শর্মিলার ১৬ বছরের অনশনের অবসান, লড়াইয়ের নয়

ভারতের মনিপুর রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে টানা ১৬ বছর অনশনের পর সেই কর্মসূচির অবসান ঘটিয়েছেন ভারতের মনিপুরের অধিকারকর্মী ইরম চানু শর্মিলা।

ভারত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2016, 11:50 AM
Updated : 9 August 2016, 12:48 PM

অনশন ভাঙলেও লড়াই থামেনি শর্মিলার, এরপর রাজনীতির মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তিনি।

মঙ্গলবার জামিন নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর সমর্থকদের মাঝে মধু ও গরম পানি দিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম অনশন ভাঙেন ৪৪ বছর বয়সী শর্মিলা।

তিনি বলেন, “আজ আমি অনশন ভাঙলাম।... আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে চাই। আমাকে বলা হয় মনিপুরের লৌহমানবী, আমি সেই নাম নিয়েই বাঁচতে চাই।”  

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী বছর মনিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ‘পত্রবন্ধু’ ব্রিটিশ গোয়ান ডেসমন্ড কোটিনহোকে বিয়ে করবেন বলেও ইতোমধ্যে  জানিয়েছেন এই অধিকারকর্মী।

২০০০ সালে আসাম রাইফেলসের সদস‌্যদের গুলিতে মনিপুরে এক বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুসহ দশজন নিহত হলে শর্মিলার প্রতিবাদের সূচনা হয়। মনিপুর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ১ নভেম্বর শুরু হয় তার অনশন।

অনশন শুরুর দুদিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় শর্মিলাকে। অনশন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এই ছিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ।

কিছুদিন পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকারের নির্দেশে নাকে নল ঢুকিয়ে শর্মিলাকে তরল খাবার দেওয়া শুরু হয়। ১৪ বছর একটি সরকারি হাসপাতালে আটকে রেখে ওইভাবে তাকে খাবার নিতে বাধ্য  করা হয়। ২০১৪ সালে আদালত তার নাকের নল খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়।

অনশনরত অবস্থায় ১৫ দিন পর পর আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে শর্মিলাকে। গত মাসের শেষ দিকে আদালতে হাজির হয়ে ৯ অগাস্ট অনশন ভাঙার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে বিয়ে করার এবং রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন।

ভারতের জাতীয় নির্বাচনে আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দুই বছর আগে শর্মিলাকে তার দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন শর্মিলা।

গত ১৬ বছরে শর্মিলার অনশনকে ঘিরে মনিপুরে মানবাধিকার আন্দোলন জোরালো হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে  বহুবার সরকার বদল হলেও সেনাবাহিনীর ওই বিশেষ ক্ষমতা আইন তুলে নেওয়া হয়নি।

আর সে কারণেই শর্মিলার উপলব্ধি, ১৬ বছরের অনশনে যখন হয়নি, এবার অন্যভাবে চেষ্টা করে দেখতে চান তিনি।

শর্মিলার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছাকে এরই মধ্যে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। অনেক নেতা একে দেখছেন ‘ভারতীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিজয়’ হিসেবে।

মনিপুরের শীর্ষ মানবাধিকারকর্মী বাবলু লইথোংবাম বলেন, “অনশন অথবা যাই হোকে, ওই আইনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হচ্ছেন শর্মিলা এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি এই লড়াই চালিয়ে যাবেন।”

তবে শর্মিলার অনশন ভাঙার খবরে বিস্মিতও হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে তার দীর্ঘ আন্দোলনের সঙ্গী ভাই সিংহজিৎ সবচেয়ে অবাক হয়েছেন।

 “অসুস্থতার কারণে আমি গত কয়েকদিন ধরে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আমি এই খবর (অনশন ভাঙ্গার) অন্যদের কাছে শুনেছি।”

হিউম্যান রাইটস অ্যালার্ট মনিপুরের পরিচালক বাবলু লইথোংবাম অবাক হলেও শর্মিলার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।

“তার অনশনের কারণে যখন ১৫ বছরেও ওই আইন বাতিল হয়নি, তাহলে আগামী ৩০ বছরেও এটা হবে না।”

ওই বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অভিযান চালানোর জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে প্রায় সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যখন যেখানে খুশি হানা দেওয়া, তল্লাশি চালানো, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে যে কাউকে গ্রেপ্তার করা, এমনকি প্রয়োজনে গুলি চালানোর ক্ষমতাও সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে সেখানে।

অনশন ভাঙার পর আগামী কয়েকদিন শর্মিলাকে তরল খাবারই খেতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের এক চিকিৎসক বলেন, “যে মানুষ ১৬ বছর ধরে কোনো শক্ত খাবার খায়নি, সে হঠাৎ করে খাওয়া শুরু করতে পারবে না। তাকে অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে।