হাত ধরো' কিন্তু কে শোনে কার আকুতি? নিতম্বের গুরুভার সিট-কে বুঝিয়ে দিয়ে, বেল্ট-এ চেপে, এউজ্ঞা ধমক: "চোপ্রাও!"
ধমক খেয়ে সিটের ভেতর যে 'সেন্সর' আছে তা সারা-পথ ফোঁপাতে ফোঁপাতে, ফেঁপে ওঠে পেট, পেট তার ফাঁপাত্ব-কে অবমুক্ত করতে গিয়ে নিম্নবায়ু ছড়িয়ে, কিছু ড্রপলেট, ভেতরের নন্সেন্স-দেরও হারাহারি দিয়ে থাকে! তাপানুকূল-যন্ত্র মুহূর্তে শোঁ শোঁ করে ধেয়ে, নিম্নবায়ুর উৎস 'ঠাণ্ডা' করায় প্রয়াসী, কিন্তু ততক্ষণে 'গুধাম' থেকে আরও দুই চালান বেড়িয়ে গেছে! শেষ অস্ত্র হিসেবে তখন গাড়ির স্পিকার, আওয়াজ বাড়িয়ে অসহায়ের মত কোরাস গেয়ে উঠেঃ "আমরা করবো জয় (২), আমরা করবো জয় একদিন, ডিপ ইন মাই হার্ট, উই ডু বিলিভ"… ক্রাশ ইওর হেড ওয়ান ডে। এই ইওর হচ্ছে 'ইউ' তথা 'ইউ' হচ্ছেন ওই নিম্নবায়ুত্যাগী, মজ্বুর!
ল্যাও, Internationale!
বিমানপোতে বন্ধনীর যুক্তিও প্রায় গাড়ির মতই। ওখানে সব্বাই পেছনে, শুধু পাইলট ভাইয়ারা মুখাপেক্ষী! ধারণা করি, ককপিঠে যারা বসে থাকেন তাদের-বন্ধনী: কটি ও বক্ষ দুই জায়গায়ই। বায়ু-বালা-রা এসে পেছনের প্যসেঞ্জারদের কোমর হাত্রিয়ে নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক জিনিস গোঁজা আছে কি নেই।
যে সকল অপদার্থ যেমন: বন্ধনহীন আরোহী এবং পদার্থ যেমন: টিস্যুদানী, বোঁচকা-বুঁচকি, (লেবেঞ্চুস+ চুলের কাঁটা + সানিটাইজারের পুতুলি+ চাবির ছড়া ইত্যাদি ইত্যাদি) ঠাসা ভ্যানিটি-ব্যাগ, পানির-বোতল, গানের- ক্যাসেট, চুলের ব্রাশ, হৃদয়ের-বোঁটা ও তস্বির-গোটা ইত্যাদি, পোটেনশিয়াল এনার্জি নিয়ে যখন গাড়ি অথবা যেকোনও বাহনের উপর সওয়ার অথবা স্থাপিত হন, বাহনটি গতিয়ু হওয়া মাত্রই তারা কাইনেটিক্যালি শক্তি বা গতি প্রাপ্ত হোন এবং ছিট্কে ভ্যাটকানোর সম্ভাবনায় থাকেন।
ভেবে দেখুন, তারেক মাসুদ-দের দুর্ঘটনা। একটি মাইক্রো, একটি ম্যাক্রোর সাথে সংঘর্ষিত- ম্যাক্রো পাশে ক্ষত, মাইক্রো সামনের একদিক দুম্ড়ানো। অনুমান করা যাক, সব্বাই সিট-বেল্ট পরে ছিলেন না। তারও বাড়া, মাইক্রোতে ক্যামেরা, স্পুল-কভার, ব্যাটারি, তেপায়া, চৌপায়া, অগায়রা…অগায়রা- চোখে-চোখে রাখা এ সমস্ত পদার্থ খুব নিবন্ধিত, যদিও অ-বন্ধিত, পৃথুলা এবং ওজনদার। হঠাৎ ঝাঁকুনিতে, তাবৎ স্থাবর-জঙ্গম 'স্থির'তা হারিয়ে 'অস্থির'তা প্রাপ্ত হয়ে: এ ওর উপর, ও এ-র উপর, এটা সেটা-র উপর, সেটা এটা-র উপর, এ এটা-র উপর, এটা এ-র উপর, এ সেটার উপর, সেটা এ-র উপর, ও এটার উপর, এটা ও-র উপর, ও সেটা-র উপর সেটা ও-র উপর- কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পেল্লায় সংযোজনে, মর্মান্তিক বিয়োজন। মাসুদ-দের অনেকেই, নীলক্ষেতে 'ফ্রিজ ফ্রেইম' হয়ে আছেন। বিশ্বাস না হলে স্বচক্ষে দেখে আসুন!
আচ্ছা, আমরা পোটেনশিয়াল শক্তি নিয়ে ঠায় বসে থেকেও কেন ক্লান্তি বোধ করি? এই যেমন গাড়ি, রেলগাড়ি, হাতিমি, বকচ্ছপ, হাঁসজারু, ঘোড়া, বাঘ, ভল্লুক, ময়না, টিয়া, অস্ট্রিচ, ইমু, এমনকি ঘোড়ার-ডিমের উপর বসেও যদি স্থানান্তরিত হই, তবুও 'জার্নির-ধকল' বোধ করি। কাইকে? প্রায় একই মামলা, সাথে যুক্ত হয়েছে মস্তিষ্ক ও চোখ। অনৈচ্ছিক নড়াচড়ায়, বে-যুৎ থেকে যুৎ হবার অবিরাম-ধকলে শরীর জেরবার। অন্যদিকে চোখের উপর দিয়ে কত্ত-কিছু বয়ে যায় কিন্তু সয়ে যায় না! কী গেল, কী রইলো এই ভেবে ভেবে চোখ শ্রান্ত হয়ে মস্তিষ্ক ক্লান্ত, আর মস্তিষ্ক ক্লান্ত হলে, শরীর তো ক্ষান্ত দিতে চাইবেই! আরে হ্যাঁ, আমাদের জিডিপি অবস্থানের হেরফেরের সাথেও কি এই পিই এবং কেই এর কোনও সম্পর্ক আছে? "উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা" কথাটার মধ্যে যদি 'কাইনেটিক' যুক্ত থাকে, তবে পোটেনশিয়াল নিশ্চয়ই আছে। সত্যেন বোস কিধার গায়া? বুলাও উস্কো।
মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর হেলমেট তথা শিরস্ত্রাণও পিই ও কেই এর কারণে দরকার; তাছাড়া উনাদের আরও দরকার- স্কন্ধ-আব্রু, হাঁটু-টুপি, আঙুল-দস্তানা…কত্ত কি.. ছিট্কে যেয়ে ভ্যাট্কিয়ে ঠেকানোর জন্য। দুনিয়ায় সব জায়গায়ই বাইকাররা দুরন্ত ও ছুটন্ত- এরা সব্বাই পাখির মত উড়তে চায় এবং গোত্তা-খেয়ে পড়েও বটে। অযান্ত্রিক বাইসাইকেল চালকদের হেলমেট আবার ভিন্ন রকমের, কিন্তু কেন? কারণ, এই সাইকেলের 'স্থির', 'অস্থিরে' রূপান্তরিত হবার পরও, দুই শক্তির/গতির তফাৎ বেশ কম, তাই ঝাঁকুনি কম, ছিট্কানো কম, আঘাত কম- যদিও মাথার-খুলি-বাঁচোয়া একটি শিরস্ত্রাণ রয়েছে।
ছাতা ছাড়া পুং-পথচারীদের কোনও শিরস্ত্রাণ ঠিক নেই। আর বন্ধনী? আছে। পিছু টান, পিছু ডাক, অপেক্ষিত চোখ এবং উপেক্ষিত সহানুভূতি, এগুলো সব স্থিতিস্থাপক হাওয়াই বন্ধন। অন্যদিকে, "হাওয়া মে উড়তা যায়ে"-দের বোরখা, হেজাব, নেকাব, উড়নি- মোট্টেও ফেলনা নয়- এগুলো একইসাথে স্ত্রাণ ও বন্ধন: নিবন্ধিত অনেক কিছুকে, বদ্ধ রাখে। বিভিন্ন ধর্মাচারী-পথচারীদের জন্য ভিন্ন ধরনের হ্যাট, টুপি, টোপর রয়েছে, আর ধরাচারীদের জন্য 'মাস্ক' তথা 'নাকানি-মুখানি' হয়েছে। সর্বোপরি দিনের বেলা ট্রাফিক-পুলিশের উদ্যত হাত ও রাতে, হস্তান্দোলিত 'ষাড়াংশ', তাছাড়া, রয়েছে লাল, হলুদ, নীল বাতি- যেগুলো আইনের-বন্ধন, যার শরণে গচ্ছিত 'হবার ও থাকার' জন্য অনেকেই চোঙা ফুঁকে ফুঁকে আবার দম্ ভরছে, কেউ কেউ ক্ষেমাও দিয়েছে।
আচ্ছা, মোটর-সাইকেল কেন সবজায়গায় কাঁত করে দাঁড়ানো থাকে? সুঠাম ও টু থাম চালক, স্বল্প অথবা দীর্ঘমেয়াদী বিরতি, যেকোনও জরুরতেই, সাইকেল কাঁত হয়ে আছে, যদিও সোজা হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা কেন সেটাকে এক-পেয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড় করাই, কেন দুই পায়ে নয়? ঠেস-খাড়া-পদাঘাত বনাম দাঁড়া-উবু-পদাঘাত, এ দুই অবস্থা থেকে তেড়ে যেতে যে তেড়িবেড়ি, তার মোশন স্টাডি ও টাইম-স্টাডি করলেই বোঝা যাবে, কেন "আমি চঞ্চল হে…", এবং এটাই এই বদ্বীপের প্রকৃতি, সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্ম, দর্শনের অনিত্যতা। টেনটিটিভ অ্যান্ড অ্যাডহক। আমরা সবাই পাঁতি-কাকের মত সদাচঞ্চল, কদাচ দাঁড়-কাকের মত স্থির। সবাই ছুট্, ছুট্, ছুট্ কিন্তু ঠিক কী কারণে অথবা কিসের পেছনে, সেটা স্পষ্ট নয়, সেইসাথে প্যাঁ-পোঁ, খিচাখিচি, ঘষিমাজি ও অজাগজি। এই যে ছট্কু-পনা, সেটাই আমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত অনন্য বৈশিষ্ট্য। নদী ভাঙ্গনের কারণে স্থানিক পরিবর্তন এবং ষড়ঋতুর কারণে সাময়িক পরিবর্তনের যে অনুক্ষণতা- সেটাই আমাদের অস্থিরতার কারণ: যে কারণে আমরা দেশ ভাঙি ও ভরি, বাবা ডাকি ও ত্যাজ্য করি, অতীত স্মরি ও ভবিষ্যৎ আঁকি, কিন্তু বর্তমানে 'যাহা পাই তাহা ভুল করে পাই'। আমরা পতন ও পত্তনে সবসময় খুব আগ্রহী: পাতনে এখনও নয়। আর তাই, "আমি নতুন করে গড়বো ঠাকুর, কষ্টি-পাথর দে মা এনে"- কিন্তু পলিমাটির দেশে কষ্টিপাথর মেলানো কষ্ট। তাই আমাদের কোনও বন্ধন-ই কষে না, ক্রন্দন-ও থামে না- 'আল্লাহ্র নামে চলিলাম।'
(সতর্কীকরণ: পদার্থবিদ্যার যে ধারণা-আশ্রয়ী এ লেখা, সে ধারণাগুলো অতীব সরলভাবে এখানে ধারণ ও প্রয়োগ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে 'কাইজ্জা' করে শক্তি ব্যয় করতে যাবেন না। যদি লড়তেই হয়, তবে যথাজন ও যথাস্থান থেকে পিই ও কেই জেনেবুঝে নেবেন।)