সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চান সু চি: ব্রিটিশ মন্ত্রী

মিয়ানমার সফর করে আসা ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, অং সান সু চি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চান বলে তাকে জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 03:04 PM
Updated : 28 Sept 2017, 05:55 PM

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর পশ্চিমা কোনো দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ফিল্ডই প্রথম ওই রাজ্য সফর করেছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তিনি (সু চি) আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তিনি সব শরণার্থীকে বার্মায় ফিরিয়ে নিতে চান।”

এদিকে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য স্টেট কাউন্সিলর সু চির দপ্তর বিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়া টিন্ট সোয়ে ঢাকা আসছেন বলে মিয়ানমারের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার নিন্দায় সরব হলেও এই সময়ে দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির প্রতি সমর্থন ধরে রেখেছে।

মিয়ানমার ঘুরে আসা ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ফিল্ডের কথায়ও সেই প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন, সু চি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন এবং তিনি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে একটি ‘সঠিক পথ’ বের করার চেষ্টা করছেন।

অং সান সু চি

পাঁচ দশকের বেশি সময় সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে গত বছর সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সু চির দল ক্ষমতায় এলেও এখনও রাষ্ট্রীয় অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রণ দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে।

রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে মার্ক ফিল্ড বলেন, “আমি নিজের চোখে ভয়াবহ অবস্থা দেখেছি। আমরা এখন যা করতে পারি তা হল, আমাদের বন্ধুদের দিয়ে যত সম্ভব চাপ প্রয়োগ।”

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সংকট সমাধানে পর্দার অন্তরালে অনেক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে এবং এটা এখন আর একটি আঞ্চলিক ইস্যু নয়।

“এই পর্যায়ে আমরা সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাব।”

এই পর্যায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চেয়ে কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের দিকে এগোনোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, সু চি যদি ব্যর্থ হন তাহলে সেনাবাহিনী ‘সর্বময় ক্ষমতার’ অধিকারী হবে এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি হবে।

মার্ক ফিল্ড

মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

ওই অভিযানকে জাতিসংঘ চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।

মিয়ানমারের রাজধানী নে পি দোতে দেশটির নেত্রী সু চির সঙ্গে বৈঠকে সংকট অবসানে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসেন মার্ক ফিল্ড।

তিনি বলেন, এখনই সহিংসতা বন্ধ, রাখাইনে মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন।

মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উ উইন মিত আয়ে রাখাইনের মংডু এলাকায় ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও পুনর্বাসন শুরু করার কথা জানিয়েছেন বলে নির্বাসিত বার্মিজদের ওয়েবসাইট ইরাবতী জানিয়েছে।

মিত আয়ে বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই বিলিয়ন কিয়াট ব্যয়ের এই কর্মসূচিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার ১৯৯৩ সালের প্রত্যার্পন চুক্তির আওতায় শরণার্থীদের নিবন্ধন করা হবে। মংডুর দার গি জার গ্রামে পুনর্বাসনের আগে তাংপিও লেতওয়ে ও না খুয়ে ইয়া গ্রামে তাদের নিবন্ধন করা হবে।

শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য স্টেট কাউন্সিলর সু চির দপ্তর বিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে ঢাকা আসছেন বলেও মিত আয়ে জানান।

মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি উ মিন্ট কেইং ইরাবতীকে বলেছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের মনোনীত করা হবে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হবে।

‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে উল্লেখ না করায় এই মুসলিম জনগোষ্ঠী ওই এনভিসি নিতে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বলে ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়।

রোহিঙ্গাদের পোড়া ঘরের পাশে অস্ত্র নিয়ে সতর্ক মিয়ানমারের এক সেনা সদস্য- ছবি: রয়টার্স

এদিকে রাখাইনের মুখ্যমন্ত্রী উ নি পু বুধবার বলেছেন, মিয়ানমারের ২০১৩ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমির পুনর্ব্যবস্থাপনা করবে রাজ্য সরকার। ওই আইনের আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও অন্যান্য স্থাপনার পুনর্নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো।

ওই সব জমি পুনর্বণ্টনে রাজ্য সরকার পরে একটি কমিটি করে দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উ উইন মিয়াত আয়ে বলেন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট উ মিন্ট সোয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারি তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বাস্তবায়ন করবে।