Published : 19 Dec 2019, 02:04 PM
আশির দশকে এরশাদ যেদিন রাষ্ট্রধর্ম বিল সংসদে পাশ করে সেদিন দেশের অনেক সুধীজনকে দুঃখিত হতে দেখেছিলাম। তাদের ভেতর অনেকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পরে সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংসের কাজ মোশতাক ও জিয়াউর রহমান যা শুরু করেছিলেন তার কফিনের শেষ পেরেকটি মারলেন এরশাদ। যে ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে ওই ৮ম সংশোধনীতে দেশের হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের একটি আদেশ ছিলো। সেটা নিয়ে দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। অনেক আইনজীবী গ্রেফতার হন। দেশে বেশ একটা তুমুল কাণ্ড বাধে। তবে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল নিয়ে অমন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল নিয়ে দেশের সকল মানুষ মিলে আন্দোলন করার জন্য কোনো সংগঠন গড়ে ওঠে না। সংগঠন গড়ে তোলে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা। অর্থাৎ দায়টি শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই মানুষগুলোর। অন্য কারো নয়। তারপরে ৮ম সংশোধী বাতিলের প্রার্থনা করে হাইকোর্টে একটা রিট হলো। ওই রিট সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়াল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ বাতিলসহ অনেক কিছু বাতিল করে দিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন (পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপতি) এর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ। আর ওই রায়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন প্রধান বিচারপতি হিসেবে মন্তব্য করলেন, যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টি সেনসেটিভ তাই এটা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া থেকে বিরত থাকলো সুপ্রিম কোর্ট।
একজন অতিক্ষুদ্র নাগরিক, অতিক্ষুদ্র সাংবাদিক হিসেবে সেদিন মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, সংবিধানের কোন বিধান বলে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টি সেনসেটিভ বলে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলো। সংবিধান ও বিচার বিভাগের কাছে কোনোটাই কম বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না। তাদের কাছে সংবিধান অনুযায়ী সকল ন্যায়-অন্যায় সমানভাবে বিবেচিত হবে। আর রাষ্ট্রধর্ম যেহেতু সংবিধানের মূল চরিত্রের সংঙ্গে যায় না তাই সেটা তো বিচার বিভাগ বাতিল করেই দিতে পারতো। ভাষা সৈনিক গাজীউল হক শুধু একজন ভাষা সৈনিক ও বুদ্ধিজীবীই ছিলেন না তার সময়ে হাতে গোনা কয়েকজন আইনজীবীদের একজনও তিনি। আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন, তাই একদিন তাকে বলি, কাকু ( তাকে কাকু বলেই সম্বোধন করতাম) বিচার বিভাগ কোন আইনে বা সংবিধানের কোন ধারা বলে বললো, রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টিকে সেনসেটিভ বলে এ নিয়ে বিচার বিভাগ কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া থেকে বিরত থাকলো। গাজীউল হক অনেকটা হুংকার ছেড়ে বললেন, দেখো এই ডিসি পরীক্ষায় ফেল করা অফিসার যখন দেশের প্রধান বিচারপতি হয় তখন এমন অবস্থাই হয়। গাজীউল হক আসাম বেঙ্গল বোর্ডে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা ছাত্র ছিলেন। আর তার সববিষয়ে জ্ঞানের পরিধি নিয়ে লিখতে গেলে এ লেখা ভিন্ন দিকে চলে যাবে। তারপরে তিনি বললেন, বিচার বিভাগ এ রায় দেয়নি। এরশাদের কথা মতো বিচারপতি সাহাবুদ্দিন এই রায় দিয়েছেন। আমি বললাম তা আপনি কোনো ভাষণে বলছেন না কেন, তিনি বললেন, দেখ দেশের বিচার বিভাগকে নষ্ট করতে নেই। আমি এ কথা বললে দেশের মানুষ বিচার বিভাগের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাবে। যাহোক, তারপরে আরো অনেক কথা হয়। সেগুলো ভিন্ন বিষয়। তবে গাজীউল হকের একটি দীর্ঘশ্বাসের কথা এখনও মনে পড়ে। এই আলোচনা শেষে তিনি বললেন, দেখ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একটি নরগোষ্ঠীকে আনতে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়, দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। এরশাদ, সাহাবুদ্দিনের মত মানুষের পক্ষে এগুলো বোঝা সম্ভব নয়। তবে জাতিকে আবারো দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে।
সেদিন তরুণ রিপোর্টার ছিলাম আজ প্রৌঢ় সাংবাদিক। পরিচয় দেবার সময় ছোট ভাইয়েরা, সন্তানেরা সম্মান জানিয়ে বলে সিনিয়র সাংবাদিক। সিনিয়র অনেক বড় বিষয়। সে সম্মান রাখতে পারি কিনা জানি না। তবে সিনিয়রের একটা দুর্ভাগ্যও থাকে। তাকে দেখতে হয় বেশি আবার এই বয়সে এসে এমন চিন্তা জাগে যে, এগুলোর তো কোনো শেষ দেখে যেতে পারবো না!
যেমন আশির দশক থেকে আজ দুই হাজার উনিশ শেষ হতে চলেছে। মাত্র কয়েকদিন পরে দুই হাজার বিশ লিখবো। এর ভেতর দেখলাম ধীরে ধীরে ৮ম সংশোধনী বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবি হারিয়ে গেলো। এমনকি সমাজে ও রাষ্ট্রে এখন অনেকে মনে করে এটা শুধুমাত্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি দাবি। এদিকে সংবিধানেরও অনেক সংশোধনী হলো। আর সেই সব সংশোধনী শেষে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানকে সোনার পাথর বাটি বানালো। অর্থাৎ আমাদের সংবিধানে সেক্যুলারইজমও আছে আবার রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও আছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে এ নিয়ে আমার মত হলো সংবিধানে কী থাকলো সেটা অনেক সময় বড় নয়, বড় হলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে বা কারা থাকলো। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যদি আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, এমনকি জাসদ বা ওয়ার্কাস পার্টিও থাকে তাহলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা থাকলেও অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি কোনো অবিচার হবে না অন্তত ধর্মীয় কারণে। আর্থিক বৈষম্য, ক্ষমতার লড়াইয়ে অনেক কিছু ঘটতে পারে তবে ধর্মীয় কারণে কিছু ঘটবে না। আবার সংবিধানে যদি সেক্যুলারইজম বর্তমান থেকেও জামাত-বিএনপি বা জাতীয় পার্টির মত দল ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা নিরাপদ নয়। কারণ বিএনপির আমলে ২০০১-এ সবথেকে বেশি হিন্দু পারসিকুয়েশান হয়েছে। আর এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে দাঙ্গা বাধিয়েছিলো। (বাস্তবে দাঙ্গা নয় হিন্দুদের ওপর হামলা ও সম্পত্তি লুট)
আশির দশকের এই কথাগুলো মনে পড়ছে এই সপ্তাহ ধরে দিল্লির বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে ঘুরতে। এই যে এক সপ্তাহের বেশি ভারতে আছি এ সময়টায় যারা ভারতের বাইরে বসে ভারতীয় মিডিয়া দেখছেন বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মিডিয়ায় ভারতের খবর দেখছেন তাদের অনেকে হয়তো মনে করছেন দিল্লির অবস্থা খারাপ। কিন্তু সকাল দশটা থেকে রাত বারোটা অবধি দিল্লির নানান প্রান্তে ঘুরে, নানান মধ্যবিত্ত আড্ডায় বসে মনে হয় না দিল্লিতে কিছু ঘটছে। এমনকি দিল্লির বা ভারতের সাধারণ মানুষ এ নিয়ে কনসার্ন। যেমন আসামে যেদিন চারজন মারা যায় ওইদিন দিল্লির এক শিক্ষাবিদের সঙ্গে বসে লাঞ্চ করছিলাম। ভদ্রলোক শতভাগ সেক্যুলার ও রাজনৈতিক সচেতন। তিনি বললেন, এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আজ আন্দোলন যেখানে পৌঁছে গেছে এটা বিজেপি সরকারকে খুব মুশকিলে ফেলে দেবে। আমার সঙ্গে যেহেতু তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাই অনেকখানি বিজ্ঞের মত বলি, আসাম কিন্তু কাল বা পরশু'র ভেতর শান্ত হয়ে যাবে। তারপরে যেটুকু থাকবে তার ভেতর দিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে চলবে। হয়তো কয়েকদিন একটু রাতের দিকে সান্ধ্য আইন থাকবে। ইন্টারনেটের লাইন একটু ডাউন করে রাখাবে। তিনি আমাকে বলেন, আমার মনে হয় স্বদেশ আপনি ভুল করছেন?
আমি বলি, দেখুন আপনারা ১৯৪৭ এর পরে আর কোনো আন্দোলন করেননি। আর আমাদের ৪৮ থেকে প্রতিটি জেনারেশান বড় হয়েছে আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। আমরা জানি একটি আন্দোলন কীভাবে করতে হয়। এবং কোন আন্দোলন কতদূর গড়ায়। আপনাদের এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আপনাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাছাড়া সম্পূর্ণ অসংগঠিত এবং শুধু একটি বিশেষ ধর্মের লোকের একটি আন্দোলন তাই এটা খুব বেশি দূর যাবে না।
তিনি বলেন, দেখেন স্বদেশ নাগরিকত্ব বিল আইন হলে আর ইন্ডিয়ার সেই ইন্ডিয়া চরিত্র থাকে না।
আমি তাকে বলি, দেখুন এই একাডেমিক বিষয়ের সঙ্গে কিন্তু যে আন্দোলন হচ্ছে এই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যারা একাডেমিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন তারা সকলে হয় অফিসের চায়ের টেবিলে না হয় ড্রয়িংরুমের কফি কাপের ঝড়ে। বাস্তবে যারা রাজপথে তারা কি এই একাডেমিক বিষয় বোঝে? একাডেমিক বিষয় আর রাজপথের আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের কনর্সানের বিষয়টি এক নয়।
আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে একজন অতি প্রবীণ সাংবাদিক বললেন, এটা অবশ্য সত্য। যেমন এই নাগরিকত্ব বিল ভারতের সংবিধানের উদার চরিত্রের সঙ্গে কীভাবে মেলাবে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এটা নিয়ে ভারতের সাধারণ নাগরিকের মাথাব্যথা খুব বেশি হবে না। কারণ, এর সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের কোনো দেনা-পাওনা নেই। এটা তো মাত্র পাকিস্তানে বসবাসকারী ত্রিশ লাখ হিন্দু, বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দু ও আফগানিস্তানের অল্প কিছু হিন্দুর বিষয়। এর সঙ্গে ভারতের কোনো নাগরিকের কোনো লাভ লোকসানের বিষয় নেই।
ওই শিক্ষাবিদ তখন বলেন, কিন্তু মুসলিম নাগরিকরা তো এ বিষয়ে কনসার্ন হতে পারে?
এখানে একটি কথা আমার কানে বাজলেও বন্ধুত্বের খাতিরে বলিনি সেটা হলো, উদার ওই শিক্ষাবিদ ভারতীয় নাগরিকদের একটি অংশকে মুসলিম নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করছেন না শুধু- তিনি বলছেন, এটা তাদের জন্যে একটি বিষয় হতে পারে।
প্রবীণ ওই সাংবাদিক বললেন, এটা কীভাবে তাদের বিষয় হবে? কারণ এখানে তো তাদের কোনো স্বার্থে আঘাত হানা হয়নি। তারা কি চায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দিক ভারত! আর এটা চাইবার অধিকার কি কোনো ভারতীয় নাগরিকের আছে?
ওই শিক্ষাবিদ বলেন, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেবার অধিকারটি কোথা থেকে আসছে?
প্রবীণ সাংবাদিক এবার হেসে বললেন, আমাকে বিজেপির সমর্থক মনে করবেন না। আমি সাংবাদিক। কোনো রাজনৈতিক বির্তকে যাবো না। তবে এটা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা। তারা এটা বাস্তবায়ন করবে। তাছাড়া ভারত পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো হিন্দু-মুসলিমের ভিত্তিতে। ভারতে আগত হিন্দু নাগরিকদের নাগরিকত্বের বিষয়টি এখনো সেটেলেড নয়। একেও যদি ভিন্ন কথা বলেন, তাও মেনে নিয়ে বলছি বিজেপির বিপরীতে যারা তারা কী করছে?
তাদের দুজনের আলোচনা যখন জমে উঠেছে তখন চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। যাতে আমি বেশি শুনতে ও জানতে পারি। মাঝখান দিয়ে আমি কথা বলে তাদের সময় নষ্ট না করি।
যাহোক, শিক্ষাবিদ ভদ্রলোক বললেন, কেন অন্যরাও আন্দোলন করছে। ভদ্রলোকের মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক বললেন, আপনিই তো বললেন, মুসলিম নাগিরকরা কনসার্ন হবে। তাছাড়া আপনি আসাম বা সেভেন সিস্টারের কথা বাদ দিন সেখানে উপজাতি এবং বাঙালি বা ভারতের অন্যস্থানের এই নাগরিকদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তাছাড়া এই এনআরসি তো আসামে বিজেপির হাত দিয়ে শুরু হয়নি। কংগ্রেসকেই করতে হয়েছিলো আদালতের নির্দেশে। সবে মিলে ৩৭ বছরে আজ বিষয়টি এখানে এসেছে। তাছাড়া আসামের কয়েকটি জেলায় ঘটনাটা ঘটছে। তাছাড়া আসামের ইতিহাসের গতি প্রকৃতিটাও তো জানতে হবে। বলে প্রবীণ সাংবাদিক আমার মুখের দিকে তাকালেন, তার দৃষ্টিশক্তির অর্থ বুঝতে পেরে আমি স্বাভাবিকভাবে বলি আসামের পাঁচ-সাত'শ বছরের ইতিহাস অল্প বিস্তর জানি। তিনি তখন হেসে বললেন, তাই তো আপনি অত সহজে বললেন, দুই তিন দিনের বিষয়।
শিক্ষাবিদ তখন বললেন, তবে পশ্চিমবঙ্গে মমতা কিন্তু দেখিয়ে দিচ্ছে।
প্রবীণ ওই সাংবাদিক বললেন, দেখুন পশ্চিমবঙ্গে মমতা ও বিজেপি যে যার রাজনীতি করছে। তবে এখনও অবধি ফিফটি ফিফটিতে চলছে। কেউ এগিয়ে নেই।
শিক্ষাবিদ বললেন, তার মানে?
প্রবীণ সাংবাদিক বললেন, তার মানে অত্যন্ত সহজ। প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের ভেতর মমতার প্রভাব আছে। মমতা তাদেরকে কাজে লাগাচ্ছে। পুলিশকে একটু নিষ্ক্রিয় রেখে আন্দোলনকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি চাচ্ছে আন্দোলনের নামে মুসলিমরা যতই জ্বালাও-পোড়াও করবে ততই তাদের লাভ। কারণ, তারা সাধারণ হিন্দুদের কাছে ও বর্হিবিশ্বে মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরতে পারবে। মুসলিমদের যতই খারাপভাবে চিহ্নিত করতে পারবে ততই বিজেপির লাভ হবে।
শিক্ষাবিদ বললেন, আপনি এই সহজ সরল বিষয়টি বুঝতে পারছেন, আর আপনি কি মনে করেন মমতার মত ঝানু রাজনীতিক এই সত্যটি বুঝতে পারছে না?
সাংবাদিক মহোদয় উত্তর দিলেন, ঠিকই পারছেন। তবে দু'দল এখানেও খেলছে। বিজেপি মনে করছে যদি এই আইন শৃঙ্খলার কথা বলে কেন্দ্রের শাসন দেয়া যায় তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তারা লাভবান হবে। আর মমতা মনে করছে বিজেপিকে যদি কেন্দ্রীয় শাসনের ফাঁদে ফেলতে পারি, অর্থাৎ তারা যদি তার সরকার ভেঙ্গে দেয় তাহলে সে আগামী নির্বাচনে সিম্প্যাথি ভোট বেশি পাবে।
সেদিন আরো আধঘন্টা মতো আলোচনা হয়। তবে বিষয়টা একটু অন্যদিকে চলে যায়। তার পরে আমরা ক'জন মিলে দিল্লির বিভিন্ন স্থানে অনেক রাত অবধি ঘুরি। এর পরে আমার ডেরা জামিয়া মিলিয়ার কাছে তারা আমাকে নামিয়ে দিয়ে যায়। এত ঘোরাঘুরি করলাম কোথাও জীবন যাত্রায় কোন ছাপ পেলাম না যে দিল্লিতে কিছু ঘটছে। অন্যান্য সময় যে স্বাভাবিক দিল্লি দেখি সেটাই দেখতে পাই। যানজটও অন্যান্য সময়ের মত।