Published : 28 Nov 2020, 12:39 PM
(১)
আসলে আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম- এই মুহূর্তটা সত্য, স্বপ্ন নয়। আমাদের হাতে বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ এখন আর্জেন্টিনার।
আমি প্রথম বিশ্বকাপ দেখি ১৯৮৬ সালে। তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। রিউমেটিক ফিভারের বদান্যতায় হাসিমুখে হোস্টেল থেকে বাসায় ফিরে এসেছি। তার কিছুদিন পরেই বিশ্বকাপ শুরু হলো। আব্বার সাথে রাত জেগে কিছু খেলা দেখলাম। ততদিনে মারাদোনা, সক্রেটিস, বেকেনবাউয়ার আর অতি অবশ্যই পেলে- এই নামগুলোর সাথে পরিচয় হয়েছে। প্রবলভাবে আসক্ত হয়েছি দেশীয় ফুটবলে আরো স্পষ্ট করে বললে মোহামেডানের সাথে। প্রচুর ক্রীড়া ম্যাগাজিন পড়তাম। ক্রীড়াজগত থেকে শুরু করে কলকাতা থেকে আসা খেলা বা ইংরেজি স্পোর্টস স্টার। সেই সুবাদে খেলোয়ারদের নাড়ি-নক্ষত্র আর পরিসংখ্যান আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। এই আনন্দযজ্ঞে বিশ্বকাপ ফুটবলের সমস্বর হর্ষধ্বনি আর উত্তেজনার সাথে এক পশলা দমকা হাওয়া দিল দু'টো নাম। আর্জেন্টিনা আর মারাদোনা।
ভালোবাসার নতুন পর্ব শুরু হলো আমার।
সেই পর্ব জয়ের আনন্দ মাখা। নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনার বিজয়রথ ছুটতে লাগল। আর এলো কোয়ার্টার ফাইনাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা। প্রথম গোলটা কোথা থেকে কী হলো আমার মত শিশুর পক্ষে তো বটেই বিটিভির সামনে বসে থাকা কেউই ঠাহর করে উঠতে পারেনি (এমনকি মাঠে থাকা বেচারা রেফারিও নয়) আর অতি অবশ্যই মহাকাব্যিক দ্বিতীয় গোল।
এর পরও কত দৃষ্টিনন্দন গোল হলো, হয়তো হবেও। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার দ্বিতীয় গোল যেন পার্থিব এই পৃথিবীতে এই টুকরো অপার্থিব ঘটনা। এ কারণেই এতকাল পরেও চোখে আরাম দেয়া দ্বিতীয় গোলটা ফিরে ফিরে আসে। যতবার আসে ততবার যেন গ্যালারি ভর্তি বিস্মিত দর্শককুল আর হর্ষধ্বনি নিয়ে আসে। আমি শুনতে পাই- গো ও ও ও ল আর মারাদোনার হাসিমুখের দৌড়।
২৯ জুন, ১৯৮৬। মেক্সিকোর আজটেক স্টেডিয়ামে সাদা-নীল জার্সি আর বিশ্বকাপ হাতে মারাদোনা। একটা ফ্রেম। সারা জীবনের জন্য অন্তরের ক্যানভাসে আঁকা হয়ে গেল।
(২)
গল্প শুনে দিন কাটাবার বদলে তার দিন কাটে করতালি আর হর্ষধ্বনি শুনে
অটোবায়োগ্রাফি অফ মারাদোনা বইটা হাতে পেলাম ২০১৫ এর শেষদিকে। অ্যামাজনে অর্ডার করে প্রবল উত্তেজনা চেপে ঘুরে বেড়াই। তারপর একদিন কাঙ্খিত প্যাকেট আসতেই খুলে নেড়েচেড়ে দেখি। বইয়ের গন্ধ শুঁকি। নিউজপ্রিন্ট ছাপা দেখে আরো ভালো লাগে। উল্টে-পাল্টে দেখি তাতে অনেক কথা, সাথে দুর্লভ কিছু ছবি। আমি তখন থাকি স্কটল্যান্ডের এডিনবরাতে। এক সকালে বই আর ছাতা সমেত বেরিয়ে পড়ি। নিকলসন স্ট্রিটের স্টারবাকস ক্যাফেতে বসে লেখালেখি করা আমার অন্যতম প্রিয় কাজ সে সময়ে। এক কাপ লাটে অর্ডার দিয়ে খালি টেবিল পেতেই বসে পড়া শুরু করি।
পুরো বই শেষ করতে বেশ সময় লেগে যায়। কিন্তু তাতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে না এতটুকু। স্প্যানিশ ভাষা থেকে ঝরঝরে ইংরেজি অনুবাদ পাঠে অনুবাদক মার্সেলা মোরো আরাউজোকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাই। তারপর ওয়ান ফাইন গুড মর্নিং আমি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদে বসে যাই।
সেই ভ্রমণটা ছিল অনন্য। আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি মারাদোনাকে অনুসরণ করছি ছায়াসঙ্গী হয়ে। মারাদোনা কথা বলছেন নিজের সঙ্গে, কিন্তু আদতে যেন আমাকেই লক্ষ্য করে। তার রাগ-অনুরাগ-ক্ষোভ-প্রেম-ভালোবাসা-উত্থান-পতন অথবা ম্রীয়মান হয়ে দুঃখকাতরতা। এই রোলার কোস্টার খুব দ্রুত বেগে চলছে না। বইয়ের পরিসরের মতই ধীরে এগুচ্ছে। এক একটা অধ্যায় লম্বা পথ পরিক্রমায় ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দিন-ক্ষণ-তারিখের নির্ভুল বলে যাওয়া গল্প।
মারাদোনার বই অনুবাদ করতে গিয়ে এই এক বিস্ময় জেগেছে। কিভাবে এত নিঁখুত মনে রাখা যায়! লিখতে লিখতেই জেনেছি উপহার পাওয়া নোট বইয়ে মারাদোনা নিজেই সব টুকে রাখতেন।
শুরুতেই মারাদোনার শৈশব চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। বুয়েনাস আয়ার্সের ছোট্ট এক শহরতলী ফাইওরিটো। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর। পরিবারের পঞ্চম সন্তান মারাদোনার জন্ম হলো। যার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবল। স্কুলে যেতে ফুটবল, না পেলে গোলাকার কিছু নিয়ে কিপি-আপি করা, আতপক্লান্ত দুপুরে ফুটবল খেলা, স্কুলে যাওয়া- সেও ফুটবল খেলা যাবে বলেই। আপদমস্তক এক ফুটবল অন্তপ্রাণ শিশু। যার চুলগুলো ফোলা ফোলা ছিল বলে ছোটবেলায় ডাকা হত পেলু। পেলুসা থেকে পেলু।
আর তারপর বড় হতে হতে আমাদের প্রিয় দিয়াগো আরমান্দো মারাদোনা। ফুটবল ইতিহাসের সেরা এবং বিতর্কিত এক মহানায়ক।
(৩)
প্রসঙ্গ যদি হয় ফুটবল- যে মানুষটিকে আমি সবচাইতে বেশি শ্রদ্ধা করি তার নাম ডিয়েগো। হ্যাঁ, এমনকি পেলের চেয়েও বেশি- রোনালদিনহো
৮৬ বিশ্বকাপ দেখে সেই যে মারাদোনা ভক্ত হলাম আমরা, একইসাথে হলাম অ্যান্টি ব্রাজিল। কিন্তু সে কী আসলেই হওয়া যায়! আর্জেন্টিনার ফুটবল ভালবেসে আসলেই ব্রাজিলের সাম্বা ফুটবল এড়ানো যায় না। কেউ পারে না! মারাদোনাই কী পেরেছিলেন?
নেপোলিতে খেলার সময় মারাদোনার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু হলেন ব্রাজিলের ক্যারেকা। সে সময় নেপোলি ক্লাবে ম্যা-জি-কা নামটা খুব প্রচলিত ছিলা। মারাদোনা-জিওর্ডানি-ক্যারেকা। ক্লাবের সাফল্যের তিন চালিকাশক্তি। নেপোলিতে যেয়ে মারাদোনার যেন পুনরুত্থান হলো। তার আগ দিয়ে বার্সিলোনায় দু'মওসুম কাটিয়ে শেষদিকে নাম্বার টেন খানিক বিরক্ত। অথচ মারাদোনার তখন মধ্যগগণ। সেরা ফর্মে খেলছেন। লিবারো হিসেবেই।
মারাদোনা তো লিবারো হিসেবেই খেলে গেলেন পুরো সময়টা। তবুও গোল করেছেন অনেক। লিবারোর খেলাই হলো তীক্ষ্ণ নজর রাখা দলনেতার মত। একটু নিচ দিকে নেমে মাঠের পুরোটা বিশেষ করে বিপক্ষ দলের গতিবিধি ভালোভাবে বোঝা যায়। লিবারো পজিশনে খেলা মারাদোনা পুরোদস্তর দলনেতা ছিলেন, নেতা ছিলেন। ফুটবলের সেরা শিল্পী একইসাথে ফুটবলের বিদ্রোহী এক কন্ঠস্বর। এমন যুগলবন্দী কী খুব বেশি চোখে পড়ে, না পড়েছে আমাদের?
এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যুব বিশ্বকাপ জিতে ৭৯-তে আর্জেন্টিনায় ফিরে বাধ্যতামূলক সামরিক ক্যাম্পে যোগদান এড়ানোর ঘটনাটা। সিমিওনি, এসকুডেরো, বারবাসদের প্রতিনিধি হয়ে সোজা সামরিক অফিসারের সামনে স্যালুটু ঠুকে বলে বসলেন-
'জনাব, আমরা আপনাদের ট্রফি এনে দিয়েছি, অনুগ্রহ করে আমাদের সম্মানের সাথে অব্যাহতি দেয়া হোক'
বার্সিলোনায় জার্মান সতীর্থ বার্নাড সুস্টারকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট নুনেজ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া থেকে জাতীয় দলের সকল অনিয়ম বা আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন-এর সভাপতি গ্রান্দোনার বিরুদ্ধচারণে এক লহমা পিছপা না হওয়া- মারাদোনার সারা ফুটবল ক্যারিয়ার কেটেছে মাঠে দলকে জিতিয়ে বা অনন্যসাধারণ নৈপুন্য দেখিয়ে আর মাঠের বাইরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়ে। সাথে ছিল বিপক্ষ দলের লক্ষ্যভেদী ফাউল আর বিভিন্ন সময়ের ইনজুরি। এই নিয়েই আমাদের প্রিয় মারাদোনা। কিউবান প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কাছের বন্ধু আর বাম বাহুতে চে গুয়েভারার উল্কি আঁকা হাস্যোজ্জল মুখের ম্যারাডু।
(৪)
খেলোয়ার হিসেবে পেলে সবার সেরা, কিন্তু খেলাটাকে গৌরবান্বিত করার জন্য তার বুদ্ধিকে কাজে লাগায়নি-এটাই হলো আফসোস
ম্যারাডু… গ্যালারির দর্শকরা ভালোবেসে এই নামেই ডাকত মারাদোনাকে। ভালোবাসার বিপরীত প্রান্তে যে ঘৃণার চাষবাস থাকে সেই কদর্যতাও মারাদোনা দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, কখনও কখনও গায়েও মেখেছেন- কিন্তু সারা পৃথিবীর আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ভক্তদের কাছে, নেপোলিটানদের কাছে অথবা প্রাণপ্রিয় ক্লাব বোকা জুনিয়র্স-এর সমর্থকদের কাছে প্রিয়তম ম্যারাডু হয়েই ফিরে গেছেন, হৃদয়ে রয়ে গেছেন…থাকবেন। অনন্তকাল।
নানা বিতর্কের সঙ্গী হয়েছেন, সেই প্রাসঙ্গিকে নিজস্ব ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করেছেন বা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে করেননি কিন্তু এইসব ছাপিয়ে ফুটবল খেলাটাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন পেলুসা থেকে পেলু। আমাদের মারাদোনা। গ্যালারি দর্শকদের ম্যারাডু।
আমরা যারা নিঃশর্তভাবে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের (দেশেরও বোধ করি) ভক্ত হয়েছি তাদের মর্মাহত পর্ব শুরু হয়েছিল ৯০ থেকে। আমি ধারণা করি মারাদোনারও। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠে ফাইনাল পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল ম্যারাদোনার নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। কিন্তু রেফারি কোডেসালের বিতর্কিত পেনাল্টি সিদ্ধান্তে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে কান্নাবিজরিত মারাদোনাকে দেখেছি। দেখেছি আর ভারাক্রান্ত হয়েছি।
আমরা তখন হাইকোর্ট কম্পাউন্ডের ভিতরে থাকতাম। খেলা শেষে নানা আলোচনা হত কলোনির বড় ভাই-বন্ধুদের সাথে। আর ছিল আজাদের শোরুমে গিয়ে দুই টাকা দামে ভিউ কার্ড কেনা। মারাদোনার কত কত ভিউকার্ড যে কিনেছি আমি। বিশ্বকাপ হাতে নেয়া বিখ্যাত ছবি অথবা ৮২ বিশ্বকাপের সেই ঝাকড়া চুলের মারাদোনা। এখনও চোখে ভেসে ওঠে। এখনও বিশ্বকাপ হলে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ ছেয়ে যায় আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পতাকায়। এই কোটিপ্রাণ ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তখন মারাদোনা আর এখন মেসি। তবু আমি ফুটবল ভক্ত হিসেবেই মেসি আর পেলের চেয়েও মারাদোনাকে এগিয়ে রাখি। কেন?
ফুটবল স্কিলে মেসি এগিয়ে আছে, গোল করার ক্ষমতায় নিঃসন্দেহে পেলে কিন্তু অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড পড়ে একটা মিডিওকার ক্লাবকে শীর্ষস্থানে বসানো অথবা ভঙ্গুর জাতীয় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অনন্য ক্রীড়ানৈপুন্যে এক সুঁতোয় বেধে বিশ্বকাপ জেতানো- মারাদোনা ছাড়া কেউ পারেনি। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে '৭৯ এর আর্জেন্টিনা যুব দল, '৮৬-এর বিশ্বকাপ, বার্সেলোনায় দু'মওসুম আর অজেয় নেপোলী- বারেবারেই মারাদোনাকে মহানায়কের আসনে বসিয়েছে।
মহানায়ক, যার জন্য সেই ৮৬ সালে আমরা উদ্বেলিত হতাম, যার খেলা দেখে আমাদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল। যার সাদা-নীল জার্সি দেখে আমরা আর্জেন্টিনা নামের একটা দেশকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এই ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই। করা যায় না। যাবেও না।
ভালোবাসাই তো তাই। আবেগের কাছে নত, বল্গাহীন!
(৫)
সবসময়, সবসময়…জাতীয় দলের হয়ে খেলাই ছিল আমার সেরা অনুভূতি আর গর্ব
আত্মজীবনীর একদম শেষে অগ্রজ, সমসাময়িক আর অনুজ একশজন ফুটবল খেলোয়ার নিয়ে মন্তব্য করেছেন মারাদোনা। অনুবাদের এই অধ্যায় লিখতে যেয়ে আমি সবচাইতে বেশি আনন্দ পেয়েছি। কখনও বিশ্লেষণধর্মী, কখনো আবেগে টইটুম্বর, কখনও তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ কখনও বা নিছক হাস্যরস। শুরু হয়েছে পেলেকে দিয়ে আর শেষ করেছেন ডেভিড ব্যাকহামের কথা বলে।
অটোবায়োগ্রাফি অফ মারাদোনা– বইটা আমি দ্বিতীয়বার কিনেছিলাম। তার দরকার ছিল না আসলে। কিন্তু প্রথম বইটা অনুবাদ করার সুবিধার্থে আলাদা আলাদা চ্যাপ্টার কেটে খগাবগা করে ফেলেছিলাম। অনুবাদ শেষ করে প্রকাশককে যখন পান্ডুলিপি দেই, তখন মনে হল আস্ত বইটা আমার পাশে থাকুক। অনুবাদ আর মূল বই পাশাপাশি রাখব। তারপর একদিন সুন্দর সকালে চা খেতে খেতে বাংলা অনুবাদ পড়া শুরু করব।
২০১৯-এর একুশে বইমেলায় মারাদোনার আত্মজীবনীর বাংলা অনুবাদ বই আকারে আসার পর সেই লগ্ন আর আসেনি। সেই লগ্ন কাল রাতে এলো। মারাদোনার চলে যাওয়ার সংবাদ শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর হুড়মুড় করে মন খারাপ শুরু হলো। সেই মন খারাপ আমাকে কোথায় কোথায় নিয়ে গেল! '৮৬ সালে আব্বার সাথে বসে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলে মারাদোনা নামের এক ম্যাজিশিয়ানকে দেখা, '৯০-এ মারাদোনা আর আমাদের আর্দ্র হৃদয়, '৯৪-এ ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ সংবাদে হৃদয় ভেঙে যাওয়ার গল্প থেকে ফ্ল্যাশ ব্যাকে ফাইওরিটোর সেই ছোট্ট পেলু আর বল নিয়ে কিপি আপি করতে করতে পথচারীদের অবাক দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এক স্কুল বালক স্কুলে যাচ্ছে…সব যেন ফিরে ফিরে আসতে লাগল। আমি মারাদোনার বইটা হাতে তুলে নিলাম। বাঁধ ভাঙা দুঃখকে মারাদোনার মত আলতো ডজে পায়ে ঠেলে হাসিমুখে।
মারাদোনা আমাদের শৈশবের আনন্দ খুঁজে খুঁজে ফিরিয়ে দিতেন। সেই আনন্দনগরে আমরা ফুটবল খেলা দেখতাম।
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে, দলবেঁধে বা একা।