যৌন নিপীড়ন নিয়ে মন্তব্য, রাহুল গান্ধীর বাড়িতে পুলিশ

ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় থাকার পর বিশেষ কমিশনার সাগরপ্রীত হুদা নেতৃত্বাধীন পুলিশের দলটি রাহুলের বাড়ি ছাড়ে, এরপর কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকেও একটি গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 08:52 AM
Updated : 19 March 2023, 08:52 AM

নারীরা এখনও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ রাহুল গান্ধীর করা এই মন্তব্য নিয়ে শুনতে কংগ্রেস নেতার বাসভবনে হানা দিয়েছেন দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

যৌন নিপীড়ন নিয়ে রাহুলের সঙ্গে কথা বলা নারীদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পুলিশ বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকে নোটিস দিয়েছিল।  

এরই প্রেক্ষিতে রোববার একদল পুলিশ রাহুলের ১২ তুঘলক লেনের বাড়িতে যান বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

খবর পেয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি ও জয়রাম রমেশের মতো কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রাহুলের বাড়িতে ছুটে যান।

ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় থাকার পর বিশেষ কমিশনার সাগরপ্রীত হুদা নেতৃত্বাধীন পুলিশের দলটি রাহুলের বাড়ি ছাড়ে, এরপর কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকেও একটি গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট বিবেচনায় নিয়ে রাহুল গান্ধীকে একটি প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছিল পুলিশ; কংগ্রেস নেতা এখন পর্যন্ত সেসব প্রশ্নের জবাব দেননি।  

পুলিশ বলছে, ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ মধ্যে শ্রীনগরে রাহুল যৌন নিপীড়ন নিয়ে ওই মন্তব্য করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, “নারীরা যে এখনও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, তা শুনেছি আমি।”

কংগ্রেস নেতা বলেছিলেন, একাধিক নারী তাকে তাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়ন সম্বন্ধে বলেছেন।

পুলিশ এখন ওই নারীদের বিস্তারিত জানতে চায়, যেন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ওই নারীদের সম্বন্ধে তথ্য পেতে বিশেষ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্তা রাহুলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন।

কংগ্রেসের শীর্ষ একাধিক নেতা বলেছেন, পুলিশের দেওয়া ওই নোটিসের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

দলটি এ নোটিসকে দিল্লি পুলিশের আরেকটি হয়রানি হিসেবেও দেখছে। 

“বিবৃতি হতে পারে, কিন্তু তারা ভিকটিমদের নাম জানতে জোর করতে পারে না,” বলছেন ভারতের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, রোববার পুলিশকে রাহুল ভারত জোড়ো যাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছিল, এবং তার অনেককিছুই তার মনে নেই বলে জানিয়েছেন। পুলিশ এরপর সাবেক কংগ্রেস সভাপতিকে আরেকটি নোটিস দেয় এবং তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে বলে জানায়। তবে এজন্য কোনো সমসয়সূচি ধার্য করা হয়নি।

 “এরকম সংবেদনশীল ক্ষেত্রে অনেকের জীবন ও নিরাপত্তা জড়িত। তথ্যপ্রমাণ পেতে এবং সাক্ষীরা যেন প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিতে আমাদের দল সংশ্লিষ্ট তথ্য জোগাড়ে কাজ করছে,” আগে এমনটাই বলেছিল দিল্লি পুলিশের একাধিক সূত্র।

ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ হওয়ার ৪৫ দিন পর পুলিশ এ বিষয়ে তথ্য চাইছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা পবন খেরা।

সরকার নার্ভাস হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

“আমরা আইন মেনে প্রতিটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাবো। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ কি ঠিক? ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ হওয়ার পরও ৪৫ দিন পার হয়ে গেছে, আর তারা এখন জিজ্ঞাসা করছে। সরকার যে নার্ভাস, এটা তাই দেখাচ্ছে,” বলেছেন খেরা।

আম আদমি পার্টির নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার যে তদন্ত সংস্থাগুলোকে ‘অপব্যবহার করছে’, তা বলতে তার দলের দ্বিধা নেই।

“কেন্দ্রীয় সরকার যে সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করছে, তা আমরা সবসময় বলে আসছি। এই অপব্যবহার যদি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও হয়, তাও বলতে বাধা নেই আমাদের। এটা ভুল। এটা হওয়া উচিত নয়।

“আমরা সেই ধরনের লোক নই, যারা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দেখে উল্লসিত হয়ে উঠবো, যেমনটা কংগ্রেসের নেতারা প্রায়ই আমাদের বেলায় করেন। যদি সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ভুল। এমনটা হওয়া উচিত নয়,” বলেছেন তিনি।