প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বাইরে বিক্ষোভের পর কলম্বোতে কারফিউ

চরম অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে যুঝতে থাকা শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বাইরে সহিংস বিক্ষোভের পর রাজধানী কলম্বোর কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2022, 03:03 AM
Updated : 1 April 2022, 04:07 AM

রয়টার্স জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার রাতে কলম্বোর শহরতলীতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের একটি ব্যক্তিগত বাসভবনের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকশ মানুষ।

এ সময় তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শেষ পর্যন্ত টিয়ার শেল আর জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।  

এরপর রাতেই কলম্বোর চারটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয় বলে কলম্বো পুলিশের সিনিয়র সুপার অমল এদিরিমান্নে জানান।

প্রত্য্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মোটরসাইকেলের হেলমেট পরিহিত একদল বিক্ষোভকারী একটি দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং পুলিশের দিকে ইট ছুড়ে মারে। পরে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের পথে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। 

২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশটির মানুষকে এখন প্রতিদিনি ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে, কারণ জ্বালানি তেল আমদানির মত যথেষ্ট বিদেশি মুদ্রা দেশটির সরকারের হাতে নেই।

দেউলিয়া হতে বসা শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বলেছেন, এ বিষয়ে তারা শিগগিরই কলম্বোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। 

ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত মাসে শ্রীলঙ্কা তাদের একমাত্র তেল শোধনাগারটি বন্ধ করে দেয়। ডিজেল সঙ্কট যত বাড়বে বিদ্যুতের লোডশেডিংও তত বাড়তে থাকবে।

বিদ্যুৎ না পাওয়ায় দেশটির প্রধান স্টক মার্কেটে লেনদেনের সময় কমিয়ে এনেও কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বাঁচাতে সড়ক বাতিও নিভিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ মন্ত্রী পবিত্র ভান্নিয়ারাচ্চি।

ছবি: রায়টার্স

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে খাদ্য ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মুজদ। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধ কিনতে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গত মাসে জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে।

শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।

এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে শ্রীলঙ্কার রুপির অবমূল্যায়ন। মার্চের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপির বিনিময় হার খোলাবাজারে ছেড়ে দেওয়ায় তা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে ২৭৫ রুপি দরে লেনদেন হয়।

তাছাড়া বিদেশি মুদ্রা বাঁচাতে গতবছর কিছুদিন সার আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকার। তার খেসারতও এখন দিতে হচ্ছে পণ্যমূল্যে। 

ফার্স্ট ক্যাপিটাল রিসার্চের দিমান্ত ম্যাথিউ বলছেন, শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি এখন এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ কোটি ডলার ধারে ডিজেলের একটি চালান শনিবার ভারত থেকে আসবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী পবিত্র ভান্নিয়ারাচ্চি।

তিনি বলেন, “ওই চালান আসার পর আমরা লোডশেডিংয়ের সময় কমাতে পারব, কিন্তু তারপরও বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত, অর্থাৎ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার জন্য। আমাদের আর কিছু করার নেই।”

তেলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে শ্রীলঙ্কা যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পায়, সেখানে পানির স্তর রেকর্ড পরিমাণ নিচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কট এই নতুন মাত্রা পেয়েছে। সে কারণেই বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন দেশটির বিদুৎমন্ত্রী।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এখনই সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশটিকে। ছাপার কাগজ না থাকায় স্কুলের পরীক্ষাও বাতিল করতে হচ্ছে।

এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, অথচ ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ছিল ২৩০ কোটি ডলারের মত।

ডলারের চাহিদা মেটাতে এক বছর আগে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ব্যবস্থার আওতায় শ্রীলংকাকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ঋণ শোধের মেয়াদও পরে বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শ্রীলংকা সরকার আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

পুরনো খবর