Published : 17 Jan 2018, 05:16 PM
খ্রিস্টিয় নববর্ষ ও বর্ষবিদায় বাঙালির জাতীয় জীবনে তেমন একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে না। করার কথাও না তেমন একটা। কারণটা প্রধানত দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর শতকরা ৮০ ভাগ সম্ভবত এখনও গ্রামীণ। গ্রাম-বাংলার এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে, এমন কি ইংরেজরা থাকাকালেও, নতুন বছরের আগমন-নির্গমন সংক্রান্ত খবরটাই পৌঁছে না। অতীতে আরও পৌঁছাতো না। তদুপরি খ্রিস্টিয় বছর হওয়াতে স্বভাবতই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিবস দুটি গভীর তাৎপর্য বহন করায় তাঁরা ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসব পালন থেকে শুরু করে তা ৩১ ডিসেম্বর বর্ষ-বিদায় বা থার্টিফাস্ট নাইট এবং পরদিন পহেলা জানুয়ারি নববর্ষ বা নিউ ইয়ার্স ডে পর্যন্ত ব্যাপকভাবেই আনন্দে উৎসবে মেতে থাকেন।
কিন্তু বাংলাদেশে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী সংখ্যায় এতই অল্প যে তা নেহায়েতই হাতে গোনা এবং খ্রিস্টান পল্লী যে কয়টি এদেশে আছে তার সংখ্যাও খুবই কম হওয়াতে তাঁরা যে উৎসবাদি পালন করে থাকেন তা ব্যাপক বাঙালি জীবনে দৃশ্যমানতা অর্জনে সক্ষম হয় না। সে কারণে গ্রাম-জীবনে খ্রিস্টিয়বর্ষ পূর্তি ও নববর্ষ ব্যাপকভাবেই অজানা দুটি দিন। বড় দিনও তাই।
তার পরেও দিবস দুটি বাঙালির নগর-জীবনে অনেকটাই স্থান করে নিয়েছে। ইংরেজ আমল থেকে ব্যাপক চর্চার এবং অভ্যাসবশত আমরা তো বছরের ৩৬৫ দিনই তারিখ মনে রাখি খ্রিস্টিয় বছরের। পহেলা বৈশাখ ছাড়া বাকি ৩৬৪ দিন বাংলা কোন মাস কবে শুরু হলো, কবে শেষ হলো তাও আমরা কেউই বলতে পারি না- স্মরণেও রাখতে পারি না। কিন্তু ৩৬৫ দিনের মধ্যেই যে মাস ও দৈনন্দিন তারিখগুলো খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে মনে রাখি সেগুলো হল- খ্রিস্টিয় বছরের- একেবারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
তারিখ গণনা বা মনে রাখার ক্ষেত্রে গ্রামগুলিতেও বাংলা মাস ও বছরের চর্চা আদৌ নেই। গ্রামের মানুষও দিব্যি খ্রিস্টিয় সাল, মাস ও তারিখ বলতে পারেন। বাংলা মাস কোনটা কতদিনের হবে তা অবশ্য সহজ করে দিয়েছে অনেকদিন আগেই বাংলা একাডেমি। এখন বাংলা বছরের প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিনে এবং পরবর্তী ৭ মাস ৩০ দিনে গণনা করা হয়। বাংলা ক্যালেন্ডারে তা ছাপা হয়-ছাপা হয় নিত্যদিনের সংবাদপত্রগুলিতেও। এতদসত্ত্বেও বাংলা সন, মাস ও তারিখের কোন হদিস সমাজে আদৌ মেলে না। ফলে বাংলা সনের সংশোধনী কার্যত, নিরর্থক এবং তাৎপর্য্যহীন হয়ে পড়েছে।
যা হোক, ইংরেজদের ব্যাপার, বিদেশিদের ব্যাপার, খ্রিস্টানদের ব্যাপার প্রভৃতি যাই বলি না কেন, গোটা পৃথিবীর সকল দেশের মানুষই খ্রিস্টিয় বছরকেই নিজেদের বছর হিসেবে ধরে নিয়েছে। বড়দিনের ছুটিও পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পালিত হয়। গোটা পৃথিবীর সংবাদপত্রগুলিও ডিসেম্বরের শেষ এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে নানাবিধ খবর এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম নয়। নিত্যদিনের সংবাদপত্রগুলির পাতা উল্টালেই দিব্যি আমরা তা দেখতে পাই।
বর্ষ পরিক্রমার অমোঘ নিমেশে তাই আমরা দিব্যি নতুন বছর ২০১৮ সালে ঢুকে পড়েছি। পেছনে ফেলে এলাম বহু ঘটন-অঘটন-পটিয়সী ২০১৭ সালকে। তাই ২০১৭ কে জানাই বেদনা-মথিত বিদায়; ২০১৮ সালকে নতুন সম্ভাবনাময় এক বছর হিসেবে গণ্য করে গভীর আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানাই।
২০১৮ সালে সম্ভাব্য সর্ববৃহৎ যে কর্মযজ্ঞটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আমাদের জাতীয় সংসদের নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনটি এ বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনটি যেহেতু অতিমাত্রায় বিতর্কিত এবং প্রায় একদলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে-সেই হেতু এ বছরের নির্বাচনটিতে সকল রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য অংশগ্রহণের কারণে তা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে সকলের মনেই আশা জুগিয়েছে। আমরা আশা করবো, নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনটি পরিচালনা করে দেশবাসীকে তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবেন। আর তা করতে গেলে নির্বাচনী আইন-কানুন যা কিছু ঘাটতি আছে সেগুলি সময় থাকতে সংশোধন করে নেবেন।
আমার দেখা নির্বাচনগুলি নিয়ে পরবর্তীতে একটি নিবন্ধ লেখার ইচ্ছা রইলো। এখন শুধু এটুকুই বলে রাখি, নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হলে সরকার আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক দলসমূহ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং সংবাদ মাধ্যমগুলিকে বিশেষ আগ্রহী ও উদ্যোগী হতে হবে। প্রত্যাশা এই যে, গণ আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সকলের পারষ্পরিক সহযোগিতায় ২০১৮ সালের নির্বাচনটি গলদমুক্ত, ত্রুটিমুক্ত এবং সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হবে। কিন্তু তা প্রত্যাশা মাত্র। পূরণ হবে কিনা তা ভবিষ্যত বলবে।
২০১৮ র কাছে মানুষের প্রত্যাশা শুধু একটি সুন্দর নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রত্যাশা আরও অনেক। সেই প্রত্যাশাগুলির শীর্ষে রয়েছে কোটি কোটি মানুষ যেন ক্রমবর্ধমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বি অবস্থান থেকে হ্রাস পায়-অন্তত তার এক তৃতীয়াংশ মূল্যে যেন পণ্য দ্রব্য মানুষের কাছে পৌঁছায়। সেই ২০১৭ সালের সিলেটের (বৃহত্তম) হাওড় অঞ্চলে বন্যায় ফসল হানির সময় থেকে চালের দাম সারা দেশে যেভাবে হু হু করে বাড়তে শুরু করলো-ক্ষমতাসীনদের নিস্পৃহতায় সেই প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত। প্রথমে চালের দাম বাড়া শুরু করলেও শিগগিরই ঐ মূল্যবৃদ্ধি প্রক্রিয়া তাবৎ সবজি, মসলা, পেঁয়াজ, দুধ, মাছ, মাংসের দামেও ছড়িয়ে পড়ে মধ্যবিত্ত, নিম্ন ম্যধবিত্ত, স্বল্পবিত্ত ও বিত্তহীনদের জীবনে নাভিশ্বাস তুলে দেয় এবং তাদের কোন মহল থেকেই লাগাম টেনে ধরার দৃশ্যমান কোন চেষ্টাও শুরু না করায় অদ্যাবধি তা দিব্যি অব্যাহত আছে। বাজার করার আতংকে মানুষ এখন আদতেই দিশেহারা। অতিথিবৎসল বাঙালি পরিবারগুলি এখন অতিথ আসবে শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাদের আগমনের কারণে বড় অঙ্কের টাকা খরচের কথা ভেবে । তাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো পণ্যমূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস করার প্রক্রিয়াটি।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আর একটি আতঙ্ক। সরকার উৎপাদন ব্যয় না কমিয়ে, বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ না করে, অফিস আদালতে এসির ব্যবহার হ্রাস না করে, বোঝা চাপাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাঁধে। সে বোঝায় তাঁরা এতটাই ক্ষুব্ধ যে নতুন ভার বইবার শক্তি-সামর্থ্য তারা হারিয়ে ফেলেছেন।
সরকারের গর্বের দিকটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ হাতে নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতৃত্বস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে – শাস্তির রায়ও কার্যকর করার বিষয়টি। কিন্তু সেই বিচার প্রক্রিয়া হঠাৎ স্তিমিত হয়ে পড়ায় মানুষের মনে সন্দেহ সংশয় দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দ্রুতই কি তা পুনরায় চালু হবে? সরকার বিষয়টি পরিস্কার করুন। একজন যুদ্ধাপরাধীও যেন বিচারের আওতার বাইরে না থাকতে পারে-তা নিশ্চিত করা হোক।
প্রত্যাশা এই যে বন্ধ ঘোষিত সকল সরকারি-বেসরকারি মিলে অবিলম্বে উৎপাদন নতুন করে শুরু করা হোক। জীবিত শ্রমিক কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যোগদান করতে বলে নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করা হোক। যাঁরা মারা গেছেন-তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিবারের সদস্যদেরকে অবিলম্বে পরিশোধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক।
নতুন করে কতিপয় কল-কারখানা নানা স্থানে স্থাপনের সরকারি-বেসরকারি বা যৌথ উদ্যোগ সত্ত্বর গ্রহণ করা হোক। রপ্তানি বৃদ্ধি, আমদানি হ্রাস করারও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে। এ ব্যাপারে সুদূর প্রসারী কর্মসূচী না নিলে বেকার সংখ্যা ও দারিদ্র্য বাড়তেই থাকবে।
প্রত্যাশা সকল ক্ষেত্রেই। কৃষি উৎপাদন আজও প্রকৃতি নির্ভর। ফলে নিয়ত উৎপাদন সঙ্কট দৃশ্যমান হচ্ছে। কৃষি-বিজ্ঞানীরা যাতে নতুন নতুন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃতি, জীব, উৎপাদন, বছরের একই ক্ষেতে বহুবার বহু ফসল উৎপাদনের মত নতুন নতুন আবিষ্কার করুন। কৃষি জমির পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েই চলেছে-ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে অন্ধ্। যারা কৃষিজমি নানাভাবে কিনে ভিন্নতর কাজে ব্যবহার করছেন তার অবসান ঘটানো অপরিহার্য। ২০১৮ তে তা ব্যাপকভাবে শুরু হোক। কৃষি, কৃষক ও দেশ বাঁচুক।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা আশঙ্কায় জর্জরিত। মানবসম্পদ এবং শিক্ষা আজও দূরাশা। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অপ্রতুল। তাঁদের বেতন-এমপিও ভূক্তি কেন আটকে রাখা হয়েছে তাও দুর্বোধ্য। শিক্ষকেরা অনশন ধর্মঘট করবেন দিনের পর দিন, অভুক্ত থাকবেন শুধুমাত্র এমপিও ভুক্তির দাবিতে এটি জাতির জীবনে এক কলঙ্কই লেপন করে দিলো, যার জন্য সরকার শতভাগে দায়ী। অসংখ্য শিক্ষক অনশনে থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন-হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা শীতের প্রাবল্যসত্ত্বেও খোলা আকাশের নিচে অনাহার-ক্লিষ্ট দেহে দিনরাত কাটাচ্ছেন-ভাবতেও বেদনার্ত বোধ করি। সংহতি জানাই অনশনরত শিক্ষকদের সাথে। আর অবাধ বিষ্ময়ে ভাবি আজকের ছাত্র-আন্দোলন কি এতটাই নিষ্ক্রিয়, যে তাদের শিক্ষকদের এ অবস্থাতেও তাদের মনে কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
২০১৮-তে আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বাধীন জোটের শরীকদের একটি বার্তা দিয়েছে। মন্ত্রীসভায় দলীয় প্রভাব আরও বাড়লো জোটসঙ্গীদেরকে দুর্বলতর অবস্থানে ফেলে। লক্ষণটির দক্ষিণপন্থীদের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক। বার্তাটি জানান দিল দ্রুতই নতুন শক্তিশালী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট গঠনের বিকল্প নেই। বার্তাটি পৌঁছালো সবার কাছে অকস্মাৎ, জানুয়ারির ২ তারিখে। সবিষ্ময়ে জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি তবুও কী ঐক্যবদ্ধ হবেন সামনের দিনগুলির চ্যালেঞ্জ কার্য্যকরভাবে মোকাবিলা করতে?
২০১৮ নারী জীবনে কী প্রভাব ফেলবে? কমবে কি (বন্ধ হবে এমন আশা করি না) নারী ধর্ষণ, নারী-নির্যাতন, নারী অপহরণ? প্রয়োজনীয় জাতীয় জাগরণ এ প্রশ্নে আর কতো বিলম্বিত হবে?
বিচারাঙ্গণ ২০১৭ তে নানা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে । সচেতন মানুষেরা শঙ্কিত। বিচার-বিভাগের স্বাধীনতার আকাঙক্ষা আর কতকাল অপূর্ণ থাকবে-কতকাল লাগবে বিচার বিভাগের মাথা তুলে দাঁড়াতে? একটু নড়াচড়া করতেই প্রচণ্ড আঘাত নেমে এসেছে সত্য, কিন্তু তবুও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অপরিহার্য। দলীয়করণ থেকেও বিভাগটিকে বাঁচাতে হবে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে। পারবে কি ২০১৮ এ ব্যাপারে গণ-আকাঙক্ষা পূরণ করতে?
বিদায় ২০১৭
সাড়ম্বরেও নয়-চোখের জলেও নয়। অনেকটা রুটিনের মতই বিদায় নিল ২০১৭ বাঙালির জীবন থেকে। অতীতের বহমান রক্তস্রোতে এই বছরটিও রঞ্জিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা সারাবছর ধরেই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদেরকে বারংবার আঘাত হেনেছে। সর্বশেষ রংপুরের গ্রামে সেদিনও হিন্দু-ঘরে জন্ম নেওয়া এক নির্দোষ ছেলে ফেসবুকে ইসলাম ও নবীর অবমাননা সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তাদের বাড়িঘরসহ প্রতিবেশি হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে লুটপাট করার ঘটনাও ঘটেছে। বছর জুড়েই নানাস্থানে প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরে আগুন, বাড়িঘর, ফসলি জমি দখল করে হিন্দু-বিতাড়ণ বিস্তর ঘটেছে। কিন্তু তার প্রতিবিধানের আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেই বা অপরাধীদের বিন্দুমাত্র শাস্তি দানের কোনও উদ্যোগও নেই। এভাবেই কাটলো সারাটি বছর।
২০১৭ সাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছরও বটে। বন্যা-বৃষ্টির প্রাবল্য, ব্যাপক ফসলহানি সব মিলিয়ে কৃষি, কৃষক ও ভোক্তা জীবন ছিল বিপর্যস্ত।
দুর্নীতিতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে, সম্ভবত এ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবি রাখে। হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও, লুটপাট, বিদেশে পাচারের মহোৎসবের বছর ২০১৭। বিস্ময়ের ব্যাপার, ব্যাংকিং এ দলীয়করণের ফল এতই ভয়াবহ- যে কারও গায়ে বিন্দুমাত্র আইনের আচরও লাগতে দেখা যাচ্ছে না- যা বিশ্বের কোথাও দেখা যাবে না। অপরাপর ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রাবল্য বিস্তর। দুদক যথারীতি চুনোপুটির গায়ে আঘাত হেনেছে-রাঘব-বোয়ালরা দিব্যি নিরাপদে থেকে গেল বরাবরের মতই।
এহেন বছরের বিদায় কাউকে বেদনার্ত করে না-আনন্দিত হবারও কারণ দেখি না। তবে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে পুলিশি কড়াকড়িরও যৌক্তিকতা নেই। তরুণ-তরুণীরা আনন্দে মাতবে তা তো আইনসিদ্ধই বটে।