অনশন ভেঙে রাজনীতিতে আসছেন ইরম শর্মিলা

ভারতের মনিপুর রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে টানা ১৬ বছর ধরে অনশন ধর্মঘটে থাকা ইরম চানু শর্মিলা অনশন ভাঙছেন। আর এরপর রাজনীতির মাধ্যমেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2016, 09:52 AM
Updated : 9 August 2016, 11:52 AM

এনডিটিভি বলছে, মঙ্গলবার নিজের মহাকাব্যিক অনশনের অবসান ঘটানোর কথা রয়েছে তার।

১৬ বছর টানা অনশনে থাকার সময় এই নারী খাবারের একটি দানাও গ্রহণ করেননি। মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলের একটি কারা-হাসপাতালে নাক দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে শরীরে জোরপূর্বক খাবার প্রবেশ করিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।  

আদালত প্রাঙ্গণে নিজের সমর্থকদের উপস্থিতিতে ফলের রস খেয়ে অনশন ভাঙবেন তিনি। এরপর তার জীবন এক নতুন বাঁকে মোড় নেবে। রাজনীতিতে নামবেন তিনি এবং বিয়ে করবেন।

বর্তমানে ৪৪ বছর বয়সী শর্মিলা ২০০০ সালে ২৮ বছর বয়সে অনশন শুরু করেছিলেন।

ওই বছর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১০ মনিপুরবাসী নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা এএফএসপিএ বাতিল করার দাবিতে অনশন শুরু করেছিলেন তিনি।

নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে এবার ভিন্ন পথ বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। 

তিনি অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন ২৬ জুলাই, পাশাপশি রাজনীতিতে নামারও ঘোষণা দেন।

শর্মিলার ৮৪ বছর বয়সী মা শখি দেবী তার অনশন ভাঙার মুহূর্তটিতে উপস্থিতি থাকবেন বলে জানা গেছে। 

শর্মিলার ভাই ইরম সিংহজিত জানিয়েছেন, তার মা তার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন না, তিনি শর্মিলার চূড়ান্ত বিজয় (যা শুধু এএফএসপিএ বাতিল হলেই আসবে) হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

অনশন ভাঙার পর আগামী কয়েকদিন শর্মিলাকে তরল খাবার খেতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

“যে মানুষ ১৬ বছর ধরে কোনো শক্ত খাবার খায়নি, সে হঠাৎ করে তা খাওয়া শুরু করতে পারবে না। তাকে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে,” বলেন জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স হসপিটালের ডাক্তার।

মনিপুর ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যে এএফএসপিএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে শর্মিলা সংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। 

তারপরও নিরাপত্তা বাহিনীর ওই গুলিবর্ষণের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনেরা জানিয়েছেন, এএফএসপিএ-র বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন তারা। 

বাবলু লোয়িটাং বোম নামে শর্মিলার এক ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বলেছেন, “গেল ১৫ বছরে ১৫ মিনিটের জন্যও কোনো রাজনীতিবিদ এসে তার সঙ্গে দেখা করেননি। তাই কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।”                                   

এর আগে শেষ যখন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন ইরম শর্মিলা, তখনই অনশন ভাঙার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

তখন তিনি চিঠিপত্রের মাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথাও জানিয়েছিলেন। গোয়া-ভিত্তিক ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড কোটিনহো কয়েক বছর আগে থেকে শর্মিলাকে চিঠি লেখা শুরু করেন, পরে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন।

শর্মিলা জানিয়েছেন, তিনি কোটিনহোকে বিয়ে করতে চান।