শ্রীলঙ্কা এমন বেহাল কেমন করে হল?

এক দশক আগেও শ্রীলঙ্কা ছিল অন্য রকম; তামিল টাইগাররা পর্যুদস্ত, গৃহযুদ্ধের অবসানে দেশটি যেন উড়ছিল। পর্যটননির্ভর দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠছিল; আসছিল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার; তা রোশনাই ছড়াচ্ছিল দোকানগুলোতে, আর সড়কে দেখা মিলছিল চকচকে সব গাড়ির।

ফারুক হোসেন, সহ সম্পাদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 08:22 PM
Updated : 2 April 2022, 08:22 PM

আর দশককাল বাদে সেই শ্রীলঙ্কায় সড়কে এখন বাতি জ্বলছে না, গাড়ি চালাতে মিলছে না জ্বালানি তেল, কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী।

পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ফুটে উঠল রাজধানী কলম্বোর একটি সেলুনের কর্মী সন্ধ্যামালি পূর্ণিমাকে ঘরের বাইরে রান্না করতে দেখে। স্বামী তার ট্যাক্সি চালক। দুজনে আয় করেও চার সন্তান নিয়ে চলতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

পূর্ণিমাদের জন্য গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ পাওয়া এখন অমাবশ্যার চাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই ঘরের বাইরেই রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে তাকে।

তাদের যে বাড়িটি আছে, তার দোতলা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। পূর্ণিমা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বললেন, “একটি বাড়ি বানানো কঠিন, তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এখন খাবার জোগাড় করা।”

এক মাস আগেও যেখানে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ছিল সাড়ে ৭ ডলার, এখন তা ৮৫ শতাংশ বেড়ে ১৩ ডলার ছাড়িয়েছে। জ্বালানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দামও। দুর্মূল্যের বাজারে চড়ছে মূল্যস্ফীতির পারদ।

শ্রীলঙ্কার সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী প্রসাদ ওয়েলিকুম্বুরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, যারা দিন আনে দিন খায়, তারা এই ধকল সামলাচ্ছে। ট্যাক্সি কিংবা টুক-টুকচালকদের মতো মানুষদের জন্য এটা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতি।

 

বিশাল অঙ্কের ঋণ, তার সঙ্গে মহামারীর খাঁড়ার পর ইউক্রেইন যুদ্ধ একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে সোয়া ২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কাকে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।

এই পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে জনবিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসের বাড়ির সামনে শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে কারফিউ জারি করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির কেন এমন অবস্থা হল, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ডয়চে ভেলে, বিবিসি, রয়টার্স থেকে তথ্য নিয়ে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

শ্রীলঙ্কায় গ্যাসের ঘাটতির কারণে কেরোসিনের জন্য মানুষের লম্বা লাইন। ছবি: রয়টার্স

খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। এমনকি বছরের বাকি সময়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।

দেশটির এখন যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে কেবল কয়েক সপ্তাহের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা যাবে।

বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির অর্থ হল, দেশটি জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে।

ডয়চে ভেলে লিখেছে, এই সঙ্কটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দিনে মাত্র চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে এবং ফিলিং স্টেশনগুলোর বাইরে লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে।

জ্বালানি সঙ্কটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যাওয়ায় সেখানেও উৎপাদন সঙ্কট দেখা দিয়েছে; ফলে দেশেজুড়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটে খাদ্য ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মজুদ। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধ কিনতে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গত মাসে জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে।

শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।

এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে শ্রীলঙ্কার রুপির অবমূল্যায়ন। মার্চের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপির বিনিময় হার খোলাবাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ায় তা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে ২৭৫ রুপি দরে লেনদেন হয়।

তা ছাড়া বিদেশি মুদ্রা বাঁচাতে গত বছর কিছু দিন সার আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকার। তার খেসারতও এখন দিতে হচ্ছে পণ্যমূল্যে।

ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত মাসে শ্রীলঙ্কা তাদের একমাত্র তেল শোধনাগারটি বন্ধ করে দেয়। ডিজেল সঙ্কট যত বাড়বে বিদ্যুতের লোডশেডিংও তত বাড়তে থাকবে।

বিদ্যুৎ না পাওয়ায় দেশটির প্রধান স্টক মার্কেটে লেনদেনের সময় কমিয়ে এনেও কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বাঁচাতে সড়ক বাতিও নিভিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎমন্ত্রী পবিত্র ভান্নিয়ারাচ্চি।

এমনকি মুদ্রণ সামগ্রীর অভাবে সংবাদপত্র ও মুদ্রণ শিল্পগুলো ছাপানো কমাতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুলগুলো কাগজের অভাবে পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

অর্থনৈতিক যন্ত্রণা শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। তাদের অনেকেই অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার জন্য সরকারকে দোষারোপ করছেন।

মূল্যস্ফীতির চাপে শ্রীলঙ্কায় এখন খাবার জোগানোই দায় হয়ে পড়েছে। ছবি: রয়টার্স

কর প্রত্যাহারে কোষাগারে চাপ

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

নির্বাচনী প্রচারের সময় রাজাপাকসে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রায় অর্ধেক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উৎপাদন ও উপযোগ বাড়ানোর উপায় হিসাবে আরও কিছু করও প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু এই কর কমানোর ফলে সরকারি কোষাগারের বিলিয়ন রুপির রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে। ফলে সরকারের অর্থায়নে ঘাটতি তৈরি হয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।

পর্যটন খাত থেকে দেশটির মোট অর্থনীতির ১২ শতাংশ জোগান দেয়। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে সেই খাতে ধস নেমেছে দুই বছর আগে।

বিবিসির তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে পর্যটন খাত থেকে দেশটির আয় ছিল ৪০০ কোটি ডলার। মহামারীর খাঁড়ায় পরের বছর তা ৯০ শতাংশ কমে যায়। মহামারী চলায় এখনও সুদিন ফেরেনি এই খাতে।

শ্রীলঙ্কার সরকারি ঋণ মহামারীর আগে থেকেই অসহনীয় পর্যায়ে ছিল। অনুমান করা হয়েছিল, এই ঋণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৯৪ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ১১৯ শতাংশ পর্যন্ত হবে।

কলম্বোর ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ গ্রুপের অর্থনীতিবিদ চেয়্যু দামসিংহে বলেছেন, “কর হ্রাস ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়নের ফলে অনিবার্য ওই সঙ্কট আরও শোচনীয় হয়েছে।”

শ্রীলঙ্কায় যারা দিন আনে দিন খায়, ট্যাক্সিচালকদের মতো সেই পেশার মানুষরা রয়েছে চরম সঙ্কটে। ছবি: রয়টার্স

অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা

রয়টার্স লিখেছে, এই সঙ্কটের মূলে রয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকারগুলোর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। এর ফলে চলতি হিসাবের ঘাটতির পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ২০১৯ সালের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কা হলো যমজ ঘাটতির দেশ। এই জোড়া ঘাটতি ইঙ্গিত দেয়, একটি দেশের জাতীয় ব্যয় তার জাতীয় আয়কে ছাড়িয়ে গেছে এবং ব্যবসায়িক পণ্য ও সেবার উৎপাদন অপর্যাপ্ত।”

কিন্তু বর্তমান এই সঙ্কট বেড়েছে ২০১৯ সালে রাজাপাকসার কর প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতির কারণে। ওই প্রতিশ্রুতির পরই দেশে কোভিড হানা দেয়। ফলে আরও ধস নামে।

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো শ্রীলঙ্কাকে নিচে নামিয়ে দেয় এবং আন্তর্জাতিক পুজিবাজারে দেশটির লেনদেন আটকে দেয়।

পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার ঋণ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি থেমে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পায়।

২০২১ সালে সমস্ত রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করে রাজাপাকসের সরকার। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত উল্টে গেলেও দেশের কৃষি খাতেও চপেটাঘাত করে এবং ধানের উৎপাদনে ধস নামে।

এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রাজনীতিক আর আমলাদের বিশাল অপব্যয়ের কথাও লিখেছেন দেশটির বাণিজ্য বিষয়ক প্রভাবশালী সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক কলামনিস্ট ভিক্টর ইভান।

তিনি লিখেছেন, শ্রীলঙ্কায় রাজনীতিক পোষার খরচ উন্নত অনেক দেশের চেয়ে বেশি, যা দেশের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।তাদের ও আমলাদের গাড়ি-বাড়িসহ অন্যান্য খাতে যে রাষ্ট্রীয় ব্যয় হচ্ছে, তা কমিয়ে ফেললেও অনেক অর্থ বাঁচে।

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ থামাতে এর মধ্যে কিছু দিন আগেই সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও পেনশনের অর্থ বাড়ায় সরকার, যা চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

শ্রীলঙ্কার মানুষ দেশের ইতিহাসে এখনই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কট পার করছে। ছবি: রয়টার্স

বৈদেশিক ঋণের কী হবে?

রয়টার্স লিখেছে, ফেব্রুয়ারির হিসাবে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের (আইএসবি) ঋণ জুলাইয়ে পরিশোধ করতে হবে।

গত মাসে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির পর্যালোচনায় আইএমএফ  বলেছে, দেশটির সরকারি ঋণ ‘অস্থিতিশীল পর্যায়ে’ বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিকট-মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য অপর্যাপ্ত।

গত মাসের শেষের দিকে সিটি রিসার্চ বলেছে, আইএমএফের রিপোর্টের শেষে যা বলা হয়েছে এবং সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ঋণের স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধার করার জন্য অপর্যাপ্ত ছিল, যা ‘ঋণ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তাকে’ দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে।

কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনের রাস্তায় পুড়িয়ে দেওয়া বেশি কিছু গাড়ি পরীক্ষা করে দেখছেন শ্রীলঙ্কার অপরাধ তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ছবি: রয়টার্স

ভারত-চীন ও আইএমএফ কি এগোবে?

অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য রাজাপাকসে সরকার বেশকিছু পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এগুলোকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা সাহায্যের জন্য ভারত ও চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।

ডয়চে ভেলে লিখেছে, শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে এই মাসের শুরুতে নয়াদিল্লির সঙ্গে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর কলম্বো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির জন্য ভারতের কাছে অতিরিক্ত আরও ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

ঋণ ছাড়াও ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মুদ্রা বিনিময় করেছে এবং জ্বালানি কেনার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

সঙ্কট মোকাবেলায় ইতোমধ্যে চীনকে ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া পুনর্গঠনের অনুরোধ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। চীনের কাছ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্যও দেশটি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির মোট ঋণের ১০ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেওয়া।

অর্থনীতিবিদদের বরাতে ডয়চে ভেলে লিখেছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সত্বেও শ্রীলঙ্কাকে তার ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করতে হবে, না হয় ঋণে ছাড় পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যেতে হবে।

প্রাথমিকভাবে আইএমএফের দরজায় কড়া নাড়তে অস্বীকৃতি জানালেও রাজাপাকসে সরকার সম্প্রতি বলেছে, তারা সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। আলোচনার জন্য আগামী মাসে তার ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়া শ্রীলঙ্কার সরকারের জন্যও এ এক অগ্নিপরীক্ষা। কারণ জনগণ ফুঁসে উঠছে। রাজাপাকসে যাকে হারিয়েছিলেন গত নির্বাচনে সেই সাজিথ প্রেমাদাসার ডাকে বড় বিক্ষোভ হয়েছে গত মাসেই কলম্বোয়। হাজার হাজার মানুষের সেই মিছিল থেকে দাবি ওঠে- ‘গোটা, চলে যাও’।  

সম্প্রতি সরকারবিরোধী এক বিক্ষোভে সন্ধ্যামালি পূর্ণিমাও সামিল হয়েছিলেন। কেন, তার উত্তর তিনি বলেন, “জীবন এখন বড়ই কঠিন।”