আর্থিক দুর্দশায় শ্রীলঙ্কা, কাগজ সংকটে স্কুলের পরীক্ষাও বন্ধ

অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কায় এখন ছাপার কাগজ না থাকায় স্কুলের পরীক্ষাও বাতিল করতে হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2022, 07:56 AM
Updated : 21 March 2022, 11:01 AM

শনিবার শ্রীলঙ্কার শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাগজের সংকট থাকায় আগামী সপ্তাহের পরের সপ্তাহে নির্ধারিত টার্ম টেস্ট বা মেয়াদী পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজ আমদানির মত যথেষ্ট তহবিল না থাকায় এই বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এখনই সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশটিকে। 

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ও কালি আমদানি করার মত যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল না থাকায় বিদ্যালয় অধ্যক্ষরা পরীক্ষা নিতে পারছেন না।

এই সংকটের কারণে দেশের ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীর দুই-তৃতীয়াংশই পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মুজদ।

দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি এখন দেউলিয়াত্ব এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফ শুক্রবার জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের আবেদনটি বিবেচনা করে দেখছে।

এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, অথচ ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ছিল ২৩০ কোটি ডলারের মত।

বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কা তাদের ঘনিষ্ট মিত্র ও অন্যতম ঋণদাতা চীনের কাছে ঋণের কিস্তি মওকুফের আবেদন করেছিল, তবে এ বিষয়ে বেইজিংয়ের তরফ থেকে এখনও কোনো জবাব আসেনি।

জ্বালানি তেলের লাইনে দাঁড়িয়ে দুই জনের মৃত্যু

শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে রোববার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মৃত দুই ব্যক্তির বয়সই ৭০ বছরের ঘরে এবং দেশের দুটি আলাদা এলাকায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের একজন কেরোসিন তেল নিতে অপেক্ষায় ছিলেন, আরেকজন পেট্রোলের লাইনে ছিলেন বলে জানান কলম্বোর পুলিশের মুখপাত্র নলিন থালদুয়া।

তিনি বলেন, “মৃতদের একজন থ্রিহুইলার চালক ছিলেন। ৭০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। দ্বিতীয়জনের বয়স ৭২ বছর। দুজনেই জ্বালানি তেলের জন্য প্রায় চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন।”

ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মধ্যে শ্রীলঙ্কার বাসিন্দাদের জ্বালানি তেলের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতিও এখন শোচনীয়, দিনের দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন কাটে নাগরিকদের।

জ্বালানির পাশাপাশি চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধের জন্যও তাদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।  

পেট্রোলিয়াম জেনারেল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আশোকা রানওয়ালা বলেন, ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় রোববার শ্রীলঙ্কা তাদের একমাত্র তেল শোধনাগারটি বন্ধ করে দিয়েছে। 

দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর রান্নার জন্য গ্যাসের পরিবর্তে কেরোসিন তেলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এর ব্যবহারও বেড়ে গেছে। রোববার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী লাউফ গ্যাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তাদের সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩৫৯ রুপি বাড়িয়েছে।

সরকারি তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ১৫ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছায়, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশে।

এ মাসের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপির বিনিময় হার খোলাবাজারে ছেড়ে দেওয়ায় তা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে ২৭৫ রুপি দরে লেনদেন হয়।

গুঁড়ো দুধের দামও আকাশচুম্বি, শনিবার ৪০০ গ্রামের একটি প্যাকেটের দাম বেড়েছে ২৫০ রুপি, যার কারণে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা চায়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এখন সেখানে এক কাপ দুধ চা ১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।